ভোটের ফল প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গোর্খাল্যান্ড টেরিটেরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে রাজ্য সরকার। কিন্তু, তেমনই দ্রুত শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনারেট চালু করতে গিয়ে কিছুটা থমকে গেল সরকারি আয়োজন। তাই উদ্বোধনের যাবতীয় আয়োজন সত্ত্বেও আজ, শুক্রবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে নয়া পুলিশ কমিশনারেট চালু হচ্ছে না।
সরকারি সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত কমিশনারেট তৈরির আগে হাইকোর্টের কাছ থেকে ছাড়পত্র নেওয়াই প্রথা। কিন্তু, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই ছাড়পত্র রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতের হাতে পৌঁছয়নি। সে জন্য আগামী ৬ অগস্ট, সোমবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট উদ্বোধন করার কথা ভাবা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী যত দ্রুত সম্ভব শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট চালু করতে চান। সেই মতো প্রস্তুতিও প্রায় সম্পূর্ণ। আগামী ৬ অগস্ট দুপুরে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রীর।”
বস্তুত, জিটিএ গঠন এবং কমিশনারেট চালু, দু’টি বিষয়ে এতটুকুও দেরি করা হবে না বলে বারেবারেই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাই ভোটের ফল প্রকাশের পরে স্বরাষ্ট্র দফতর কয়েক ঘণ্টায় জয়ী প্রার্থীদের নাম দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। রাজ্য প্রশাসন তো বটেই, দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের একাধিক প্রবীণ অফিসারও ‘এত দ্রুত সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি’ অতীতে কখনও হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না।
পুলিশ-প্রশাসন মহলেই প্রশ্ন উঠেছে, ‘তাড়াহুড়ো’ করতে গিয়েই কি পুলিশ কমিশনারেট গঠনের প্রক্রিয়া কিছুটা হলেও হোঁচট খেল? কারণ, হাওড়া, বিধাননগর, ব্যারাকপুরের মতো নতুন কমিশনারেট গঠনের আগেই হাইকোর্টের ছাড়পত্র নিয়েছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর। দফতরের এক পদস্থ কর্তা জানান, পুলিশ কমিশনারেট কিংবা আলাদা সিটি পুলিশ জেলা হলে একজন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত তৈরি করা বাধ্যতামূলক, সে জন্য হাইকোর্টের ছাড়পত্র নেওয়া জরুরি। শিলিগুড়ির ক্ষেত্রে সেই অনুমতি বৃহস্পতিবারের মিলবে ধরে নিয়েই প্রস্তুতি নেয় স্বরাষ্ট্র দফতর। মাল্লাগুড়িতে অনুষ্ঠান মঞ্চ তৈরি করে আমন্ত্রণপত্র ছাপানোর কাজও হয়ে গিয়েছিল।
পাশাপাশি, আরও একটি জটিলতার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিলিগুড়ি কমিশনারেট গঠনের পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে হলফনামা দিয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন জলপাইগুড়ির দুই আইনজীবী সৈকত চট্টোপাধ্যায় ও সুজিত সরকার। আজ, শুক্রবার আবেদনকারীদের আইনজীবী মামলাটি অবিলম্বে শোনার আবেদন জানাবেন। আবেদনকারীদের বক্তব্য, দার্জিলিং জেলার চারটি থানা ও জলপাইগুড়ি থানার ভক্তিনগর থানা নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট। জলপাইগুড়ির একটি থানাকে এই কমিশনারেটে যুক্ত করার ফলেই আইনি সমস্যা তৈরি হয়েছে। আবেদনে বলা হয়েছে, হাইকোর্টের অনুমতি ছাড়া রাজ্য সরকার এটা করতে পারে না।
কেন হাইকোর্টের অনুমোদন চাই? আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, ভক্তিনগর থানাকে ওই কমিশনারেটে যুক্ত করায় এর পর থেকে ওই থানার সব ফৌজদারি মামলার বিচার শিলিগুড়ি আদালতে করতে হবে। এতদিন তা জলপাইগুড়ি দায়রা আদালতে হত। কিন্তু এরপরেও ভক্তিনগর থানার সব দেওয়ানি মামলার বিচার হবে ওই জলপাইগুড়ি আদালতেই। সেই কারণেই হাইকোর্টের অনুমোদন দরকার।
তবে রাজ্য সরকার অবশ্য আশাবাদী, কমিশনারেট চালুর ক্ষেত্রে নতুন করে কোনও জটিলতা তৈরি হবে না। মন্ত্রী গৌতমবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে যেমন পাহাড় হাসছে। তেমনই শিলিগুড়িতেও কমিশনারেট নিয়ে খুশির হাওয়া বইছে। পাহাড়-সমতলে একযোগে উন্নয়নের মাধ্যমে মেলবন্ধনের বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী বদ্ধপরিকর।” |