অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় • রামপুরহাট |
বদলির নির্দেশ পেয়েও এক আধিকারিক নতুন জায়গায় যোগ দেননি। উল্টে ওই পদে অন্য এক জন বদলি হয়ে চলে এসেছেন। ফলে একই পদ, অথচ দুই আধিকারিক রয়েছেন।
আবার কোথাও বছরের পর বছর পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। বদলি হয়ে কেউ সেখানে আসেননি।
বীরভূম জেলার ব্লক ও পঞ্চায়েত সমিতির অফিসগুলির এমনই ছবি। নির্দেশ সত্ত্বেও জেলার পঞ্চায়েতস্তরে বিভিন্ন শূন্য পদে আধিকারিকদের বদলির নিদের্শ কার্যকর হচ্ছে না বলেই এই সমস্যা। ফলে প্রশাসনিক বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবই উন্নয়নের কাজের অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। থমকে পড়ছে বীরভূমে গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নের কাজ। অভিযোগ, শুধুমাত্র প্রশাসনিক গাফিলতি এবং রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও আধিকারিকদের বদলির নির্দেশগুলি কার্যকর করা হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরে কোথাও ছ’মাস কোথাও দেড় বছর ধরে আধিকারিকেদের বদলি নির্দেশ পালন করা হচ্ছে না। ফলে কোনও পঞ্চায়েতে একই পদে একাধিক আধিকারিক, কোথাও বহুদিন ধরে শূন্য হয়ে পড়ে থাকা পদ কোথাও বা শূন্য পদটি জোড়াতালি দিয়ে সামলাচ্ছেন অন্য আধিকারিক।
মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক নেই গত ৬ মাস ধরে। ওই পদটি আপাতত দেখছেন ব্লক রিলিফ অফিসার। গত দেড় বছর ধরে পঞ্চায়েত হিসাব ও নিরীক্ষা আধিকারিকের পদটি শূন্য পড়ে রয়েছে নলহাটি ১ পঞ্চায়েত সমিতিতেও। ফলে ওই পঞ্চায়েত সমিতির অধীন ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের আভ্যন্তরীণ হিসাব ও নিরীক্ষার কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে কর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ। অথচ ওই পদে মুরারই ১ পঞ্চায়েত সমিতির পঞ্চায়েত হিসাব ও নিরীক্ষা আধিকারিককে বদলি হয়ে আসার নির্দেশ দেওয়া হয় দেড় বছর আগেই। অন্য দিকে, নলহাটি ২ পঞ্চায়েত সমিতিতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসারের বদলির নির্দেশ প্রায় ৩ মাস আগে এলেও তিনি বদলি হননি। অথচ ওই পদেই নতুন আর এক সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার সেখানে যোগ দিয়েছেন।
আবার গত দু’বছর ধরে পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক নেই ময়ূরেশ্বর ২ ব্লক অফিসে। একই অবস্থা লাভপুর ব্লক অফিসেও। সেখানে গত ৬ মাস ধরে ওই পদটি শূন্য। জেলা পঞ্চায়েত দফতরের এক আধিকারিকের মুরারই ২ ব্লকে ওই পদে বদলির নির্দেশ থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। ছ’মাসের বেশি সময় ধরে পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক নেই রামপুরহাট ২ ব্লকেও। রামপুরহাট ১ ব্লক অফিসে পঞ্চায়েত হিসাব ও নিরীক্ষা আধিকারিক নেই গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে। নলহাটি ২ ব্লকের পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিককে মুরারই ১ ব্লকে বদলির নির্দেশ এখনও কার্যকর হয়নি।
এ নিয়ে সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন বিডিওদের একাংশ। ময়ূরেশ্বর ২ ব্লকের বিডিও বাবুলাল মাহাতো বলেন, “বছর দু’য়েক ধরে পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক নেই। ছ’ মাস আগে ওই পদে নিয়োগের জন্য জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের এক কর্মীকে বদলির নির্দেশ কার্যকর না হওয়ায় অসুবিধা হচ্ছে।” অন্য দিকে, রামপুরহাট ১ ব্লকের বিডিও আব্দুল মান্নান বলেন, “এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রয়োজনীয় আধিকারিক না থাকলে যে সমস্যা হওয়ার কথা, তাই হচ্ছে।”
এ দিকে বদলির ক্ষেত্রে এক যাত্রায় পৃথক ফলের অভিযোগও তুলছেন কর্মীদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে অনেকেই নিজেদের বদলি আটকে রেখেছেন। রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির রামপুরহাট মহকুমা সম্পাদক তাপস গুপ্ত-র অভিযোগ, “আমরা বদলির নির্দেশ মেনে নিলেও অনেকেই তা মানছেন না।” যদিও স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি নবগৌরাঙ্গ দাসের দাবি, “প্রশাসনকে অসুবিধায় ফেলার জন্য কর্মীদের একাংশ সক্রিয়। তাঁদের জন্যই ওই বদলির নির্দেশ কার্যকর হচ্ছে না।”
জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা অবশ্য বলেন, “বদলির নির্দেশগুলি দ্রুত কার্যকর করার জন্য অতিরিক্ত জেলাশাসককে (জেলাপরিষদ)নির্দেশ দিয়েছি।” অন্য দিকে, অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলাপরিষদ) বিধান রায় বলেন, “বদলির নির্দেশগুলি কার্যকর করার জন্য জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
নির্দেশ তো আগেও ছিল। কিন্তু এখন এই নতুন নির্দেশ কবে কার্যকর হয় তাই দেখার। |