নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
রাস্তা জুড়ে মরণফাঁদ!
এই রাস্তা দিয়ে সুস্থ শরীরে গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা কার্যত ভুলতে বসেছেন পথচারীরা। আসানসোলের কালিপাহাড়ি থেকে বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট পর্যন্ত দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার জাতীয় সড়কের এমনই হাল। সবথেকে খারাপ দশা জাতীয় সড়কের উপর নির্মিত দু’টি সেতুর। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ অবশ্য রাস্তা সংস্কারে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
আসানসোলের কালিপাহাড়ির কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের নুনিয়া সেতুটি দেখলেই জাতীয় সড়কের দুর্দশা টের পাওয়া যায়। নীচ দিয়ে বয়ে গিয়েছে নুনিয়া নদী। প্রায় ১৫ মিটার লম্বা এই সেতুর বেশির ভাগই খানাখন্দে ভরা। অর্ধেক অংশের রেলিং ভেঙে গিয়েছে। প্রায় সময়ই ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।
একই অবস্থা আসানসোলের চন্দ্রচূড় মন্দির ও মেলেকোলা গ্রাম সংলগ্ন জাতীয় সড়কে অন্য একটি সেতুর। নীচ দিয়ে গিয়েছে পূর্ব রেলের মেন লাইন। প্রায় ১৫ মিটার লম্বা সেতুটির যেখানে-সেখানে বড় বড় গর্ত। সিমেন্টের ঢালাইয়ের অংশ ভেঙে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে রড বেরিয়ে পড়েছে। সেতুর অর্ধেক জায়গায় রেলিং নেই। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। তবে রানিগঞ্জ পেরিয়ে বক্তারনগর ও অন্ডালের কাছে সেতুটির অবস্থা অবশ্য অপেক্ষাকৃত ভাল।
এছাড়াও জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গাতে বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। |
আসানসোলের নুনিয়া সেতু। —নিজস্ব চিত্র। |
সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসানসোলের সেনর্যালে মোড়ের কাছে চৌমাথা, রানিগঞ্জের রানিসায়র মোড় সংলগ্ন অঞ্চল, জামুড়িয়ার চাঁদা সংলগ্ন এলাকা, কুলটির চৌরঙ্গী চৌমাথা মোড় ও বরাকরের দেবীপুর সংলগ্ন এলাকা। বর্ষার সময়ে সেগুলি হাল হয় আরও খারাপ। জাতীয় সড়কের কোথাও আলো নেই। ফলে বৃষ্টির জলে ভরে থাকা গর্তগুলি ঠিকমতো বোঝাও যায় না। যানবাহন দ্রুতগতিতে গিয়ে গর্তে পড়লেই দুর্ঘটনা ঘটে। স্কুটার, মোটরবাইক-সহ ছোট যানবাহনগুলির ক্ষেত্রে বিপদ সবথেকে বেশি। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, গত বছর বরাকরের ডুবুরডিহি চেকপোস্ট থেকে পানাগড় পর্যন্ত জাতীয় সড়কে প্রায় ১৬৪টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এ বছর প্রথম ছ’মাসেই প্রায় ৯০টি পথ দুঘর্টনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এ বার তা গত বারের সংখ্যাকেও ছাপিয়ে যাবে। বিভিন্ন মহলের ধারণা, জাতীয় সড়কের বেহাল দশার কারণেই দুর্ঘটনার প্রবনতা বাড়ছে।
ফেডারেশন অফ সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাধারণ সম্পাদক রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান অভিযোগ করেন, টোল বাবাদ প্রতি বছর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দফতরে কয়েক কোটি টাকা জমা পড়ে। তার পরেও সড়ক কর্তৃপক্ষ সংস্কার করছেন না। তাঁর দাবি, “বর্ষার পরেই আমরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করব।” ইতিমধ্যেই জাতীয় সড়ক সংস্কারের দাবি জানিয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, “অবিলম্বে সড়ক সংস্কার না হলে আমরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেব।”
আসানসোলের মহকুমাশাসক সুরজিৎ দত্তশর্মা জানান, শুধু জাতীয় সড়কই নয়, আসানসোল থেকে বরাকর পর্যন্ত জিটি রোডের অবস্থাও সঙ্গীন। তিনি বলেন, “আমি সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে আলোচনা শুরু করেছি।”
রাস্তার এই বেহাল দশা ও বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা মেনে নিয়েছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। সংস্থার দুর্গাপুরের প্রজেক্ট অফিসার কৃষ্ণ মুরারী জানান, সংস্কার শুরু হয়েছে। তবে বর্ষার জন্য কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। দ্রুত মেরামতির কাজ শেষ হবে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পূর্বঞ্চলের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অজয় অহলুওয়ালিয়া জানান, দিল্লি থেকে ফিরে তিনি এর স্থায়ী সমাধান করবেন। |