নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
ভিন রাজ্যে আলু পাঠানো যাবে না বলে আগের দিনই জানিয়ে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝরাত থেকেই কুলটিতে ঝাড়খণ্ড সীমানায় সব আলুর ট্রাক আটকে দিল পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দিনভর টানাপোড়েনের পরে আলু ব্যবসায়ীরা হতাশ। বর্ধমান জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অরুণ চৌধুরীর অভিযোগ, “গতকাল রাত ১২টার পর থেকে একটিও আলুর ট্রাককে বিহার বা ঝাড়খণ্ডে যেতে দেওয়া হয়নি। এতে চাষিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।” সন্ধ্যায় রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে বলে দিয়েছেন, কোনও আলুর ট্রাককে যেন অন্য রাজ্যে যেতে দেওয়া না হয়। রাজ্যবাসীর স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত।”
বৃহস্পতিবার প্রথমে আসানসোলে গারুই টোলপ্লাজার কাছে বেশ কিছু আলু বোঝাই লরি আটকায় পুলিশ। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকা এবং বেশি মাল তোলার অভিযোগে কয়েকটি ট্রাককে জরিমানাও করা হয়েছে। |
নামানো হচ্ছে ট্রাকে বোঝাই অতিরিক্ত আলু।
আসানসোলের গারুই টোল প্লাজায়। ছবি: শৈলেন সরকার |
অতিরিক্ত আলু নামিয়েও দেওয়া হয়। বিকেল ৪টা নাগাদ এই গাড়িগুলি টোলপ্লাজা থেকে সরিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ঝাড়খন্ড সীমান্তের ডুবুরডিহি চেকপোস্টে নিয়ে যাওয়া হয়। কী কারণে ট্রাকগুলি আটকানো হয়েছে, মহকুমা প্রশাসন তা স্পষ্ট করে বলেনি। তবে আসানসোল দুর্গাপুরের এডিসিপি (সেন্ট্রাল) সুরেশ কুমার বলেন, “রাজ্যে আলুর জোগান ঠিক রাখা ও দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য ভিন রাজ্যে আলুর চালান নিয়ন্ত্রণ করছে সরকার। আমরা কোনও গাড়ি আটকাইনি। আলু ভর্তি গাড়িগুলি যেখান থেকে এসেছিল, সেখানেই ফিরে যেতে বলেছি।”
ঘটনা হল, আলুর ট্রাক আটকানোর জন্য কৃষি বিপণন দফতর অবশ্য কোনও লিখিত নির্দেশ দেয়নি। মন্ত্রীর বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রীই তো বলে দিয়েছেন। এর পরে আর কী নির্দেশ দেওয়া হবে?” এ ভাবে ট্রাক আটকানো কি আইনি? অরূপবাবু বলেন, “আইনি কি না তা আইনের লোকেরাই বলতে পারবেন। কিন্তু মানুষের স্বার্থটাই বড় কথা। রাজ্যের বাজারে আলুর জোগান কমে গেলে দাম বাড়বে। সে কারণেই মুখ্যমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন।” আলু ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাবি করছেন, যে ধরনের আলু পাঠানো হচ্ছিল তা এ রাজ্যে বেশি বিক্রি হয় না। পোখরাজ, লাল, ক্যাট, মাজলা ও কাটপিস জাতীয় ওই আলু চিরকালই বিহার-ঝাড়খণ্ডে পাঠানো হয়। অরুণবাবু বলেন, “রাজ্য সরকার যদি এই আলু কিনে নেয় তাতে আমাদের আপত্তি নেই। আমরা ঝাড়খণ্ড, বিহারের তুলনায় কম দামেই রাজ্য সরকারকে তা দিয়ে দেব।”
রাজ্য সরকার কড়াকড়ি করতে থাকলে চাষি এবং আলু ব্যবসায় যুক্ত হাজার দশেক মানুষ বিপাকে পড়বেন বলেও ব্যবসায়ীদের দাবি। কৃষি বিপণন মন্ত্রী বলেন, “সত্যিই যদি ওই ধরনের আলু রাজ্যে বিক্রি না হয়, তা ওঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে জানাতে পারেন। ওঁরা অসুবিধার কথা জানালে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয়ই সুরাহা করবেন।” |