নিজস্ব সংবাদদাতা • পাণ্ডবেশ্বর |
রোজকার ওঠানামার ডুলি খারাপ হয়ে পড়ায় খোঁজ পড়েছিল আপৎকালীন ডুলির। চালু করতে গিয়ে দেখা গেল, দীর্ঘ দিনের অব্যবহার ও দেখভালের অভাবে বিকল সেটিও। আর তার জেরে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা ভূগর্ভে আটকে থাকলেন ২২ জন খনিকর্মী। বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরে দক্ষিণ শ্যামলা কোলিয়ারিতে বৃহস্পতিবারের এই ঘটনায় কয়েকশো ফুট গভীর থেকে কয়লা তোলার মতো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে সুরক্ষা ব্যবস্থার কী হাল, তা ফের সামনে এল। আপৎকালীন ডুলির দেখভালে গাফিলতির অভিযোগে এ দিন বিক্ষোভ দেখায় নানা শ্রমিক সংগঠন। খনির মাইনিং সর্দার ও ওভারম্যানদের সংগঠন ‘ইনমোসা’র পাণ্ডবেশ্বর এরিয়া সম্পাদক, ওই কোলিয়ারিরই কর্মী আশুতোষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, “কোনও ভাবে খনিতে জল ঢুকলে বা অন্য কোনও বিপদ হলে তো কর্মীদের অসহায় অবস্থায় মরতে হত।”
কোলিয়ারি সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার সকালে ডুলিতে চেপে খনিগর্ভ থেকে উঠে আসছিলেন রাতের শিফ্টে কাজে নামা কর্মীরা। সকাল ৭টা নাগাদ হঠাৎই ডুলিটির বয়লার ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ে। তখনও নীচে ২২ জন কর্মী। |
এই ডুলি বিকল হওয়াতে বিপত্তি। —নিজস্ব চিত্র |
টেলিফোনের মাধ্যমে তাঁদের প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে আপৎকালীন ডুলির কাছে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। খনিগর্ভ ধরে হেঁটে তাঁরা সেখানে পৌঁছলে ওই ডুলি চালু করার চেষ্টা হয়। তখনই ফের বিপত্তি। আপৎকালীন ডুলির ইঞ্জিন চালুর জন্য জল গরম করা শুরু হতেই যান্ত্রিক গোলযোগে ভিতরের বাষ্প বয়লারের বাইরে বেরোতে থাকে। ফলে ডুলি চালানো অসম্ভব হয়। কর্মীদের ফোনে বিপত্তির কথা জানিয়ে অপেক্ষা করতে বলা হয়। বয়লার ঠান্ডা হতে তা সারিয়ে যখন ওই কর্মীদের উপরে আনা হয়, তখন দুপুর দেড়টা।
ভূগর্ভে কর্মীদের আটকে পড়ার খবর শুনে খনিমুখে জড়ো হন নানা শ্রমিক সংগঠনের কর্মীরা। কেন আপৎকালীন ডুলির ঠিক মতো রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি, সেই প্রশ্ন তুলে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। আইএনটিটিইউসি নেতা নরেন চক্রবর্তীর অভিযোগ, “পড়ে থেকে ডুলিটি যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য নিয়মিত বয়লার ইঞ্জিন চালাতে দৈনিক ছ’টন করে কয়লা বরাদ্দ করে কোলিয়ারি। খাতায়-কলমে তার হিসেবও রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের দাবি, তা সত্ত্বেও প্রয়োজনের সময়ে ইঞ্জিনটি কেন চলল না, তা জানতে তদন্ত কমিটি গড়তে হবে।” ‘ইনমোসা’র পাণ্ডবেশ্বর এরিয়া সম্পাদক আশুতোষবাবুর অভিযোগ, “দশ বছর ধরে আপৎকালীন এই ডুলির রক্ষণাবেক্ষণ হয়নি। ২০১০-এ খনি কর্তৃপক্ষ ও ডিরেক্টর জেনারেল অফ মাইন্স সেফটির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ডুলির নিয়মিত দেখভালের জন্য আবেদন করি। ফল হয়নি।” ইসিএলের পাণ্ডবেশ্বর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার মনোজ কুমার বলেন, “যান্ত্রিক ত্রুটিতে এমন ঘটেছে।” ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় বলেন, “ডুলি রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতি নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” কর্মীদের মধ্যে ছিলেন কোলিয়ারির অ্যসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার
চন্দ্রকিশোর দাস, মাইনিং সর্দার মানিকচন্দ্র দাস, বিদ্যুৎকর্মী অশোক ডোমেরা। উপরে উঠে মানিকবাবু বলেন, “যে রাস্তা ধরে হেঁটে দ্বিতীয় ডুলির কাছে পৌঁছতে হয়, তা বিপজ্জনক। দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।” অশোকবাবু বলেন, “কয়েক মাস আগে হার্ট অ্যাটাক হয়। আটকে পড়ে দুশ্চিন্তা হচ্ছিল।” ‘পাতালপুরী’তে অবশ্য এটাই জরুরি! |