চোর সন্দেহে পরিচিত এক যুবককে থানায় ডেকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে ইংরেজবাজার থানার এক মহিলা সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করল পুলিশ। গত ২৩ জুলাই গয়না চুরির অভিযোগে থানায় তুলে এনে এক যুবককে মারধরের অভিযোগ রয়েছে ওই এসআই-এরে বিরুদ্ধে। ওই রাতেই মেডিক্যাল কলেজে ওই যুবক মারা যান। মঙ্গলবার মুখ্যবিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট পীযূষ কুমার দাস মৃত যুবকের মায়ের আবেদনের ভিত্তিতে ইংরেজবাজার থানার আইসিকে খুনের মামলা রুজুর নির্দেশ দেন। তার পরেই ওই দিন ওই মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, শিপ্রা রায় নামের ওই এসআইকে পুলিশ লাইনে সরানো হয়েছে। পাশাপাশি, ওই যুবককে বাড়ি থেকে তুলে আনার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরেক এসআই অলক ভৌমিক এবং কনস্টেবল জাকির হোসেনকেও পুলিশ লাইনে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “আদালতের নির্দেশে এক মহিলা সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হয়েছে। একজন ডিএসপি খুনের অভিযোগের তদন্ত করছেন। ওই অফিসার-সহ তিন জনকে পুলিশ লাইনে সরানো করা হয়েছে।” অভিযুক্ত শিপ্রাদেবী এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আদালত সূত্রের খবর, মৃত যুবকের নাম পিকি দাস (২৩)। শহরের বালুচরের জুবিলি রোডে তাঁর বাড়ি। তাঁর মা সন্ধ্যাদেবী একটি স্কুলের মিডডে মিলের রান্নার পাশাপাশি পরিচারিকার কাজ করেন। ইংরেজবাজার থানায় টুকিটাকি কাজ করতেন স্নাতক পিকি। নিরক্ষরদের হয়ে থানায় অভিযোগপত্র লেখার সুবাদে সমস্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে পিকি’র সুসম্পর্ক ছিল। গত ১ জুলাই থানা চত্বরের পুলিশ আবাসন থেকে এসআই শিপ্রাদেবীর প্রায় দুই লক্ষ টাকার সোনার গয়না চুরি হয় বলে অভিযোগ। ওই পুলিশ অফিসার পিকির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ দায়ের করেন। গত ২৩ জুলাই পিকিকে থানায় তুলে নিয়ে আসা হয়। রাতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে পুলিশই মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। রাট ১টা নাগাদ তিনি মারা যান। পরেরদিন, মৃতের মা সন্ধ্যাদেবী ইংরেজবাজার থানায় ছেলেকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ইংরেজবাজার থানায় দায়ের করেন। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “ঘটনার দিন বিকেলে কেউ বাড়িতে ছিল না। সাব-ইন্সপেক্টর অলক ভৌমিক, কনস্টেবল জাকির হোসেন ছেলে তুলে রিকশা করে থানায় গিয়ে যান। পরে শিপ্রা রায়ের নেতৃত্বে ওঁকে মারধর করা হয়।” সন্ধ্যাদেবী জানান, ছেলে শিপ্রাকে দিদি বলে ডাকত। মাস দু’য়েক আগে ছেলেকে নিয়ে শিপ্রা এবং ওঁর এক আত্মীয় গ্যাংটকে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর ছেলে থানায় যাচ্ছিল না। জিজ্ঞাসা করা জানিয়েছিল, শিপ্রার সঙ্গে তাঁর আত্মীয়ের অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি গ্যাংটকে গিয়ে তা দেখেছেন। শিপ্রার কথায় ছেলে ফের থানায় যাওয়া শুরু করে। তার কয়েকদিন পরেই ওই অফিসার ছেলের বিরুদ্ধে গয়না চুরির অভিযোগ আনে। এমনকি, ছেলে এবং আমাকে খুনের হুমকি দেয়। তাঁর অভিযোগ, “ওই সম্পর্কের কথা জেনে ফেলায় প্রথমে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হুমকি তার পরে ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এমনকি, ছেলে সমস্ত কিছু একটি ডায়েরিতে লিখে রেখেছিল। শিপ্রা তাঁকে হুমকি দিয়ে তা নিয়ে গিয়েছে।” পুলিশ সূত্রের খবর, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে মৃতের শরীরের অ্যালকোহল এবং বিষ মিলেছে। ইতিমধ্যে ভিসেরা টেস্টও করানো হচ্ছে। এমনকি, থানার পুলিশ অফিসারেরা দাবি করেছেন, ৫টা নাগাদ তাঁকে বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়। ১০-১৫ মিনিট পরে পিকি জানান, তিনি বিষ খেয়েছেন। এমনকি, সেই সময় পিকি মদ্যপ অবস্থাও ছিলেন। তাঁকে ৫-৪৬ মিনিটে পুলিশই হাসপাতালে ভর্তি করে। রাত ১২-৫৫ মিনিটে পিকি মারা যান। মৃতার মা সন্ধ্যাদেবীর অভিযোগ, “ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় থানায় গেলে পুলিশ কর্মীরা ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানান। পরেরদিন আদালত থেকে ছেলেকে ছাড়ানোর কথা বলেন। তখনই আদালতের ওই মুহুরি সকালে আদালতে টাকা, কাগজপত্র, ডায়েরি আনতে বলে। পরেদিন আদালতে যাই দুপুরে ওই মুহুরি ছেলের মারা যাওয়ার কথা জানায়।” |