মহেশ ভূপতি আজই বলেছেন, চার বছর পর রিও-তে তিনি অবশ্যই খেলবেন না। তবে বোপান্না-সহ ভারতীয় টেনিস দলের জন্য গলা ফাটাতে অলিম্পিকে যাবেন। বোপান্না এ বারে অলিম্পিক অভিযান শেষ হতে জানিয়েছেন, লন্ডনে এর পরে অন্য ভারতীয়দের উৎসাহ দিতে চেঁচাবেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লিয়েন্ডার পেজ-বিষ্ণু বর্ধনের অভাবনীয় লড়াইয়ের সময় কিন্তু উইম্বলডনের গ্যালারিতে দু’জনের কাউকেই দেখা গেল না!
স্বাভাবিক। যতই বোপান্না গেমস ভিলেজে পা রেখে বলুন, লিয়েন্ডারের সঙ্গে বিতর্কের ব্যাগটা দেশেই রেখে এসেছেন, নিজের মনের ভেতরের খচখচানিকে কোথায় রাখবেন? তবে বিশ্বের ২০৮ নম্বর ডাবলস প্লেয়ারকে নিয়ে প্রি-কোয়ার্টারে দ্বিতীয় বাছাই জো উইলফ্রেড সঙ্গা-মাইকেল লদ্রার বিরুদ্ধে আড়াই ঘণ্টার সমানে-সমানে টক্করের পর লিয়েন্ডারের ৬-৭ (৩-৭), ৬-৪, ৩-৬ হারের মধ্যে আগের দিন ‘ভারতসেরা’ জুটির আত্মসমর্পণের লজ্জা তো নেই-ই। বরং সাহস, পৌরুষ, প্রতিজ্ঞা, মরণপণ লড়াইয়ের দৃপ্ত ছবিই ফুটে উঠছে। জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের মতো অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছিলেন, লন্ডনে লিয়েন্ডার-বিষ্ণু জুটি একটা সেট জিতলেও সেটা উপরি পাওনা হবে। কেউ ওদের নিয়ে কিছু আশা করছে না। বাস্তবে দেখা গেল, এখনও পর্যন্ত অলিম্পিকে ভারতের সবচেয়ে দুর্বল জুটিই সবচেয়ে উজ্জ্বল। সোমদেব, সানিয়া, মহেশ, বোপান্নাদের মতো অন্তত গোহারান হেরে দেশের মুখ ডোবাননি। বুধবার গভীর রাতে যে কারণে সোশ্যাল নেটওয়াকির্ং সাইটগুলোতে কেউ কেউ লিখছেন, ‘মহেশকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত। ভারতীয় টেনিসে নতুন ডাবলস জুটির আগমনের জন্য। ডেভিস কাপে ভারত একটা কার্যকর জুটি পেল।’
|
জুনিয়র পার্টনারকে পরামর্শ। বুধবার উইম্বলডনে লড়াকু ভারতীয় জুটি। ছবি: উৎপল সরকার। |
লদ্রার পাশে আজ সঙ্গার মতো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সিঙ্গলস তারকা না থেকে অন্য কোনও পার্টনার থাকলে ম্যাচের ফল শেষমেশ কী হত বলা কঠিন ছিল। চাপের মুখে হটফেভারিট ফরাসি জুটিকে বারবার উদ্ধার করেছে সঙ্গার বুম-বুম সার্ভিস, অসাধারণ ফোরহ্যান্ড ডাউন দ্য লাইন অথবা ক্রসকোর্ট শট। মীমাংসা সূচক তৃতীয় সেটে মোক্ষম সময়ে লিয়েন্ডারের সার্ভিস নষ্ট করার পিছনেও সঙ্গার দুর্দান্ত সব রিটার্ন। নইলে এক সেট পিছিয়ে পড়েও যে ভাবে দ্বিতীয় সেট জিতে অভাবনীয় ভাবে ম্যাচে ফিরে এসেছিলেন লিয়েন্ডাররা, ভাবা শুরু হয়ে গিয়েছিল, ২০১২ অলিম্পিক টেনিসের বৃহত্তম অঘটন আজ ঘটবে।
এবং বিষ্ণু বর্ধন। তাঁদের জুটির প্রথম রাউন্ড জয়ের পর লিয়েন্ডারই বলেছিলেন, কেউ যদি একশো ভাগ ট্রেনিং করে, নিজের প্রতি সৎ থাকে, সহজ ভাবে খেলাটাকে দেখে এবং ভালবাসে, তা হলে কী অসাধ্যসাধন যে করতে পারে বিষ্ণুই তার প্রমাণ। মহাতারকা জুটির বিরুদ্ধেও বিষ্ণুকেই বেশি কার্যকর দেখিয়েছে আজ। বিশেষ করে সার্ভিসে। লিয়েন্ডারের নেটের সামনে সেই ম্যাজিক রিটার্নের ঝলক তো ছিলই। কিন্তু ৩৯ বছরের শরীরের ছাপ তাঁর সার্ভিসে ক্রমেই ছায়া ফেলছে। লিয়েন্ডারের দুর্বল সার্ভিসই নামে না হোক, কাজে দুটো সমান-সমান জুটির মধ্যে তফাত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তবু ধন্যবাদ লিয়েন্ডার। ভারতীয় টেনিস-রাজনীতির শিকার হয়েও দেশের মুখ অলিম্পিকের আসরে না-ডোবানোর জন্য। লড়াই করে হারের মধ্যেও বীরত্ব থাকে যে!
অন্য দিকে, বেজিংয়ে সোনাজয়ী ডাবলস জুটি ফেডেরার-ওয়ারিঙ্কা ছিটকে গেলেন। মেয়েদের সিঙ্গলসে ভেনাস উইলিয়ামস প্রি-কোয়ার্টারে হেরে গেলেও সেরেনা শেষ আটে উঠেছেন। সঙ্গে শারাপোভা, ক্লিস্টার্স, কিভিতোভারা। |