টেমসের তীরে গ্রেটেস্ট শো
সর্বকালের সেরার মুকুট মাথায়
একবারই মাত্র হাসলেন ফেল্পস
দামাল ছেলেটাকে সামলানোর জন্য মা একটা রাস্তা বার করেছিলেন। সোজা বাল্টিমোরের স্থানীয় সুইমিং পুলে ভর্তি করে দিয়ে বলেছিলেন, “যা, কিছুটা সময় কাটিয়ে আয়।”
ছেলেটার বয়স তখন ছিল সাত।
এর ঠিক কুড়ি বছর পর ছেলেটা একটা তর্কের জন্ম দিয়ে গেল লন্ডনে মাইকেল ফ্রেড ফেল্পসই কি অলিম্পিকের ইতিহাসে চিরশ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ?
ভারতীয় সময় মঙ্গলবার রাত ১-৩৪ মিনিটে ফেল্পস যখন দুশো মিটার ফ্রি স্টাইল রিলেতে শেষ স্ট্রোকটা নিলেন, তখনই সরকারি ভাবে তাঁর নামের পাশে লেগে গেল সফলতম অলিম্পিয়ানের তকমাটা-- তিনটে অলিম্পিকে আপাতত ১৯টি পদক, সোভিয়েত জিমন্যাস্ট লারিসা লাটিনিনার থেকে একটা বেশি। আরও অবিশ্বাস্য তথ্য হল, এই ১৯টা পদকের মধ্যে ১৫টাই সোনা। ফুটনোটের মতো রয়েছে দুটো রুপো, দুটো ব্রোঞ্জ।
তাঁর ২০ বছরের কেরিয়ারে সাঁতার কাটতে কাটতে নাকি একবারই হেসেছেন ফেল্পস। গত কাল ফ্রি স্টাইল রিলেতে শেষ কুড়ি মিটারের মাথায় এসে। “তা হলে দেখা যাচ্ছে, পরিশ্রম করলে ফল পাওয়া যায়,” ১৯ নম্বর পদক জেতার পর এর চেয়ে বেশি কিছু অবশ্য শোনা যায়নি ফেল্পসের মুখ থেকে।
বুধবার সকালটা কিছুটা অন্য আমেজ এনে দিয়েছিল কিংবদন্তির জন্য। যখন দেখেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা টুইট করেছেন তাঁকে: “পদকজয়ের রেকর্ড ভাঙার জন্য মাইকেল ফেল্পসকে অভিনন্দন। তুমি তোমার দেশকে গর্বিত করেছি।”
অলিম্পিকে তাঁর ১৮ নম্বর পদকটা ১৯৬৪ সালে জিতেছিলেন লাটিনিনা। সেই অলিম্পিক রেকর্ড ভাঙতে লেগে গেল ৪৮টা বছর। ‘নতুন অলিম্পিক রেকর্ডের মালিক এখন ফেল্পস।’ গত কাল যখন জায়েন্ট স্ক্রিনে ফুটে উঠছে এই লেখা, তখন অনেকেরই মনে হয়েছে, এটা ঠিক হচ্ছে না। ফেল্পসের কৃতিত্বকে ওই দুটো শব্দ দিয়ে কখনওই বিচার করা যায় না।
ছ’ফুট চার ইঞ্চির শরীরটা কত শত মাইল সাঁতরেছে, তা ঈশ্বরই জানেন। ২০ বছর ধরে কত বার হিমেল ঠান্ডা পুলের মধ্যে নিজেকে ছুড়ে দিতে হয়েছে, তার হিসাবই বা ক’জনের কাছে আছে? ১৫ বছর বয়সে সব থেকে কম বয়সি মার্কিন সাঁতারু হিসাবে অলিম্পিক যাত্রা শুরু। সে বার পদক আসেনি, কিন্তু তার পর? তার পর থেকে যা ঘটে চলেছে, তাকে তো নিছক পরিসংখ্যান দিয়ে মাপা যায় না। ৩৯টা বিশ্ব রেকর্ডের মালিক, সব মিলিয়ে কেরিয়ারে এখন পর্যন্ত জিতেছেন ৫৪টা সোনা, ৬৬টি পদক। এ তো শুধু এক জন ক্রীড়াবিদ নয়, প্রকৃতির বেঁধে দেওয়া সীমা ভেঙে দেওয়া এক মানুষের কাহিনি।
গত অলিম্পিকে আটটা সোনা জিতে মার্ক স্পিৎসের এক অলিম্পিকে সর্বাধিক পদক জেতার রেকর্ড ভেঙে দিয়েছিলেন ফেল্পস। আর তার পর স্পিৎস বলেছিলেন, “এ তো মহাকাব্য। ছেলেটা বুঝিয়ে দিল শুধু সর্বকালের সেরা সাঁতারু নয়, সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানও নয়। ও তার থেকেও বড় কিছু। এই গ্রহে ফেল্পসের থেকে বড় কোনও অ্যাথলিটের পা সম্ভবত আগে পড়েনি।”
বলা হয়, ফেল্পসের শারীরিক গঠনও তাঁকে অনেক সাহায্য করেছে। শরীরের উপরভাগ কিছুটা সরু হওয়ায় জলের টানটা কম থাকে। নৌকার যেমন দাঁড়, তেমনই নাকি ফেল্পসের হাত। ফেল্পসের একটা স্ট্রোকের দৈর্ঘ্য ছ’ফুট সাত ইঞ্চি (নিজের উচ্চতার চেয়েও বেশি)। চোদ্দো ফিট সাইজের পা মাছের ল্যাজের কাজটা করে দেয়।
সাঁতারের পুল নাকি তাঁর কাছে জমে থাকা ক্ষোভ, রাগ উগড়ে দেওয়ার জায়গা। ছোটবেলায় বাবা তাঁদের পরিবারকে ছেড়ে চলে যান। সেই জমে থাকা রাগ ছোট্ট ফেল্পসের মনের উপর মারাত্মক চাপ তৈরি করে। সাঁতারের পুল তোলপাড় করা তাঁর প্রতিটা স্ট্রোকের মধ্যে নাকি সেই রাগ-ই ঠিকরে পড়ে।
শুধু দেশকে কেন, অলিম্পিক ইতিহাসকেই গর্বিত করে গেলেন ফেল্পস। লন্ডন অলিম্পিকে তাঁর সময়টা ভাল যায়নি। একটা রেসে পদক পাননি। ২০০১ সাল থেকে যে ইভেন্টটায় তিনি অপরাজিত সেই দুশো মিটার বাটারফ্লাইয়ে গত কাল সেকেন্ডের ভগ্নাংশে রুপো পেয়েছেন। কিন্তু তার পরেও রিলেতে সোনা জিতে যখন পুল থেকে উঠছিলেন, দর্শকদের একটা দাবিই শোনা যাচ্ছিল: “আরও চারটে বছর, আরও চারটে বছর।”
অলিম্পিক অনেক কিংবদন্তি দেখেছে। পাভো নুরমি, জেসি ওয়েন্স, এমিল জ্যাটোপেক, বব বিমন, ধ্যানচাঁদ, মার্ক স্পিৎস, ইয়ান থর্প, কার্ল লুইস। সবাই ইতিহাসেরই অঙ্গ।
মাইকেল ফেল্পস হয়ে থাকলেন এই ইতিহাসেরই সবচেয়ে বড় পরিচ্ছেদ।

অলিম্পিকের কিংবদন্তিরা
নাম
সোনা রুপো ব্রোঞ্জ মোট
মাইকেল ফেল্পস ১৫ ১৯
লারিসা লাটিনিনা ১৮
পাভো নুরমি ১২
মার্ক স্পিৎস ১১
কার্ল লুইস ১০




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.