ডোপিং থেকে জঙ্গি হানা, অলিম্পিকের গায়ে এর আগে একাধিক কারণে দাগ লেগেছে। এ বার লাগল গড়পেটার কলঙ্কও। যার নাটের গুরু বলে আঙুল উঠেছে চিনের দিকে। গড়াপেটার অপরাধে অলিম্পিক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে মহিলা ব্যাডমিন্টনে এক নম্বর বাছাই চিনা জুটিকে। গড়াপেটার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত থাকার দায়ে একই সঙ্গে সাসপেন্ড হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার দুই এবং ইন্দোনেশিয়ার একটি জুটিও। এই ঘটনায় উৎসাহিত হয়ে ভারতীয় জুটি জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা অভিযোগ করেন জাপান ও চিনা তাইপের বিরুদ্ধে। সেই অভিযোগ বাতিল হয়ে গেলে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদনও করা হয়। দিনভর এই নিয়ে বৈঠক-আলোচনার পরে অবশ্য সেই আর্জিও খারিজ হয়ে যায়।
|
গড়াপেটার শিকার বলে অভিযোগ জানান ভারতীয় জুটি
জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পা। তা অবশ্য খারিজ হয়ে যায়। |
গড়াপেটা নিয়ে এমন নাটক অলিম্পিকের আসরে এত দিন অনুপস্থিতই ছিল। আর যে চিনের বিভিন্ন কীর্তিতে এত দিন উজ্জ্বল হয়েছে অলিম্পিকের আঙ্গিনা, তাদের হাতে এ বার কলঙ্কিত হল বিশ্বের শ্রেষ্ঠ খেলার আসর। এই ঘটনা চিনের উঁচু মাথা এতটাই হেঁট করে দিয়েছে যে, বিশ্বের এক নম্বর পুরুষ ব্যাডমিন্টন তারকা, চিনের লিন ডান পর্যন্ত ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এক কথায় সাসপেনশনের রায় মেনে নিয়েছে চিনও। কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া অবশ্য সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছে।
১৯৭২-তে মিউনিখে গেমস ভিলেজে জঙ্গি হানা, ১৯৮৮-তে ১০০ মিটার দৌড়ে জিতেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মাদক পরীক্ষায় ধরা পড়ে বেন জনসনের বিশ্বরেকর্ড এবং সোনা দুই-ই খোয়ানো, বিশ্বজয়ী অ্যাথলিট জেসি ওয়েন্সকে স্টেডিয়ামেই অপমান হিটলারের অলিম্পিকে কেলেঙ্কারির তালিকা যথেষ্ট দীর্ঘ। সেই তালিকায় গড়াপেটা ছিল না এত দিন। মঙ্গলবার রাতের ব্যাডমিন্টন ইভেন্টে গড়াপেটা কেলেঙ্কারি ধরা পড়তে তাই মুখরক্ষায় দ্রুত নেমে পড়েন অলিম্পিক কর্তৃপক্ষ। তড়িঘড়ি তদন্ত চালিয়ে আট জনকে সাসপেনশনের সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও বোধহয় অলিম্পিকের লজ্জা যাবে না। গেমস কমিটির প্রধান সেবাস্তিয়ান কো বলেছেন, “ভয়ঙ্কর হতাশাজনক ঘটনা। কার এমন বিশ্রী ঘটনা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে ভাল লাগে বলুন?”
|
লন্ডনে কেলেঙ্কারি |
• ব্যাডমিন্টনে গড়াপেটা। সাসপেন্ড চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়ার ৮ জন ডাবলস প্লেয়ার। |
• দক্ষিণ কোরিয়ার সাঁতারু পার্ক তাই হোয়ান অন্যায় ভাবে বাতিল। প্রতিবাদের মুখে ফেরানো হয়। জেতেন রুপো। |
• ছেলেদের আর্টিস্টিক জিমন্যাস্টিকসে প্রথমে জাপান চতুর্থ। বিচারকরা ভুল প্রমাণিত। পরে জাপান রুপো পায়। আগে রুপো ও ব্রোঞ্জ ছিল ব্রিটেন ও ইউক্রেনের। ব্রিটেন ব্রোঞ্জ পায়, ইউক্রেন শূন্য হাতে ফেরে। |
• টুইটারে বর্ণবৈষম্যমূলক মন্তব্য। বহিষ্কৃত সুইৎজারল্যান্ডের ফুটবলার মিশেল মর্গানেলা, গ্রিসের ট্রিপল জাম্পার পাপাচিরোৎসু। |
• স্ক্রিনে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় পতাকা। প্রতিবাদে এক ঘণ্টা পরে মাঠে নামেন উত্তর কোরিয়ার মহিলা ফুটবলাররা। |
• সেমিফাইনালে বিচারক এবং ঘড়ির ভুলে প্রায় এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দক্ষিণ কোরিয়ার ফেন্সার শিন আ লামকে। |
|
অলিম্পিকের সাম্প্রতিক ইতিহাসে চিনের উজ্জ্বল কীর্তিই এত দিন দেখেছে বিশ্ব। এ বারেও পদক তালিকায় তারা দ্রুত পিছনে ফেলেছে আমেরিকাকে। সেই রেষারেষি থেকে এর আগে চিনা সাঁতারু শিওয়েনের বিরুদ্ধে ডোপিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল আমেরিকা। আর সেই ঘটনায় এককাট্টা চিন এই ষোড়শীর পাশে দাঁড়িয়ে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে ক্রমাগত আমেরিকার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে। কিন্তু ব্যাডমিন্টনে গড়াপেটার পরে ছবিটা বদলে গিয়েছে।
কী ভাবে হল এই কেলেঙ্কারি? আর দক্ষিণ কোরিয়ার দু’টি ও ইন্দোনেশিয়ার একটি দল থাকা সত্ত্বেও চিনের দিকেই বা কেন বারবার আঙুল উঠছে? আসল ছবিটা ‘অপরাধী’ কোরিয়ানদের কথা থেকেই পরিষ্কার। শাস্তি পাওয়া দুই কোরিয়ান জুটির এক জন খেলোয়াড় বলেছেন, “চিনের প্লেয়াররাই ব্যাপারটা শুরু করেছিল। ইচ্ছে করে খারাপ খেলে হারছিল, যাতে ওরা পরের রাউন্ডে সহজ প্রতিদ্বন্দ্বী পায়। ওদের দেখেই অন্য গ্রুপে আমরাও সহজ প্রতিপক্ষ পেতে যা-যা করা উচিত, সেটা করেছি।” কোরিয়ান কোচও বলেছেন, “চিনই ব্যাপারটা শুরু করেছিল। আমরা অনুসরণ করেছি।” গড়াপেটা ম্যাচের সময় তার পাশের কোর্টেই খেলছিলেন মেয়েদের সিঙ্গলসে ১৫ নম্বর বাছাই বুলগেরিয়ার পেতা নেদেলচেভা। তিনি বলেছেন, “চিনারা নিজেদের মধ্যে খেললে গড়াপেটা প্রায় অনিবার্য। গত এক বছরে ৯৯টা ম্যাচের ২০টাতেই হয় ওয়াকওভার, না হয় মাঝপথে রিটায়ার! আর এখানে তো ওরা অন্যদের সঙ্গে মিলেও গড়াপেটা শুরু করে দিয়েছে।” চিনা জুটিকে নাটের গুরু ভাবছে বিশেষজ্ঞ মহলও।
ওয়েম্বলি এরিনায় গত কাল মেয়েদের প্রথম ডাবলস ম্যাচে শীর্ষ বাছাই চিনের ইউ ইয়াং-ওয়াং জিয়াওলি ইচ্ছে করে খারাপ খেলে হারেন দক্ষিণ কোরিয়ার জাং ইয়ুং-কিম হা না-র কাছে। মাত্র ২৩ মিনিট চলা ম্যাচে সবচেয়ে দীর্ঘ র্যালিতেও চারটের বেশি শট খেলা হয়নি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, চার প্লেয়ারই খেলার ফাঁকে নিজেদের মধ্যে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করছিলেন। রেফারি বার কয়েক কোর্টে ঢুকে তাঁদের সতর্কও করেন। গ্যালারি থেকে দর্শকরা টিটকিরি দেন। কিন্তু সে দিকে কান দিচ্ছিলেন না তাঁরা। ম্যাচ ছাড়ার পিছনে চিনা জুটির লক্ষ্য ছিল, ফাইনালের আগে স্বদেশীয় দ্বিতীয় বাছাই জুটির বিরুদ্ধে খেলা এড়ানো এবং পরের ম্যাচে সহজ প্রতিপক্ষ পাওয়া। কিছু পরে তৃতীয় বাছাই কোরিয়ান জুটি হা জুং-কিম মিন এবং তাঁদের ইন্দোনেশীয় প্রতিপক্ষ জুয়াহারি-পোল্লির খেলার সময়েও রেফারি কটাক্ষ করেন। গ্যালারি থেকে ছিটকে আসে অসন্তোষ। তাতে দমানো যায়নি ওঁদের। |
গত কাল |
রোয়িং |
শরণ, সন্দীপ-মনজিৎ ফাইনালে |
ব্যাডমিন্টন |
সাইনা, কাশ্যপ কোয়ার্টার ফাইনালে |
বক্সিং |
মনোজ কুমার প্রি কোয়ার্টারে |
তিরন্দাজি |
দীপিকার বিদায় |
শ্যুটিং |
রাহি, অনুরাজের হার |
হকি |
ভারতের হার |
টেনিস |
লিয়েন্ডারদের বিদায় |
|
এই সব ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বর্তমান তারকা লিন ডান থেকে প্রাক্তন বিশ্বসেরা তৌফিক হিদায়াত, সকলেই। চিনা তারকা লিন বলেছেন, “গড়াপেটার মতো ন্যক্কারজনক কাজ অলিম্পিক স্পিরিটের পরিপন্থী। অলিম্পিক আদর্শের বিচ্যুতি ঘটানোর অধিকার কারও নেই।” ২০০৪ অলিম্পিকে সোনাজয়ী ইন্দোনেশীয় তারকা হিদায়াতের মন্তব্য, “এটা সার্কাস ছাড়া কিছুই নয়। আমার দেশের প্লেয়ার শাস্তি পাওয়াতেও আমার বিন্দুমাত্র দুঃখ নেই। ব্যাডমিন্টন খেলা এবং অলিম্পিক স্পিরিট সবার আগে।” সংগঠকদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ উঠছে, বিশ্বের সমস্ত আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্টে প্রথম রাউন্ড থেকেই সরাসরি নক-আউট প্রথা অবলম্বন করা হলেও অলিম্পিকে কেন রাউন্ড রবিন গ্রুপ করা হল? নক আউটে গড়াপেটা সম্ভব নয়।
নাটকের প্রথম পর্ব যদি হয় চিন-কোরিয়া এবং তাদের দেখে কোরিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে গড়াপেটা, তবে দ্বিতীয় পর্বে এসে পড়বেই ভারতীয় জুটি জ্বালা গাট্টা-অশ্বিনী পোনাপ্পার নাম। চারটি জুটির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনায় উৎসাহিত হয়ে এই জুটি অভিযোগ করেন, তাঁদের গ্রুপে জাপান এবং চিনা তাইপেও গড়াপেটা করে পরের রাউন্ডে গিয়েছে। ম্যাচ জিতেও ছিটকে যেতে হয়েছে গাট্টা-পোনাপ্পাদের। জ্বালা বলেন, “আমাদের গ্রুপে শক্তিশালী জাপানি জুটি যে চিনা তাইপের কাছে হেরেছে, সেটা সত্যিই অপ্রত্যাশিত!” কিন্তু সেই অভিযোগ শেষ পর্যন্ত টেকেনি। |
আজ |
বক্সিং |
• জয় ভগবান (৬-৩০)
• বিজেন্দ্র সিংহ (রাত ২-৩০) |
শ্যুটিং |
• রঞ্জন সোধী (১-৩০)
• বিজয় কুমার (৩-০০)
|
|