ফুটবলের ‘প্রথম সুপারস্টার’কে ঘিরে আবেগ ইস্টবেঙ্গল দিবসে
ক হাতে লাঠি। অন্য হাতটাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন তাঁর ছেলে মজিদ খান। হ্যাঁ ‘জাদুকর’ বৃদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু তাতে কী? ইস্টবেঙ্গল মাঠে কালো কোট পরে যখন মঞ্চের সিঁড়ি ভেঙে উঠছিলেন তিনি, তখন সামনের সারিতে বসে থাকা বেশ কিছু প্রাক্তন ফুটবলার হাততালি দিয়ে উঠলেন। অমল দত্ত থেকে সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় থেকে সমরেশ চৌধুরী। আমেদ খানকে দেখে ভিড়ে গুঞ্জন উঠল, “সুপারস্টার। আমেদদাই ফুটবলের প্রথম সুপারস্টার।”
ইস্টবেঙ্গল দিবসে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের হাত থেকে ইস্টবেঙ্গলের ‘ভারত গৌরব’ পুরস্কার নিলেন আমেদ। তা দেখার পরে অমল দত্তের মতো লোক আবেগমথিত, “ও যখন রাস্তায় বেরোত, তখন সারি সারি মানুষ ওঁর একটা ঝলক পাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে থাকত। ওঁর মতো হ্যান্ডসাম ফুটবলার খুব কম জন্মেছে।” বহু দিন পরে ইস্টবেঙ্গল মাঠে হাজির এক কালের ময়দান কাঁপানো প্রশান্ত সিংহ। অসুস্থ, কথা বলতে কষ্ট। তবু আমেদ খানকে দেখে তিনিও উচ্ছ্বসিত। আর প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়? আসতে পারেননি। কিন্তু ফোনে কথা বলার সময় একটাই মন্তব্য, “আমেদ মানে সুপারস্টার।” সুরজিৎ সেনগুপ্তর আবার দাবি, “আমেদ খানের মতো কিংবদন্তির জন্য ফ্রি রেল এবং বিমানের পাস করা উচিত।”
আমেদ খানের হাতে স্মারক তুলে দিচ্ছেন রাজ্যপাল। বুধবার লাল-হলুদ তাঁবুতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ইস্টবেঙ্গলের ৯৩তম জন্মদিনে সারা জীবনের স্বীকৃতি পুরস্কার দিয়ে সংবর্ধনা জানানো হল শান্ত মিত্র এবং প্রশান্ত সিংহকে। শান্ত বিদেশে থাকায় আসতে পারেননি। অসুস্থ প্রশান্তর উচ্ছাসের কথা মেয়ে সোনালি-ই জানালেন, “সারা বছর আমাদের খোঁজ খবর রাখে ইস্টবেঙ্গল। এত ভালবাসা, এত সম্মান পেয়ে আমাদের খুব ভাল লাগছে।”
বুধ-সন্ধ্যায় আমেদ খানের পরেই সব চেয়ে বেশি উন্মাদনা দেখা গেল এক নাইজিরিয়ান ফুটবলারকে ঘিরে। বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মান নিতে নাইজিরিয়ার জাতীয় পোশাক পরে এসেছিলেন পেন ওরজি। গাঢ় বাদামি সাফারি। চোখে কালো চশমা। যে ইস্টবেঙ্গল মাঠে ঢুকতে সাধারণত মিনিট খানেক সময় লাগে, বুধবার সেই ক্লাবের গেট থেকে মূল মঞ্চে পৌঁছাতে পেন ওরজির লাগল প্রায় পনেরো মিনিট। এত ভালবাসা পেয়ে তিনি আপ্লুত। বললেন, “ইস্টবেঙ্গল দিবসে কী পোশাক পড়ব, সেটা নাইজিরিয়া থেকেই ঠিক করে এসেছিলাম। আমার দিদি আমাকে বেছে দিয়েছেন। এত বড় সম্মান পেয়ে আমি গর্বিত।”
পেন মঞ্চে উঠেই সবার প্রথমে এগিয়ে গেলেন একেবারে কোণের চেয়ারের দিকে। যেখানে বসে ছিলেন আমেদ খান। তাঁকে প্রণাম জানিয়ে এলেন আগে। পরে নিজের গাড়িতে ওঠার সময় বলছিলেন, “আমেদ খানকে আমি চিনি না। যেটুকু জেনেছি, সব ক্লাব থেকেই। ওঁর সম্পর্কে যা যা শুনেছি, তাতে শ্রদ্ধা বেড়ে গিয়েছে। তাই প্রথমেই ওঁর দিকে ছুটে গিয়েছিলাম।” পেনের পাশেই ছিলেন ইলিয়াস পাশা। বুধবার তাঁকেও সংবর্ধনার সঙ্গে ৫ লাখ টাকা সাহায্য করল ক্লাব। পাশা বললেন, “এত বড় অনুষ্ঠানে আমাকে ডাকা হবে, ভাবতেই পারিনি। দারুণ লাগছে।”
ক’দিন আগে মোহনবাগানের অনুষ্ঠানে সুব্রত ভট্টাচার্য ছিলেন না। এ দিন ইস্টবেঙ্গল মাঠে গরহাজির ছিলেন মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর নতুন ক্লাব পোর্ট ট্রাস্টের ‘আবাসিক শিবির থাকায়’। কৃষ্ণেন্দু রায়, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো প্রাক্তন তারকাদের সঙ্গে দেখা গেল চিমা ওকোরিকেও। যিনি মোহনবাগানের অনুষ্ঠানে ডাক পাননি বলে তোপ দেগেছিলেন, তিনি এ মাঠে বললেন, “আমি এখানে এসে খুব খুশি।” অনুষ্ঠানে সেরা সাংবাদিকের পুরস্কার দেওয়া হল রূপক সাহাকে। সেরা ধারাভাষ্যকার শিবাজি দাশগুপ্ত। সেরা রেফারি সাগর সেন ও সুমন্ত ঘোষ। সবার হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন সাহিত্যিক বুদ্ধদেব গুহ।
রাজ্যপালের সঙ্গে আমন্ত্রিতদের লম্বা তালিকায় ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মদন মিত্র, ব্রাত্য বসু, জগমোহন ডালমিয়ার মতো অনেকে। মোহনবাগান দিবসে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের কেউ যাননি। গেছিলেন প্রতিনিধি। মোহনবাগানও এক প্রতিনিধি পাঠিয়েছিল এ দিন। সঙ্গে ফুল। তবে এ সব কিছুকে ছাপিয়ে বুধবারের মহানায়ক হলেন আমেদই। আমেদ ‘জাদুকর’ খান।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.