আমি এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা। বয়স প্রায় সত্তর। প্রতি দিন সন্ধ্যায় একটা বড় সময় টেলিভিশনের সামনে বসেই কাটে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখেছি, প্রতিটি চ্যানেলের প্রায় প্রতিটি মেগাসিরিয়ালের গল্প মোটামুটি এক রকম। তা হোক। গল্প যখন, তাতে মন্দ চরিত্র তো থাকবেই। সব ধারাবাহিকেই দেখি, মন্দ চরিত্রের প্রধান মানুষটি বা মানুষগুলি অবধারিত ভাবে মহিলা। কখনও মা, কখনও শাশুড়ি, কখনও ননদ, জা। তাঁরা যে আচরণ করেন, যে ভাবে ষড়যন্ত্র করেন, যে ভঙ্গিতে কথা বলেন, বাস্তবের সঙ্গে তার আসমান-জমিন ফারাক। বাস্তবে কোনও মানুষ অতখানি খারাপ হতে পারেন বলে বিশ্বাস হয় না। যে চরিত্রের মহিলারা প্রায় আমারই বয়সী, তাঁরা যে ভাষায় যে মর্মে নাতিনাতনিদের কুপরামর্শ দেন, বাস্তবে কারও পক্ষে অতখানি নীচে নামা অসম্ভব বলেই বোধ করি।
টিভি-সিরিয়াল গল্পমাত্র, কল্পনার জগৎ, ঠিকই। কিন্তু, এই কল্পজগৎ যে আমাদের বাস্তবকে প্রভাবিত করে, তা অস্বীকার করা যায় কি? মানুষে-মানুষে সম্পর্কের মূলে যে বিশ্বাস থাকে, তার সম্ভাব্যতা নিয়েই প্রশ্ন তৈরি করছে না কি এই কল্পদুনিয়ার ঘটনাবলি? প্রতি দিন সন্ধে হলেই যাঁরা টেলিভিশনের সামনে এসে বসেন, প্রতি দিন হরেক চ্যানেলবাহিত এই কদর্যতা তাঁদের মনে সম্পর্কের সমীকরণগুলো নষ্ট করে দিচ্ছে। বিশেষত যারা এখনও সে ভাবে বাস্তবকে চেনেনি, সেই ছোট ছেলেমেয়েদের ওপর, বা শ্বশুরবাড়ি সম্বন্ধে ধারণা নেই, সদ্য-বিবাহিত এমন মেয়ের ওপর এই সব সিরিয়ালের প্রভাব কতটা মারাত্মক?
স্বপ্না সেনগুপ্ত। কলকাতা ৭০০০৭৪ |