জটে অনড় গাড়ি-বাস, ঘরে ফিরতে ভরসা পা

দু’দিকে মুখ করে সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে গাড়ির পর গাড়ি। থমকে থাকা গাড়ি, হুটার বাজাতে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সকে পিছনে ফেলে অন্ধকার রাস্তার দু’পাশে পিলপিল করে মানুষ হেঁটে চলেছেন গন্তব্যে। কাঁধে ব্যাগ। আর বাসের মাথায় বসে থাকা মানুষের ভিড় মনে পড়িয়ে দেয় দেশভাগের পরে উদ্বাস্তুদের ছবিকে।
বারাসত থেকে এয়ারপোর্ট মোড়ের দূরত্ব মাত্র ন’কিলোমিটার। বিকেল ৪টেয় বারাসত থেকে গাড়িতে উঠেছিলেন এক স্কুলশিক্ষিকা। রাত ৮টা নাগাদ এয়ারপোর্ট মোড়ে পৌঁছলেন তিনি। সকাল ৮টায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন। কিন্তু কালীঘাটের বাড়িতে ফেরার সামর্থ্য আর নেই। জানালেন, থেকে যাবেন দমদমে সহকর্মীর বাড়িতে।
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জন্য কয়েক ঘণ্টা ট্রেন বন্ধ। তার জেরে যশোহর রোডের কী হাল হতে পারে, মঙ্গলবার সেটা টের পেলেন কলকাতা উত্তর শহরতলির বাসিন্দারা।
কয়েক ঘণ্টার ছবি বেশ কয়েকটি বিষয়ে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ ফের উস্কে দিল।
১২ কামরার ট্রেন চালু হল না এখনও।
যশোহর রোড চওড়া করার কাজ আজও শুরু হল না।
থমকে রয়েছে বাইপাস।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজও।
সকালে ঠিকঠাকই চলছিল ট্রেন। তাই অনেকেই পৌঁছে গিয়েছিলেন অফিসে, স্কুলে, অন্যান্য কর্মস্থলে। কিন্তু দুপুর থেকেই বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের জেরে শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন অফিসফেরত যাত্রীরা। প্রথমে ভিড় বাড়ে স্টেশনগুলিতে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ট্রেন চলার সম্ভাবনা নেই বলে ঘোষণা হতেই সেই ভিড় আস্তে আস্তে ঘুরে যায় সড়কপথে। কিন্তু কলকাতা থেকে বারাসত হয়ে বনগাঁ বা বসিরহাট যাওয়ার রাস্তা তো মাত্র একটাই। দু’পাশে জবরদখল হতে হতে সঙ্কীর্ণ হয়ে পড়া যশোহর রোড। সেই জাতীয় সড়কেরই বা সহনশীলতা আর কতটুকু? একই হাল হয় বি টি রোডেও। শ্যামবাজার থেকে ডানলপ অনেক রাত পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকে গাড়ি।
সড়কপথে হঠাৎ ফুলেফেঁপে ওঠা জনস্রোতের জন্য পর্যাপ্ত যানবাহনই বা কোথায়? অনেকে বহুত কসরত করে বাস, অটো, ট্রেকারে ঠাসাঠাসি হয়ে যাত্রা শুরু করলেন। কেউ কেউ উঠে পড়লেন বাস-ট্রেকারের মাথায়। সুযোগ বুঝে মোড়ে মোড়ে চলে এল ট্রাক, ম্যাটাডর, মিনিডর। বারাসত থেকে এয়ারপোর্ট ‘বিশ’ টাকা। মুহূর্তে গাড়ি বোঝাই। দিদিমণিরা ছ’জন মিলে দেড় গুণ ভাড়ায় ছোট গাড়ি ভাড়া করলেন। প্রত্যেকের পড়ল একশো টাকা। যাঁদের সুবিধা রয়েছে, তাঁরা ফোন করে নিজেদের গাড়ি আনিয়ে নিলেন। শুরু হল যাত্রা।
কিন্তু গাড়ি চলবে কী করে? মধ্যমগ্রাম চৌমাথায় দাঁড়িয়ে থাকা এক ট্রাফিক সাব-ইনস্পেক্টর কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন, “এমনিতেই যশোহর রোডে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে। আর এ দিন প্রায় দু’গুণ গাড়ি চলছে। ট্রেনের গোটা ভিড় রাস্তায়। গাড়ি কী আকাশ পথে চলবে?”
সেটা সম্ভব নয় বলে কয়েক মিটার এগিয়েই গাড়ি ফের নট নড়নচড়ন। ভিড়ে ঠাসা বাসের মধ্যে শ্বাস নেওয়াই মুশকিল। চালকেরাই বললেন, “নেমে যান। আগে পৌঁছতে পারবেন।” অগত্যা হাঁটা শুরু। বাসের ভিড় নেমে ছড়িয়ে গেল রাস্তার দু’পাশে। বিরাটি থেকে এয়ারপোর্ট বা দোলতলা থেকে বারাসত পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার হেঁটে গাড়ির অনেক আগে পৌঁছেও গেলেন অনেকে। বহু যাত্রীর পা তখনও চলছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.