বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় সারা রাজ্যের সঙ্গে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার বাসিন্দারা মঙ্গলবার চরম দুর্ভোগের শিকার হলেন। দুপুর থেকে বিদুৎহীন হয়ে পড়ে গৃহস্থের বাড়ি থেকে অফিস, কাছারি, হাসপাতাল। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আদ্রা ডিভিশনের বিভিন্ন রেল স্টেশনে লোকাল ও দূরপাল্লার বেশ কিছু ট্রেন দাঁড়িয়ে যায়। পুরএলাকাগুলিতে বিকেলের জল সরবরাহও বন্ধ থাকে। সন্ধ্যা নামতেই শহর থেকে গ্রাম অন্ধকারে ডুবে যায়। এক কথায় বাসিন্দারা শোচনীয় দুর্দশায় পড়েন।
দুপুর ১টার পরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় হয়। রেল সূত্রের খবর, আদ্রা ডিভিশনের শাঁকা স্টেশনে আটকে পড়ে নয়াদিল্লি থেকে ভুবনেশ্বরগামী রাজধানী এক্সপ্রেস। ঘণ্টা দু’য়েক পরে পরে আদ্রা থেকে ডিজেল ইঞ্জিন পাঠিয়ে ট্রেনটিকে আদ্রা পর্যন্ত নিয়ে আসা হয়। তবে অধিকাংশ ট্রেনের যাত্রীদের সেই ‘সৌভাগ্য’ হয়নি। শালবনি ও চন্দ্রকোনার মাঝে দাঁড়িয়ে পড়ে নয়াদিল্লি থেকে ভুবনেশ্বরগামী দুরন্ত এক্সপ্রেস, কাঁটাডির কাছে আটকে যায় ডিব্রুগড়-চেন্নাই এক্সপ্রেস। এ ছাড়া ঝাঁটিপাহাড়ি ও সাঁওতালডিহিতে আটকে পড়ে রূপসী বাংলা ও আরণ্যক এক্সপ্রেস। |
হঠাৎ করে ট্রেনের ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় প্রায় প্রতিটি ট্রেন মাঝ পথে আটকে পড়ে। স্টেশন থেকে দূরে ফাঁকা এলাকায় আটকে পড়া যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়েন। যাত্রীরা খিদে ও তেষ্টায় প্রচণ্ড কষ্ট পান। অনেকে ট্রেন থেকে নেমে হেঁটে কাছাকাছি স্টেশনে বা বাসস্ট্যান্ডে চলে যান। বিষ্ণুপুর ও পিয়ারডোবা স্টেশনের মাঝে আটকে পড়ে আদ্রাগামী মেদিনীপুর-আদ্রা ডিএমইউ ট্রেন। তাঁদের সঙ্গে সন্তান কোলে মা কিংবা ভারি ব্যাগ মাথায় নিয়ে অনেককেই রেল লাইন ধরে হেঁটে আসতে দেখা যায়। বিভিন্ন স্টেশনে অনেক যাত্রীকে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। অধৈর্য যাত্রীরা স্টেশনের কর্মীদের কাছে বার বার জানতে চান, কখন ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে? বিষ্ণুপুরের ডেপুটি স্টেশন ম্যানেজার দীপক দত্ত বলেন, “যাত্রীদের আমরা জানিয়ে দিই কখন ট্রেন চলবে জানি না।” |
আদ্রার ডিআরএম অমিতকুমার হালদার বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পাঁচটি লোকাল ট্রেন বাতিল করতে হয়েছে। তবে দুপুর সাড়ে তিনটে পরে আস্তে আস্তে ঝাড়খণ্ডের কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ফেরে। তবে ইন্দ্রবিল থেকে খড়গপুর পর্যন্ত ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ না আসায় সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই অংশে ট্রেন চালানো যায়নি।” তিনি জানান, আদ্রা ডিভিশনের যে অংশ ঝাড়খণ্ডে রয়েছে, তার একাংশে বিদ্যুৎ ফেরায় পুনরায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার পুরুলিয়া-সহ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ আসায় ট্রেন চলতে শুরু করে। কিন্তু বিভিন্ন লাইনে প্যাসেঞ্জার ও মালগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় ডিজেল ইঞ্জিন পাঠিয়েও অনেক ট্রেনকে নিকটবর্তী স্টেশনে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি।
শিল্পাঞ্চলে বিদ্যুতের এই ঘাটতির কিছু প্রভাব পড়ে বলে জানা গিয়েছে। বড়জোড়া শিল্পতালুকের কারখানাগুলি জেনারেটর চালিয়ে উৎপাদন করে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। অন্য দিকে, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার জেরে গঙ্গাজলঘাটির মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব কটি ইউনিট দুপুর ১টা থেকে প্রায় ঘণ্টা তিনেক বন্ধ হয়ে যায়। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের চিফ ইঞ্জিনিয়ার দেবাশিস মিত্র বলেন, “বিকেল চারটের পরে মাইথন ও পাঞ্চেত থেকে বিদ্যুৎ আসায় ধীরে ধীরে আমাদের ইউনিটগুলি বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করে। তবে রাত পর্যন্ত সব কটি ইউনিট স্বাভাবিক হয়নি।” সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদনও বন্ধ থাকে। এ দিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় পুরুলিয়া, ঝালদা, বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী পুরএলাকায় বিকেলে জল সরবরাহ বন্ধ থাকে। রঘুনাথপুর পুরএলাকায় অল্প ক্ষণ জল দেওয়া হয়। ঝালদার পুরপ্রধান প্রদীপ কর্মকার, রঘুনাথপুরের পুরপ্রধান মদন বরাট বলেন, “রাতে বিদ্যুৎ না ফিরলে কী হবে জানি না।” |