বিমান-শ্যামল যুগলবন্দি ‘সফল’, চিন্তায় তবু বামফ্রন্ট
সিটুর রাশ টেনে বাইরের পরিস্থিতি আপাতত সামাল দিতে পেরেছে সিপিএম। কিন্তু ঘরের সমস্যা তাতে মিটছে না! সপ্তাহের ভরা কাজের দিনে ধর্মঘট করলে এখনও বামেদের থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকা জনতার আরও বিরূপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। তার উপরে বামফ্রন্টের মধ্যে ক্ষোভ এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে দলের সমর্থক পরিবহণ কর্মীদের একক লড়াইয়ে এগিয়ে দেওয়া সুবিবেচনার কাজ হবে না গণ্য করে পরিবহণ ধর্মঘট থেকে সিটুকে বিরত করতে পেরেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল চক্রবর্তীর মাধ্যমেই সেই কাজ হাসিল করেছেন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। কিন্তু একের পর এক ঘটনায় প্রকট হয়ে ওঠা বামফ্রন্টের অন্দরের ফাটল তাতে মেরামত হচ্ছে না। আগামী দিনে মমতার মোকাবিলায় যে সমস্যা তাঁদের ভোগাবে বলেই বাম নেতৃত্বের একাংশের আশঙ্কা।
বস্তুত, বামেদের ঘরের ‘লড়াই’ চলছিল দু’টি স্তরে। একটি সিপিএমের সঙ্গে সিটুর। অন্যটি সিপিএমের সঙ্গে বাম শরিকদের। দলের শ্রমিক সংগঠন ‘জঙ্গি আন্দোলনে’ বাড়াবাড়ি করুক, আলিমুদ্দিনের নেতাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই এখন তা চান না। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য-বিমান বসু-সূর্যকান্ত মিশ্রেরা চান, সার্বিক ভাবে সিপিএমের পাশাপাশি গণ সংগঠনগুলিও ‘বাস্তব’ মেপে পা ফেলুক। বস্তুত, দলেরই একাংশের মতে, সিটুর সভাপতি হিসেবে শ্যামলবাবু শ্রমিক সংগঠনের উপরে বিমানবাবুদের ‘নিয়ন্ত্রণ’ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। সিপিএম এবং সিটুর মধ্যে সেতু হিসেবে শ্যামলবাবু থাকায় পরিবহণ ধর্মঘট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে দ্রুত পৌঁছনো গিয়েছে বলে ওই অংশের মত। নইলে সিটু আরও বেশি করে নিজের মতো চলতে চাইত এবং তাতে ‘বিড়ম্বনা’ বাড়ত আলিমুদ্দিনের।
কিন্তু এই প্রথম ‘লড়াই’য়ে আলিমুদ্দিন আপাতত সফল হলেও দ্বিতীয় ক্ষেত্রে টানাপোড়েন তাদের চিন্তায় রাখছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং তার পিঠোপিঠি পরিবহণ ধর্মঘট ঘিরে শরিকদের একাংশের সঙ্গে সিপিএমের ‘বিভাজন’ যে ভাবে তীব্র হয়েছে, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছেন বাম নেতৃত্বের একাংশ। ফ্রন্টের প্রবীণ এক নেতার কথায়, “রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অতীতেও কংগ্রেসের প্রার্থীকে ভোট দেওয়া হয়েছে। একই ভাবে অতীতেও সিটুর ডাকে পরিবহণ ধর্মঘট রাজ্যে হয়েছে। কিন্তু এ বার দু’টি বিষয়েই শরিকদের একাংশ যে মনোভাব নিলেন, মমতার সরকারের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষেত্রে তা মোটেই ভাল ইঙ্গিত নয়।”
বস্তুত, সাম্প্রতিক কালে শরিকদের একাংশের ভূমিকায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ আলিমুদ্দিন। দলের নেতাদের একাংশের বক্তব্য, “পরিস্থিতি বিচার করে এ বার পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিতে হল ঠিকই, কিন্তু তাই বলে শরিকদের সঙ্গে আলোচনা না করে কেন ধর্মঘট ডাকা হয়েছিল, এই যুক্তিও ধোপে টেকে না।” সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য, রাজ্যের এক প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, “ফ্রন্টের প্রত্যেকটা দল এবং তাদের গণ সংগঠন একক ভাবে তো নানা আন্দোলন কর্মসূচি নেয়। তা হলে সিটুর পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা নিয়ে এত প্রশ্ন কেন? তা হলে দলীয় কর্মসূচি নেওয়াই তো বন্ধ রাখতে হয়!” সিটুর ধর্মঘটে আপত্তি তোলা নিয়ে শরিক দলগুলির মধ্যেও যে প্রশ্ন নেই তা নয়। দলীয় নেতৃত্বের অবস্থানের বিপরীতে দাঁড়িয়ে আলিমুদ্দিনের বক্তব্যকে সমর্থন করছেন অন্য বাম দলগুলির কিছু নেতাও। ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য কমিটির এক সদস্য যেমন বলেন, “আমরা এ বার কোনও কর্মসূচি নিলে সিপিএম যদি আপত্তি তোলে, তখন কী বলা হবে?”
ফলে সিটুর পরিবহণ ধর্মঘট শেষ পর্যন্ত বিমান-শ্যামল যুগলবন্দিতে শিকেয় তুলে রাখা হলেও তাকে ঘিরে ফ্রন্টের অন্দরে যে যথেষ্ট ‘তিক্ততা’ তৈরি হয়েছে সেটা স্পষ্ট। তবে স্বাভাবিক কারণেই সিপিএম বা অন্য বাম নেতৃত্ব এই নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছেন না। বরং বলছেন, বাম ঐক্যে এ সবের কোনও প্রভাব পড়বে না!
বামফ্রন্টের কর্মসূচি একেবারে ব্লক স্তর পর্যন্ত পালন করার প্রশ্নে ফ্রন্ট বৈঠকেই বিমানবাবুদের সঙ্গে সাম্প্রতিক কালে মতের ফারাক দেখা দিয়েছে আরএসপি, সিপিআই নেতৃত্বের। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য পাল্টা বলছেন, “সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সব ট্রেড ইউনিয়ন মিলে যৌথ ভাবে এগোনোর সময়ে একটা ক্ষেত্র ধরে সিটুর একা ধর্মঘট ডাকতে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন ছিল না। তা ছাড়া, মমতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কংগ্রেসকে পাশে পাওয়া যাবে ভেবে সিপিএম যে কৌশল নিতে গিয়েছিল, সেটাও এই মুহূর্তে কাজে আসছে না। তাতে রাজনৈতিক সমীকরণ আরও পাল্টে গিয়েছে।” আরএসপি-র এক রাজ্য নেতাও বলছেন, “বামফ্রন্ট ক্ষমতায় থাকার সময়েই সিপিএমের দাদাগিরির প্রতিবাদ আমরা করেছি। এখন তো আরও সতর্ক হয়ে চলা দরকার।”
সিটুকে লাগাম পরিয়েও বামফ্রন্ট না বেলাগাম হয়ে যায়, ভাবতে হচ্ছে বিমানবাবুদের!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.