জাগরি বাস্কে, সুচিত্রা মাহাতোদের পথে হেঁটে মূলস্রোতে ফেরার লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ করলেন দুই ‘মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যা’। দুষলেন মাওবাদীদের ‘খুনের রাজনীতিকে’। শিখা হাঁসদা ও চম্পা হেমব্রম নামে এই দু’জন সম্প্রতি পুলিশের হাতে ধরা পড়া অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা বিক্রম ওরফে অর্ণব দামের সঙ্গে বছর চারেক কাজ করেছেন বলে পুলিশের দাবি।
শিখা ও চম্পাকে সোমবার পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার সি সুধাকর মহাকরণে নিয়ে আসেন। পুলিশ সূত্রের খবর, পুরুলিয়া জেলাতে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। শিখার বিরুদ্ধে অযোধ্যা পাহাড় থেকে পুলিশকর্মী পার্থ বিশ্বাস এবং স্কুলশিক্ষক সৌম্যজিৎ বসুকে অপহরণ ও খুন, ঝালদায় এক রাতে ৭ জনকে খুন-সহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে। চম্পার বিরুদ্ধে পার্থ-সৌম্যজিৎ অপহরণ ও খুনের পাশাপাশি, গত নভেম্বরে বলরামপুরের খুনটাঁড় গ্রামে তৃণমূল কর্মী রাজেন সিংহ সর্দারের বাবা
অজিত সিংহ সর্দার ও ভাই রমেশ সিংহ সর্দারকে খুনের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশকে শিখা জানিয়েছেন, তিনি ছিলেন স্কোয়াডের ডেপুটি কম্যান্ডার, আর চম্পা স্কোয়াড-সদস্য। |
মহাকরণে এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় এবং আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ সাংবাদিকদের সামনে শিখা ও চম্পাকে হাজির করেন। ডিজি জানান, রবিবার দুপুরে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের অফিসে আত্মসমর্পণ করেন ওই দুই ‘মাওবাদী স্কোয়াড সদস্যা’। দুটি দো’নলা বন্দুক এবং ১০ রাউন্ড কার্তুজও জমা দিয়েছেন তাঁরা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার বলেন, “গত ১০ দিন ধরে ওঁদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছিল। নতুন সরকার আসার পরে আত্মসমর্পণের নীতি কী হয়েছে, তাতে কী কী সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়, তার সবটাই ওঁদের বোঝানো হয়েছে। তার পরেই ওঁরা এই সিদ্ধান্ত নেন।”
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, বছর ছাব্বিশের শিখার বাড়ি বলরামপুর থানার ঘাটবেড়া-কেরোয়া পঞ্চায়েত এলাকার পারবাইদ গ্রামে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল স্থানীয় সারিডি গ্রামে। শ্বশুরবাড়িও খুবই গরিব। কাঠ কুড়িয়ে সংসার চালাতে সাহায্য করতেন এই যুবতী। ২০০৮ সালে তিনি অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দেন। স্কোয়াডে তাঁর নাম ছিল ভারতী। সেই সময় মাওবাদী নেতা রাজারাম সোরেন ওরফে সাগেন সাঁওতালের মাধ্যমে অযোধ্যা স্কোয়াডে যোগ দেন। ঘটনাচক্রে রাজারাম এবং তাঁর স্ত্রী জাগরী বাস্কেও গত বছর মহাকরণে আত্মসমর্পণ করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, শিখাকে মাওবাদীরা এক বার দলমা স্কোয়াডে সরালেও আবার ফিরিয়ে আনে অযোধ্যা স্কোয়াডে। গত অক্টোবরে (যে মাসে পার্থ-সৌম্যজিৎ খুন হন) স্কোয়াড সদস্য হলধর গরাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয় শিখার।
বছর পঁচিশের চম্পা হেমব্রমের বাড়ি অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে বলরামপুরের মাহিলিটাঁড় গ্রামে।পাঁচ ভাই, তিন বোনের অভাবের সংসার। বিয়ে হয়েছিল আড়শায়। পুলিশ সূত্রের দাবি, পারিবারিক অশান্তির জেরে শ্বশুরবাড়ি বাড়ি ছাড়েন চম্পা। দাদা খেরোয়াল হেমব্রমের হাত ধরে চম্পার মাওবাদী দলে যোগদান বলে পুলিশ জানিয়েছে। খেরোয়াল আগেই মাওবাদী দলে যোগ দিয়েছিলেন। এখন তিনি ঝাড়খণ্ডের জেলে। মাওবাদীদের সঙ্গে থাকার সময় চম্পা থ্রি-নট-থ্রি রাইফেল ব্যবহার করতেন।
শিখার দাবি, “মেয়েদের উপরে অত্যাচার করত মাওবাদীরা। গরিব মানুষেরাও ওদের অত্যাচারের শিকার হত। টাকা আদায় করত। ‘পুলিশের দালাল’ তকমা দিয়ে গরিব মানুষকে খুন করত। তাই আমরা ওদের সঙ্গ ছাড়ব বলে স্থির করি।” |