পরিবেশ রক্ষায় দুনিয়া জুড়েই জোর দেওয়া হচ্ছে অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারে। সেই সূত্রেই বাড়ছে সৌরবিদ্যুতের কদর। শিক্ষা দফতর আয়োজিত রাজ্য বিজ্ঞান-মডেল প্রতিযোগিতায় সৌরবিদ্যুৎ চালিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ‘ড্রিম-হাউসে’র মডেল বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে কাঁথির কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদনের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিসৌরি জানা। পরিবেশ-বান্ধব এই বাড়ির মডেল মিসৌরিকে প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কারও এনে দিয়েছে। অগস্টের শেষ সপ্তাহে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত জাতীয়-স্তরের বিজ্ঞান-মডেল প্রতিযোগিতায় এ রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব করার ডাক পেয়েছে এই কিশোরী। |
প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে মডেল-সহ মিসৌরি। —নিজস্ব চিত্র। |
লাজুক স্বভাবের মিসৌরিকে নিয়ে স্কুলের শিক্ষিক-শিক্ষিকারা রীতিমতো গর্বিত। কিশোরনগর শচীন্দ্র শিক্ষাসদনের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত রায় জানালেন, গত ২৩ এপ্রিল তমলুকে জেলাস্তরের প্রতিযোগিতাতেও প্রথম হয়েছিল মিসৌরি। ২৩ জুলাই কলকাতার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে রাজ্যস্তরের প্রতিযোগিতাটি হয়। প্রায় ২০০ প্রতিযোগীর মডেলের মধ্যে সেরার স্বীকৃতি পায় মিসৌরির ‘ড্রিম-হাউস’। জয়ন্তবাবু বলেন, “অসম্ভব মেধাবী ও নম্র স্বভাবের মেয়ে মিসৌরি। ক্লাসে বরাবর প্রথম হয়।” কৃতী এই ছাত্রীর বাবা গৌরসুন্দর জানা সরকারি কর্মী, মা শুভান্বিতা উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলে ভূগোলের শিক্ষিকা। আমেরিকার বিখ্যাত নদীর নামে মেয়ের নাম রেখেছেন শুভান্বিতাদেবীই। তিনি বলেন, “খুবই ভাল লাগছে। তবে এই কৃতিত্ব ওর একার নয়। ওর স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক অমলেশ দাস ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও যে ভাবে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সাহায্য করেছেন, তা ভোলার নয়।”
স্বপ্নের এই বাড়ির বিশেষত্ব কী?
মিসৌরি জানায়, বিদ্যুৎ ছাড়া আজকের দিনে একটি মুহূর্তও ভাবা যায় না। আলো, পাখা, টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটারসবই চলে বিদ্যুতে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলিই এখনও বিদ্যুতের সবচেয়ে বেশি জোগান দেয়। কিন্তু এই প্রক্রিয়ায় প্রচুর দূষণ হয়। কারণ, কয়লা পুড়িয়ে তাপশক্তি তৈরি করে তা বিদ্যুৎ-শক্তিতে রূপান্তরের সময়ে প্রচুর পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড বাতাসে মেশে। এতে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রাও বৃদ্ধি পায়। এসি মেশিন থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরোকাবর্নও মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ ঘটায়। মিসৌরির কথায়, “আমার ‘ড্রিম-হাউসে’ সবই চলবে সৌরশক্তিতে। পরিবেশ-বান্ধব এই বাড়ির মডেল বৃহৎ পরিকল্পনার ছোট সংস্করণ। এই মডেলে আমি বাইরের উষ্ণতার চেয়ে ঘরের ভিতরের উষ্ণতা ৩-৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড কমাতে পেরেছি।” |