দুষ্কৃতী-তাণ্ডব ব্যস্ত হাওড়ায়, প্রশ্নের মুখে কমিশনারেট
রাতের অন্ধকারে নয়। বিকেলের আলোতেই খোদ হাওড়া শহরের মধ্যে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়ে, বোমাবাজি করে আধ ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালালো এক দল দুষ্কৃতী। প্রাণ বাঁচাতে যে দিকে সম্ভব ছুটলেন বাসিন্দারা। বন্ধ হয়ে গেল দোকানপাট। গুলিতে জখম হলেন এক ছাত্র। সোমবার বিকেলে, শিবপুরের দয়াল ব্যানার্জী রোড এলাকার এই ঘটনা আরও এক বার বড়সড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিল হাওড়ার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে।
এ দিনের এই ঘটনার পরে পুলিশ কমিশনারেটের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বাসিন্দারা। পুলিশ ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, হাওড়ায় কমিশনারেট হওয়ার পরে অপরাধমূলক কাজ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রাণাডের দাবি, অপরাধ বাড়েনি। বরং কমিশনারেট হাওড়াবাসীকে অভিযোগ জানানোর ব্যাপারে আরও সচেতন করতে পেরেছে তাই আগের তুলনায় অভিযোগ জমা পড়ছে বেশি। তাই পরিসংখ্যানগত ভাবে মনে হচ্ছে অপরাধ বাড়ছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, দুপুর ১২টা নাগাদ হাওড়ার কুখ্যাত দুষ্কৃতী রামুয়ার দলের ১০-১২ জন দয়াল ব্যানার্জী রোডের একটি ক্লাবে আসে স্থানীয় যুবক সঞ্জয় সাউয়ের খোঁজে। রবিবার রাতে কোনও বিষয়ে রামুয়ার এক শাগরেদের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন সঞ্জয়। তবে সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে কোনও অপরাধমূলক কাজের রেকর্ড নেই।
হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জখম অমিতকে। —নিজস্ব চিত্র
স্থানীয়েরা জানান, এ দিন সকালেই ওই দুষ্কৃতীরা সঞ্জয়ের খোঁজে আসে। এমনকী বিকেলে এসে তাঁকে না পেলে স্থানীয়দের প্রাণে মারার হুমকিও দিয়ে যায়। এর পরেই শিবপুর থানায় ওই দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে নিরাপত্তার দাবি জানান আতঙ্কিত বাসিন্দারা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, দুপুরে এক বার এক দল পুলিশ এসে টহল দিয়ে চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দা রাকেশ সরোজ বলেন, “পুলিশকে বলেছিলাম এলাকায় পিকেট বসান। কিন্তু কেউ আমাদের কথায় কান দেয়নি। গুরুত্ব দিলে হয়তো এই ঘটনা ঘটত না।”
ওই ক্লাবের সদস্যরা পুলিশকে জানান, দুপুরে পিস্তল হাতে ক্লাবে ঢুকেই দুষ্কৃতীরা সঞ্জয়কে বার করে দিতে বলে। কেউ সঞ্জয়ের খোঁজ না দিতে পারায় কয়েক জনকে মারধরও করা হয়। এক সদস্য অসিত মাহাতো বলেন, “ওরা পিস্তল দেখিয়ে বলছিল, সঞ্জয় কোথায় না বললে গুলি করে দেব। আমরা বলতে না পারায় ওরা বিকেলে ফের আসবে বলে হুমকি দিয়ে যায়।” এর পরেই শিবপুর থানায় গিয়ে অভিযোগ জানান ক্লাব-সদস্যরা।
পুলিশ জানায়, বিকেলে ১০-১২ জন দুষ্কৃতী মোটরসাইকেলে এসে দয়াল ব্যানার্জী রোডে ঢোকে। প্রত্যেকের হাতে ছিল পিস্তল, বোমা। এলাকা জুড়ে ঘুরতে থাকে দুষ্কৃতীরা। তাদের দেখে আতঙ্কে ছোটাছুটি শুরু করেন স্থানীয়েরা। মহিলা, শিশুরাও ভয়ে ছুটতে থাকেন। হুড়োহুড়িতে কয়েক জন পড়ে গিয়ে চোট পান। স্থানীয়েরা জানান, মোটরসাইকেলে চেপে ঘুরতে ঘুরতে দুষ্কৃতীরা বলতে থাকে, অভিযোগ করেছিস। এ বার মজা দেখ। বলেই তারা এলোপাথাড়ি গুলি ও বোমা ছুড়তে থাকে।
বহু দোকান, বাড়ির দরজা জানালা লক্ষ্য করে ইটও ছোড়া হয়।
তখনই বাইরে চেঁচামেচি শুনে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে স্থানীয় অম্বিকা হিন্দি হাই স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অমিত গুপ্ত। দুষ্কৃতীরা মোটসাইকেল নিয়ে তাকে ধাওয়া করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কোনও মতে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে অমিত। কিন্তু দরজার ফাঁক দিয়েই গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। অমিতের পায়ে আঘাত লাগে। তাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, এলাকা জুড়ে থমথমে ভাব। বহু বাড়ির দরজা-জানলা ভাঙা। রাস্তায় ছড়িয়ে রয়েছে ইটের টুকরো। কয়েকটি দেওয়ালে রয়েছে গুলির দাগ। বসেছে পুলিশ পিকেট। স্থানীয় বাসিন্দা স্বপন মাল বললেন, “আধ ঘণ্টা ধরে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব চলল। বোঝাই যাচ্ছে কমিশনারেটের হাল কী হয়েছে।” বাসিন্দাদের অভিযোগ, এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সময়ে দুষ্কৃতীরা ফের হুমকি দিয়ে যায় অভিযোগ না তুললে আবার আসবো।
স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “এই ঘটনায় সিপিএমের দুষ্কৃতীরা জড়িত। তবে পুলিশকে জানানো সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা দেখার জন্য কমিশনারকে বলবো। প্রয়োজনে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই ঘটনার বিষয়ে বিশেষ কিছু বলতে রাজি হননি হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা।
এক পুলিশ কর্তা বলেন, “ঘটনায় কারা জড়িত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.