নেই সিগন্যালিং ব্যবস্থা। নেই যাত্রী নিরাপত্তা। আট বছর ধরে ঝুঁকি নিয়ে রেল সফর করতে হচ্ছে রাজ্যের সীমান্তবর্তী একটি গোটা জেলার মানুষকে। ব্রিট্রিশ আমলের ‘হ্যান্ড প্লাঞ্জার’ পদ্ধতি আঁকড়ে ধরেই চলছে ট্রেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট-একলাখি রেলপথের ঘটনা। ২০০৪-এর ডিসেম্বরে বালুরঘাটে ট্রেন চালু হয়। সেই থেকে ‘রেল পুলিশের’ আওতার বাইরে রেখে দিব্যি বালুরঘাট থেকে মালদহ ৮৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথে ট্রেন চালাচ্ছেন উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেল কর্তৃপক্ষ। যাত্রী সুরক্ষা নিয়ে রেলের তেমন হেলদোল নেই, তা কলকাতায় যোগাযোগের মূল ট্রেন গৌড় লিঙ্ক প্যাসেঞ্জারে মালদহ পর্যন্ত গিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। শনিবার বিকেল ৫টা ৫ মিনিট বালুরঘাট স্টেশন থেকে মালদহের দিকে ছাড়ল গৌড় লিঙ্ক প্যাসেঞ্জার। স্টেশন পার হয়ে ১০০ মিটার পথ যেতে না যেতেই ট্রেন থেমে গেল। ‘হ্যান্ড প্লাঞ্জার’ পদ্ধতিতে লাইন পরিবর্তন হল। ১৪ টি কামরা নিয়ে ফের চলা শুরু। কামরা ভর্তি কয়েকশো যাত্রীর নিরাপত্তায় মাত্র দুজন আরপিএফ কর্মী বালুরঘাট স্টেশন থেকে উঠেছিলেন। গোটা রাস্তায় আর তাদের দেখা গেল না। মল্লিকপুর, মালঞ্চা, রামপুর, গঙ্গারামপুর, বুনিয়াদপুর একের পর এক স্টেশন পেরিয়ে দৌলতপুর স্টেশন পার হতেই দিনের আলো ফুরিয়ে গেল। সন্ত্রস্ত হয়ে পড়লেন কামরার অধিকাংশ যাত্রী। এরপর থেকে ছিনতাইয়ের ভয় চেপে বসে তাঁদের। |
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলতে সংরক্ষিত কামরায় উঠতেই সন্দেহের চাউনি। বালুরঘাটের চকভৃগুর ব্যবসায়ী নব সরকার বলেন, “কয়েক মাস আগে এক মহিলার সোনার হার ছিনিয়ে চলন্ত ট্রেন থেকে লাফিয়ে পালায় এক দুষ্কৃতী। এই ধরনের বেশ কিছু ঘটনার পর বালুরঘাট স্টেশন থেকে দুজন আরপিএফ কনস্টেবল ওঠেন, কিন্তু গার্ডের কামরা থেকে তাদের বের হতে দেখা যায় না।” মালদহ স্টেশনের জিআরপি থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ সুজিত ঘোষ বলেন, “বালুরঘাট-একলাখি রেলপথ এলাকা এখনও জিআরপির অধীনে আসেনি। ওই পথে জেলা পুলিশের অধীন সংশ্লিষ্ট থানাগুলি আইনশৃঙ্খলা দেখে থাকেন। কুমেদপুর থেকে ফরাক্কা স্টেশন পর্যন্ত জিআরপি থানার অধীনে রয়েছে বলে সুজিতবাবু জানান। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেন, “দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়ার আগে বালুরঘাট স্টেশনে সাদা পোশাকের পুলিশ নজরদারি করে। মূলত আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়টি দেখা হয়। এর বাইরে যাত্রী সুরক্ষা ব্যবস্থা রেলের। ডিআরএম অরুণ শর্মার কথায়, “হিলি পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণ হলেই তবে একলাখি-বালুরঘাট লাইনে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালিং হবে। জিআরপির অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।” এখনও পর্যন্ত বালুরঘাট থেকে হিলি লাইনে রেলপথের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরুই হয়নি। বালুরঘাট থেকে সপ্তাহে তিনদিন ভোর ৫টায় চলে বালুরঘাট-চিৎপুর ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। রোজ চলে ভায়া মালদহ হয়ে কাটিহার পর্যন্ত ডিএমইউ ট্রেন এবং শিলিগুড়ির এনজেপি পর্যন্ত ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। শেষে বিকেলে চলে গৌড় লিঙ্ক ট্রেন। একটি বাতানুকুল-সহ মোট পাঁচটি কলকাতা যাওয়ার সংরক্ষিত কামরা। একটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। বাকি আটটি কামরা সাধারণ শ্রেণীর। দেখা গেল মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত কামরায় মহিলারা কেউ নেই। একসাথে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে তারা সাধারণ শ্রেণির প্যাসেঞ্জার কামরাগুলি ফাঁকা দেখেও সব স্টেশনেই ভিড়ে ঠাসা কামরায় যাত্রীদের উঠতে দেখা গেল। ব্যঙ্গ করে এক যাত্রী অনীত ধর বলেন, “প্রাণ-মাল নিজ দায়িত্ব নিয়েই আমাদের ঝুঁকির যাত্রা। সকালের ট্রেনগুলিতে নিরাপত্তার বালাই নেই।” |