মোট পরীক্ষার্থী ৪৮৯ জন। আর প্রশ্নপত্র এসেছে মাত্র ২৫টি। এই বিভ্রাটের জেরে রবিবার স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষাই দিতে পারলেন না মালদহ মহিলা কলেজের বাংলার (পাস) প্রায় পাঁচশো পরীক্ষার্থী। মাইকে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ দিন পরীক্ষা বাতিলের কথা ঘোষণা করা মাত্রই পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা এসএসসি-র উত্তরবঙ্গ দফতরে বিক্ষোভ দেখান।
বস্তুত, এই ঘটনাকে ঘিরে কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং এসএসসি কর্তৃপক্ষ তীব্র চাপান-উতোরে জড়িয়েছেন। পরীক্ষা বাতিলের জন্য এসএসসি কর্তৃপক্ষের ‘অপর্দাথতাকে’ দায়ী করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তাঁদের বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময় পরেও এসএসসি কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের ব্যবস্থা করতে পারেননি। শেষে কমিশনের পরামর্শ মেনেই তাঁরা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও এমন কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছেন কমিশনের (উত্তরাঞ্চল) চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহাব। ফলে, কোন পক্ষ ঠিক কথা বলছে, তা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে।
আবদুল ওয়াহাব বলেন, “পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা পরেই জানতে পারি, মালদহ মহিলা কলেজে বাংলার প্রশ্নপত্র কম পৌঁছেছে। তখনই বাইরে থেকে কিছু প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে ও বাকি প্রশ্নপত্রের ফোটোকপি করে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য মহিলা মহাবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। এ জন্য পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সময় বরাদ্দ করার কথাও বলা হয়। পরীক্ষা বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।” কমিশনের বিরুদ্ধে কেউ ‘চক্রান্ত’ করছে বলেও তাঁর ধারণা। |
মালদহ মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ চৈতালি চট্টরাজের পাল্টা দাবি, এ দিন সকাল সওয়া ১০টায় বাংলা প্রশ্নপত্র নিয়ে সমস্যার কথা তাঁরা এসএসসি-র (উত্তরাঞ্চল) চেয়ারম্যানকে জানান। অধ্যক্ষের ক্ষোভ, “তার পরেও চেয়ারম্যান এক বারের জন্য আমাদের সেন্টার পরিদর্শন করার সময় পেলেন না। প্রশ্নপত্র না পেয়ে পরীক্ষার্থীরা কলেজে ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করে। কমিশন নিজেদের অপদার্থতা ঢাকার জন্য আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চাইছে!”
ঠিক কী হয়েছিল এ দিন?
স্কুল সার্ভিস কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ মহিলা কলেজে এ দিন মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৯০ জন। তার মধ্যে ৪৮৯ জন পরীক্ষার্থী ছিলেন বাংলার (পাস)। এই বিভাগের পরীক্ষার্থী বিবেকানন্দ বিশ্বাস, বিপ্লব ঝা, অরিন্দম কুমাররা বলেন, “বেলা ১১টায় পরীক্ষা শুরু হয়েছিল। প্রথমার্ধের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরে দ্বিতীয়ার্ধের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও বাংলা প্রশ্নপত্র না দেওয়ায় অনেক পরীক্ষার্থী চেঁচামেচি শুরু করেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, প্রশ্নপত্র কম এসেছে। স্কুল সার্ভিস কমিশন দফতর থেকে প্রশ্নপত্র আসছে।” দুপুর ২টো বেজে যাওয়ার পরেও প্রশ্নপত্র বিলি না হওয়ায় পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। অধ্যক্ষের ঘরের সামনে জমায়েত হয়ে পরীক্ষার্থীরা চিৎকার করতে থাকেন।
অনেককে বলতে শোনা যায়, “এত বছর ধরে তো পরীক্ষা হয়েছে। কখনও এমন গোলমাল হয়নি।”
পরিস্থিতি বুঝে পৌনে ৩টে নাগাদ কলেজ কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা করেন, কমিশনের নির্দেশে বাংলা পরীক্ষা বাতিল হল। কবে পরীক্ষা হবে তা কমিশন সংবাদ মাধ্যমে জানিয়ে দেবে। ঘোষণার পরে ক্ষোভ আরও বাড়ে। পরীক্ষার্থীরা মালদহ শহরের মালঞ্চপল্লিতে স্কুল সার্ভিস কমিশনের অফিসে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। সৌভাগ্য দে, অনিমেষ রায়দের মতো পরীক্ষার্থীরই ক্ষোভ, “অনেক প্রস্তুতি আর আশা নিয়ে সবাই পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। পরীক্ষা তো হলই না, সারাটা দিন নষ্ট হল। এক বার কলেজে, এক বার কমিশনের অফিসে দৌড়ে বেড়াতে হয়েছে।” অনেক পরীক্ষার্থী এ দিন কমিশনের অফিসে চেয়ারম্যানকে বলেন, “আপনাদের গাফিলতির জন্যই আজ আমাদের ক্ষতি হয়ে গেল। এর দায় কে নেবে?” চেয়ারম্যান তাঁদের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত পুলিশ বিক্ষোভকারীদের হঠিয়ে দেয়।
কমিশন সূত্রে জানা যাচ্ছে, মহিলা কলেজে প্রশ্নপত্র কম গিয়েছে জানতে পেরে কর্তারা গাড়ি করে অন্য সেন্টার থেকে ৯০টি বাংলা প্রশ্নপত্র জোগাড় করেন। সেগুলি মহিলা কলেজে পাঠানোও হয়। পাশাপাশি প্রশ্নপত্র ফোটোকপি করার জন্য কাগজও পাঠানো হয়। তাতেও সমস্যা না মেটায় পরীক্ষা হয়নি।
কলেজে যখন গোলমাল চলছিল, তখন কমিশন তাদের পর্যবেক্ষককে তুলে নেয় বলে অভিযোগ করেছেন অধ্যক্ষ চৈতালিদেবী। তাঁর দাবি, “আসলে কমিশন কর্তৃপক্ষের সত্যি কথা বলার সাহস নেই। যখন কমিশন প্রশ্নপত্র পাঠাতে পারছে না, তখন আমাদের ফোন করে পরীক্ষার্থীদের মিষ্টির প্যাকেট দিয়ে আটকে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর এখন কমিশন আমাদেরই বদনাম করার চেষ্টা করছে!” এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আবদুল ওয়াহাব। |