হাসপাতালের শৌচাগারে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য দানা বাঁধছে। রবিবার বেলা ৪ টে নাগাদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে ঘটনাটি ঘটেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম চিন্ময় দাস (৩৫)। বাড়ি কদমতলার বিবেকানন্দপল্লিতে। গত কাল ফুসফুসের সংক্রমণ জনিত রোগে তাঁকে ভর্তি করানো হয়। এ দিন বিকেলে শৌচাগারে গিয়ে তিনি বের হচ্ছেন না দেখে অন্য রোগীর আত্মীয়রা ওয়ার্ডের স্বাস্থ্যকর্মীদের খবর দেন। কয়েকজন দেখেন শৌচাগারের দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে বসে শরীর এলিয়ে দিয়েছেন ওই ব্যক্তি। শৌচাগারে পড়ে গিয়ে তিনি মারা গিয়েছেন বলেও চাউর হয়ে যায়। স্বাস্থ্য কর্মীরা দ্রুত শৌচাগারে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে কোলে করে শয্যায় নিয়ে আসেন। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান তিনি মারা গিয়েছেন। ওই ঘটনার পরই ওয়ার্ডের রোগী এবং তাঁদের পরিবারের লোকদের একাংশ শৌচাগারের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের অভিযোগ, শৌচাগারটি আবর্জনা ফেলার জায়গায় পরিণত হয়েছে। মেঝে এতটাই পিছল যে পড়ে গিয়ে যে কোনও সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। দুর্গন্ধে শৌচাগারে ঢোকাই দায়। ঠিক মতো পরিষ্কার না-হওয়ায় দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। জলের কলের জায়গায় কয়েক মাসের আবর্জনা থিকথিক করছে। বিভিন্ন জায়গায় স্তূপীকৃত করে রাখা প্লাস্টিকের নোংরা ক্যারিব্যাগ এবং অন্যান্য আবর্জনা। হাসপাতালের সুপার সব্যসাচী দাস বলেন, “ওই রোগী শৌচাগারে গেলে তাঁর ‘স্ট্রোক’ হয়। সে কারণেই তিনি মারা গিয়েছেন। শৌচাগারে পড়ে যাননি।” চিন্ময়বাবুর কাকা দেবাশিস দাস, পিসি পূরবী সেনগুপ্তরা জানান, তাঁরাও খবর পান শৌচাগারে পড়ে গিয়ে তাঁদের রোগী জখম হয়ে মারা গিয়েছেন। পূরবীদেবী বলেন, “দ্রুত হাসপাতালে এসে খোঁজ খবর করে জানতে পারি চিন্ময় শৌচকার্য করতে গিয়েছিল। দীর্ঘক্ষণ না-বার হওয়ায় কয়েকজন রোগীর আত্মীয়রা গিয়ে দেখেন শৌচাগারের দেওয়ালে শরীর এলিয়ে বসে রয়েছেন। অনেকে বলছেন, শৌচাগারে সমস্যা হওয়ায় চিন্ময় নার্সদের চিৎকার করে ডেকেও ছিল। কেউ যাননি। ঠিক কী হয়েছে পরিষ্কার বুঝতে পারছি না। স্বাস্থ্যকর্মীরা পরে বাইরে নিয়ে আসেন। শৌচাগারের যা পরিস্থিতি তাতে পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।”
শৌচাগার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নয় কেন? এ ব্যাপারে সুপারের জবাব, শৌচাগার পরিষ্কার নেই কেন তা তিনি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। তবে কিছু সমস্যার কথা জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু। তাঁর যুক্তি, “ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত।” সকালে ওয়ার্ড পরিদর্শনের সময় শৌচাগার সাফ থাকে বলেই তিনি দাবি করেছেন। সাফাই কর্মীরা তাঁকে জানিয়েছেন বেশি ব্যবহার হওয়ায় সব সময় পরিষ্কার রাখতে গিয়ে তাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিনের আবর্জনা শৌচাগারে জমে রয়েছে কেন সে ব্যাপারে অবশ্য সদুত্তর মেলেনি। রোগীর আত্মীয়দের অভিজ্ঞতাও তিক্ত। ওই ওয়ার্ডে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয়া ঝর্ণা কর্মকার বলেন, “শৌচাগার না-নরক তা ব্যবহারকারীরাই জানেন। কখনই শৌচাগার পরিষ্কার থাকে না। রোগীরা গেলে বাড়ির লোকদের ভয়ে থাকতে হয়। মেঝেতে শ্যাওলার আস্তরণ পড়ে গিয়েছে। সে কোনও সময়ই বিপদ ঘটতে পারে।” গোপাল মাহাতো, রতন রায়দের মতো রোগীর আত্মীয়রা শৌচাগারের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। |