প্রচারে কথা-বলা পুতুল
সচেতন হয়ে ওঠো, বলছে রাজু
রাজুর ভারি দুঃখ। অনেক কম বয়েসেই বিয়ে হয়েছিল তার বাবা-মায়ের। কম বয়সেই মায়ের কোলে সে আসে। সময় মতো পোলিও-র টিকাও তাকে খাওয়ানো হয়নি। ফলে এখন তার দু’টি পা পোলিও আক্রান্ত। হাঁটতে পারে না।
রাজু তাই এখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে বাল্যবিবাহ বন্ধ করার জন্য প্রচার করছে। সময় মতো শিশুদের পোলিও-র টিকা দিতে বলছে। তার কথায়, “দেখছ তো আমার পায়ে পোলিও। তাই বড়দের কোলে চেপে ঘুরতে হচ্ছে। আমার বাবা-মায়ের মতো তোমরা আর ভুল করো না।”
রাজুকে দেখতে, তার কথা শুনতে ভিড় করছে ছোট ছেলে-মেয়ে থেকে বিভিন্ন বয়সের মহিলারা। আর এ ভাবেই রঘুনাথপুর মহকুমার তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর এবং সুসংহত শিশু বিকাশ দফতরের হয়ে প্রচারে নেমেছে কথা বলা পুতুল ‘রাজু’। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক শচীদুলাল দে রাজুকে নিয়ে রঘুনাথপুর মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন। তিনি বলেন, “কথা বলা পুতুল নিয়ে সমাজ সচেতনতার কাজে নেমে সত্যি বেশ ভাল লাগছে। ছোটরা তো বটেই, বড়দেরও বেশ মনে ধরেছে বুঝতে পারছি।” এর সঙ্গে রয়েছে এই জেলারই বিয়ে রোখা নাবালিকা রেখা কালিন্দী, সুনীতা মাহাতো ও আফসানা খাতুনদের নিয়ে তথ্যচিত্রের প্রদর্শন। বাড়ির অমতে গিয়ে এই নাবালিকারা কী ভাবে নিজেরাই বিয়ে আটকেছে, সেই লড়াইয়ের কথা শুনিয়েছে। এই লড়াইয়ের জন্য রাষ্ট্রপতি তাদের সংবর্ধনা দিচ্ছেন, এই ছবি দেখে অনেক মেয়ের হাতের মুঠো যেন শক্ত হয়ে উঠছে।
—নিজস্ব চিত্র।
রঘুনাথপুরের বাসিন্দা স্কুল পড়ুয়া তনুশ্রী পরামানিক, পূজা চক্রবর্তীরা বলছে, “বাল্য বিবাহের প্রতিবাদ করে আমাদের জেলার কয়েকজন মেয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন। তথ্যচিত্র দেখে বুঝতে পারছি কত লড়াই করতে হয়েছে তাদের। এই লড়াইয়ে আমরাও ওদের পাশে রয়েছি।”
“বস্তুত এটাই আমরা চেয়ে ছিলাম।” বলছিলেন রঘুনাথপুরের মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক দেবাশিস দত্ত। তিনি জানান, গত ৯ জুলাই থেকে রাজ্য জুড়ে নারী ও শিশু কল্যাণমূলক প্রচার অভিযান চলছে। গতানুগতিক বিভিন্ন বার্তা লেখা প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুন নিয়ে মিছিল করা, আলোচনা সভা করার বাইরে বেরিয়ে তাঁরা এ ভাবে আরও মনোগ্রাহী প্রচার করতে চেয়েছিলেন। ২০টি জায়গায় প্রচার করে ইতিমধ্যে তাঁরা অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছেন। একই সঙ্গে বাল্য বিবাহের সমস্যা, শিশুদের অপুষ্টি, সার্বিক স্বাস্থ্য সচেতনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে ক্যুইজ প্রতিযোগিতাও করা হচ্ছে। উত্তর দিতে পারলে রয়েছে পুরস্কারও।
গুরুগম্ভীর আলোচনার বদলে এই সহজ-সরল ‘প্যাকেজ’ দর্শকদের মনকে বেশি নাড়া দিয়েছে বলে দাবি করেছেন রঘুনাথপুর ১ ব্লকের সুসংহত শিশুবিকাশ প্রকল্প আধিকারিক অর্চনা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসন থেকে বিশেষ ব্যবস্থা করার পরেও রঘুনাথপুরের যে নতুনডি গ্রামের মহিলারা ভোট দিতে যান না, তাঁরাও এ বার এই অনুষ্ঠানে এসে রাজুর কথা শুনেছেন। ক্যুইজের জবাব দিয়েছেন। তবে এরফলে দুখী-রাজুদের সংখ্যা কমল কি না তার জবাব দেবে ভবিষ্যত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.