অনেকেই ভেবেছিলেন কার্শিয়াঙের পানিঘাটা কেন্দ্রে একটা ‘জবরদস্ত’ লড়াই হবে। কারণ, সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান রাজেন মুখিয়া। একদা জিএনএলএফের কাউন্সিলর রাজেনবাবুর এখনও এলাকায় প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি তিনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পরে তাঁর অনুগামীরা ভোটে লড়াইয়ের জন্য প্রচারও শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী প্রত্যাহারের কথা মৌখিক ভাবে ঘোষণা করায় ছবিটা পুরোপুরি বদলে গিয়েছে।
রবিবার পানিঘাটায় গিয়ে বুথে বুথে দেখা গেল শুধু গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার কর্মী-সমর্থকদের। একমাত্র তাঁদের প্রার্থীর নামই শোনা যাচ্ছে ভোট কেন্দ্রের সামনে। ভোট কেন্দ্রের তাদের দলের কোনও নেতা-কর্মী নেই। পোলিং এজেন্ট নেই। এমনকী তৃণমূল প্রার্থীরও কোনও হদিশ নেই। রাজেন মুখিয়ার মোবাইলের ফোনের সুইচ বন্ধ। তিনি কোথায় রয়েছেন, তার হদিস দলের কেউ দিতে পারলেন না। সব মিলিয়ে রবিবার গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এ কার্যত একতরফা ভোট হল পানিঘাটাতেও। দিনের শেষে পানিঘাটার একাধিক তৃণমূল সমর্থক অভিযোগ করলেন, পোলিং এজেন্ট না-দেওয়ায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে মোর্চা নেতাদের একাংশ মর্জিমাফিক কাজক করেছেন। মোর্চার তরফে অবশ্য ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। |
এ দিন সকালে পানিঘাটা কেন্দ্রের ইলা পাল চৌধুরী মেমোরিয়াল হাইস্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সকালেই ভোটারদের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। সেখানে দুটি বুথে ভোট হচ্ছে। বুথের থেকে কিছুটা দূরত্বে ক্যাম্প করে বসে রয়েছেন মোর্চার নেতা-সমর্থকরা। ভোটারদের সঙ্গে কথা বলছেন তাঁরা। তাঁদের কাছ থেকেই ভোটার স্লিপ নিয়ে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন ভোটাররা। পানিঘাটা কেন্দ্রের মোর্চা প্রার্থী চম্পা বিভার। ওই কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী রাজেন মুখিয়া। সেখানে তৃণমূলের কোনও পতাকা নেই। নেতা-কর্মীদের কাউকে খোঁজ করেও পাওয়া যায়নি। মোর্চার পোলিং এজেন্ট কমল ছেত্রী বলেন, “তৃণমূল তো প্রার্থী তুলে নিয়েছে। এখানে তো একজনই প্রার্থী রয়েছে। প্রচুর মানুষ আমাদের প্রার্থীকেই ভোট দিচ্ছেন।”
একই দৃশ্য সুকনা ফরেস্ট ভিলেজ প্রাথমিক স্কুলের ভোট কেন্দ্রে। কয়েকজন ভোটার জানান, তৃণমূলের কোনও কর্মীর সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি। এমনকী প্রার্থীর সঙ্গেও কোনও কথা হয়নি তাঁদের। ওই কেন্দ্রের ভোটার মোর্চার সুকনা শাখায় সভাপতি ধ্রুব ছেত্রী। তাঁর দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী তথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রার্থী তুলে নেওয়ার ঘোষণার পর থেকে তৃণমূল কর্মীদের আর কোথাও দেখা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই ভোট কেন্দ্রেও তৃণমূলের কেউ নেই। মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে আসছেন।” বেলগাছি চা বাগান, পানিঘাটা প্রাথমিক স্কুল, পানিঘাটা হাইস্কুল থেকে দার্জিলিং-এর ছোংটং ম্যারিবং, পোখরিবং চামুং, কালিম্পংয়ের গরুবাথান র্যালি সামথাং, বং দূরপিন সর্বত্র একই চিত্র।
এতদসত্ত্বেও ভোটারদের অনেকেই জিটিএ-এর মাধ্যমে উন্নয়ন হবে বলে আশায় বুক বেঁধেছেন। ঋতুরাজ ছেত্রী, সুজাতা ছেত্রীরা বলেন, “আমরা ভোট দিয়েছি। এবারে অন্তত পাহাড়ের উন্নতি শুরু হবে বলে আশা করছি। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবদিক থেকেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি। মুখ্যমন্ত্রী পাহাড়ের সঙ্গে থাকায় আমরা আশাবাদী।”
অবশ্য কার্শিয়াংয়ের সৌরিনী কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী রাজেশ ছেত্রী কয়েকটি বুথে পোলিং এজেন্টও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “তৃণমূলের অন্য প্রার্থীদের কথা আমি বলতে পারব না। আমি ভোটে দাঁড়িয়েছি। লড়াই করছি।” ডাবলিং-নিমবং কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী সঞ্চবীর সুব্বার সঙ্গে মোর্চার লড়াই হচ্ছে। ওই নির্দল প্রার্থী মোর্চার বহিস্কৃত নেতা। তাঁকে দল থেকে বহিস্কার করে দেওয়া হয়েছে। এক মোর্চা নেতার কথায়, “সঞ্চবীরের ওই এলাকায় প্রভাব রয়েছে। সব কয়টি বুথে পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।” |