সকাল থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অনেকেরই ‘উৎকণ্ঠা’ ছিল ৫০ শতাংশ ভোট পড়বে কি না। শেষ পর্যন্ত রবিবার প্রথম ‘গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ (জিটিএ) নির্বাচনের ১৭টি আসনে ভোট পড়েছে প্রায় ৭৩ শতাংশ। তাতে মোর্চা স্বস্তিতে। ‘নির্বিঘ্নে’ ভোট-গ্রহণ পর্ব মেটায় স্বস্তিতে পুলিশ-প্রশাসনও। মোর্চার পক্ষে ‘অস্বস্তি’র বলতে বিরোধী-শিবিরের কটাক্ষ, “দুপুর পর্যন্ত বহু বুথে ভোটারদের উপস্থিতি ‘নগণ্য’ হলেও শেষ পর্যন্ত ৭৩ শতাংশ ভোট পড়াটা স্বাভাবিক ঠেকছে না।”
১৯৮৮ সালে জিএনএলএফ প্রধান সুবাস ঘিসিং নেতৃত্বাধীন দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের প্রথম নির্বাচনে ভোট পড়েছিল প্রায় ৮০ শতাংশ। মোর্চার অন্দরের খবর, জিটিএ নির্বাচনের ভোটে সেই ফলের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলে ঘরে-বাইরে নানা জল্পনা দানা বাঁধবে বলে আশঙ্কা রয়েছে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের কিছু ঘনিষ্ঠ অনুগামীর। জিটিএ নির্বাচনে অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ ভোট না পড়লে মোর্চার জনপ্রিয়তা নিয়ে বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলতে পারে বলেও দলীয় বৈঠকে মোর্চার অনেক নেতা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এই পরিস্থিতিতে এ দিনের ভোটে সকাল থেকে বুথমুখী ভোটারদের সংখ্যা খুব বেশি না হওয়ায় (দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩০ শতাংশের কাছাকাছি) এক সময়ে মোর্চার কিছু শীর্ষ নেতারা আশঙ্কা করতে থাকেন, শেষ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভোটও হয়তো পড়বে না। |
সে জন্যই মোর্চা নেতারা পাহাড়বাসীকে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে নিয়ে যেতে ‘আসরে নামেন’ বলে অভিযোগ মোর্চা বিরোধী শিবিরের।
গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতির কথায়, “ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভিতরে ও বাইরে ছিলেন শুধুই মোর্চার নেতা-কর্মীরা। কে, ক’টা ভোট দিচ্ছেন তা দেখার কিংবা আপত্তি করার মতো কেউ না থাকলে যা হতে পারে, মনে হয় তা-ই হয়েছে।” একাধিক বুথে ঘুরেছেন বলে দাবি করেছেন সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রী। তাঁর অভিযোগ, “কোথাও ভোটারদের লাইন দেখা যায়নি। তা সত্ত্বেও এত ভোট পড়ল! পাহাড়বাসী তাঁদের পাশে রয়েছেন, এটা দেখাতে মোর্চা নেতারা যা করণীয়, সেটাই করেছেন।” প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্যের টিপ্পনী, “মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময়ে যেখানে প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠককে পুলিশের সামনে মারধর করা হয়, সেখানে ভোটের দিন কী হতে পারে, সকলেই বোঝেন!”
মোর্চা নেতাদের একাংশের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে সকাল থেকে ঘনঘন জেলাশাসকের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন পাহাড়ের তৃণমূল নেতাদের অনেকেও। তাঁদের অভিযোগ, মোর্চার লোকজন কোথাও বুথ দখল করেছে, কোথাও হুমকি দিয়েছে। তৃণমূলের তরফে পাহাড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, “সমস্ত অভিযোগ একত্রিত করে জেলা নেতৃত্বকে জমা দেব। আপাতত এর বেশি কিছু বলছি না।”
সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দিয়ে মোর্চার প্রচার সচিব তথা কালিম্পংয়ের বিধায়ক হরকাবাহাদুর ছেত্রী অবশ্য বলেন, “সাধারণ মানুষ জিটিএ-কে স্বাগত জানিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছেন। তাই ভোট দিতে মানুষের ঢল নেমেছে। তাতে হতাশ হয়ে বিরোধী দলগুলি ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তুলে নিজেদের মুখরক্ষার চেষ্টা করছে।” পাশাপাশি, মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং অভিযোগ করেন, “তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন। তার পরেও কার্শিয়াঙের সৈরিনি কেন্দ্রে এক তৃণমূল প্রার্থী কিছু পোলিং এজেন্ট দিয়েছেন। এটা কী করে হল?”
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “এটা দোষারোপের সময় নয়। পাহাড়ের সার্বিক উন্নয়নে গতি আনতে সকলের সামিল হওয়া জরুরি।”
দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জিটিএ-র নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেছেন, “প্রায় ৭৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। সকাল থেকে ভোট নিয়ে অনেকে অভিযোগ এসেছে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পর্যবেক্ষকরা গিয়েছেন। কিন্তু, দেখা গিয়েছে অভিযোগগুলো ঠিক নয়।” |