জলাজমি ও পুকুর ভরাট থেকে দলীয় কর্মীদের দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকী, পুকুর ও জলাজমি ভরাট বা সিন্ডিকেট ব্যবসায় দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশে কোনও কাজ হয়নি বলে দাবি করে দক্ষিণ শহরতলিতে এ বার ‘অবৈধ’ পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথে সিপিএম।
সিপিএমের অভিযোগ, শাসক দল তৃণমূলের নেতাদের মদতেই ‘অবৈধ’ ভাবে জলাজমি ভরাট হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী তথা দলনেত্রীর ‘হুঁশিয়ারিতে’ও তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সংযত হননি। ই এম বাইপাসের লাগোয়া এলাকা-সহ দক্ষিণ শহরতলির বিভিন্ন অঞ্চলে অবাধে জলাজমি ও পুকুর ভরাট করা হচ্ছে বলে সিপিএমের অভিযোগ। কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দপুরে সম্প্রতি এক কনভেনশনে জলা ও পুকুর ভরাট জাতীয় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কনভেনশনে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী ও প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, ওই এলাকা কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত হলেও তা দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের আওতায়।
পুলিশ ও ভূমি দফতরের একাংশের যোগসাজসে বাইপাস সংলগ্ন এলাকায় ‘অবৈধ’ ভাবে একের পর এক জলাজমি ভরাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। এর ফলে প্রাকৃতিক ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা নেতৃত্বের বক্তব্য, শাসক দলের ‘মদতে’ প্রোমোটারেরা শুধু জলাজমি-পুকুর নয়, মেছো ভেড়িও জোর করে দখল করছে। দখল নেওয়ার পর তা মাটি ফেলে বুজিয়ে দিচ্ছে। তার পরে ওই জমি বিক্রি করে দিচ্ছে। জমি-আইনের কোনও তোয়াক্কা না-করে মাটি ফেলে ভেড়ি বুজিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে জমির চরিত্রের ‘ভুয়ো কাগজ’ তৈরি করে জলাজমি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ। সোনারপুর, বারুইপুর, কসবা, তিলজলা, বেহালা, ঠাকুরপুকুর বিষ্ণুপুরের মতো দক্ষিণ শহরতলির ঘিঞ্জি এলাকাতেও একই ধরনের কার্যকলাপ চলছে। শাসক দলের ‘মদতে’ পুরসভা ও পঞ্চায়েত, দু’ধরনের এলাকাতেই জলা ভরাট চলছে বলে সিপিএমের অভিযোগ।
কলকাতার মেয়র তথা তৃণমূলের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি শোভন চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই পুকুর বোজানো বন্ধ করে দেওয়া হবে। শুধু কলকাতা পুরসভা এলাকা নয়, দক্ষিণ শহরতলি ও পঞ্চায়েত এলাকাতেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিপিএম বিষয়টিকে ‘নাগরিক সমস্যা’ হিসাবেই তুলে ধরতে তাইছে। তাদের বক্তব্য, ঘিঞ্জি এলাকায় সব পুকুর ভরাট হয়ে গেলে ‘বিপজ্জনক পরিস্থিতি’র সৃষ্টি হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এলাকায় কোনও বড় আগুন লাগলে দমকলের কিছুই করার থাকবে না! সব পুকুর ভরাট হলে জল পাওয়া যাবে না!” দলের জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “অবৈধ ভাবে পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করা হবে। পুকুর ও জলা ভরাটের ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক বাস্তব পরিস্থিতি প্রশাসনের কাছে তুলে ধরা হবে।”
সম্প্রতি পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় কত পুকুর ও জলাজমি ‘অবৈধ’ ভাবে বোজানো হয়েছে, তার একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রের খবর। ভূমি সংস্কার দফতরের এক শ্রেণির আধিকারিকদের যোগসাজশে জমির ‘ভুয়ো পরচা’ তৈরি করে ওই সব পুকুর বোজানো হয়েছে বলে বিরোধী দলের অভিযোগ। কী ভাবে ওই পুকুর ও জলাজমির ‘বাস্তবিক চরিত্র’ বদল করা হয়েছে, সেই বিষয়টির দিকে প্রশাসনের নজর ঘোরাতে আন্দোলনের পথে যেতে চায় তারা।
দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ২০০৮ সালে তৃণমূল পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসেছে। জিতেছে কিছু পুরসভাও। কলকাতা পুরসভাও এখন তাদের হাতে। এই সময়েই বিভিন্ন এলাকায় কী ভাবে পুকুর ও জলাজমি ভরাটের ‘হিড়িক’ পড়ে গিয়েছে, তা-ই আন্দোলনের মাধ্যমে সামনে এনে ফায়দা তুলতে চাইছে সিপিএম। |