তিনটি জেলা মিলিয়ে মণিপুরে তিরিশটি তৈলকূপের সন্ধান মিলেছে। আগামী চার বছর ধরে নয়ডার জুবিল্যান্ট অয়েল অ্যান্ড গ্যাস প্রাইভেট লিমিটেড সেখানে তেল উত্তোলনের কাজ করবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে, রাজ্যের মাটির তলায়, ৫০০০ বিলিয়ন কিউবিক ফুট তেলের ভাণ্ডার রয়েছে।
কিন্তু ইতিমধ্যেই তেল উত্তোলনের বিরুদ্ধে রাজ্যের পরিবেশপ্রেমী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলি যৌথ মঞ্চ গড়ে আন্দোলনে নেমেছে। পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র পাওয়ায় ক্ষেত্রেও সমস্যায় পড়বে রাজ্য সরকার। পরিস্থিতি সামলাতে আগামী ৩০ জুলাই প্রথম পর্বের গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে। এর পর ৮ অগস্ট ও ১৭ অগস্ট গণশুনানি করা হবে।
২০১০ সালে রাজ্যে তেল অনুসন্ধানের কাজ শুরু হয়েছিল। ৩০টি স্থানে তেল মেলার পাশাপাশি তেল উত্তোলনের আগে এনভায়রনমেন্ট ইমপ্যাক্ট রিপোর্ট তৈরি করার জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। রিপোর্টটি সম্প্রতি পেশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে প্রতিটি তৈলকূপের আশপাশে ৭ হেক্টর এলাকা প্রয়োজন হবে। প্রাথমিক পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ৪০ কোটি টাকা খরচ ধার্য্য করা হয়েছে। প্রতিটি কূপের গড় গভীরতা হবে আড়াই থেকে চার হাজার মিটার। কূপ প্রতি সঞ্চিত অপরিশোধিত তেলের পরিমাণ, কূপ খননের পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে। যে কূপগুলিতে পর্যাপ্ত তেল মিলবে না, সেগুলি বন্ধ করে দেওয়া হবে। প্রতি তৈলকূপের জন্য ৬৭৫০ কিলোলিটার জল ব্যবহৃত হওয়ার কথা। খননের সময় প্রতিটি কূপ থেকে প্রতিদিন ৪১ কিউবিক মিটার জল বের হবে, যাকে নানা ভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। খননের সময়, তেলের বিস্ফোরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল বের হওয়া সংক্রান্ত দূষণগুলি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে তেল উত্তোলন চুক্তি ও বেসরকারি সংস্থার হাতে তৈল কূপের ভার তুলে দেওয়া নিয়ে রাজ্যের পরিবেশবিদরা ক্ষুব্ধ। পরিবেশবিদ রাম ওয়াংখেইরাকপাম বলেন, “চুক্তিপত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নেই। তেল খননের পরে বর্জ্য কে সাফ করবে, তেল বেরিয়ে এলে তা সামলানোর দায়িত্ব কার, প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ কে দেবে-- তা নিয়ে চুক্তিতে পরিষ্কার করে কিছুই উল্লেখ করা নেই।” মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আর কে রঞ্জন বলেন, “তৈলকূপ সংলগ্ন এলাকাগুলির প্রাকৃতিক সমীক্ষায় যে প্রাণী ও উদ্ভিদগুলির নাম উল্লিখিত হয়েছে তা অসম্পূর্ণ। এমনকী তালিকায় মনিটর লিজার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সরীসৃপের নামই নেই!” রঞ্জন নিজে বরাক উপত্যকা ও খনিজ তেল সমৃদ্ধ এলাকাগুলির উপরে গবেষণা চালিয়ে দেখিয়েছেন, এই এলাকায় তৈলকূপ গড়া হলে বহু প্রাণী ও উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে পড়বে। সমগ্র এলাকায় পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।
ইআই রিপোর্ট-এ বলা হয়েছে, তৈল খননের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপরে দীর্ঘকালীন ক্ষতির সম্ভাবনা বেশ বেশি। দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের বড় ক্ষতি ও প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকছেই। দূষণের ক্ষেত্রেও, তৈলকূপ এলাকাগুলি জাতীয় সীমা পার করে যাবে। তালিকায় ২৫ ধরণের সম্ভাব্য বিপর্যয়ের উল্লেখ রয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পরে তেল উত্তোলন বন্ধ করার দাবিতে যৌথ প্রতিবাদ মঞ্চ গড়া হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন রাজ্যে তৈলকূপ খননের বিরোধিতা করে, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করছে। পরিবেশপ্রেমী সংগঠনগুলির প্রতিবাদ দিল্লি পৌঁছলে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রকের ছাড়পত্র মিলতে সমস্যা হবে বলে রাজ্য সরকারের ধারণা। তাই যে তিনটি জেলা জুড়ে তৈল উত্তোলন হতে চলেছে, সেই চূড়াচাঁদপুর, তামেংলং ও জিরিবাম জেলার সব সংগঠন, গ্রাম প্রধান ও রাজ্যের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জিরিবাম টাউন হলে গণশুনানির আয়োজন করেছে রাজ্য সরকার। |