বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে জড়ো হয়েছিল তারা। ঠিক হয়েছিল কিছু ক্ষণ হইহই করে বন্ধুর বাড়িতে কাটানো হবে। কিন্তু এই ‘দুঃসাহসের’ প্রতিদানে ভাঙচুর হল বাড়ির আসবাবপাত্র। বেধড়ক মারও খেতে হল এক দল কলেজ পড়ুয়াকে।
গত কাল সন্ধ্যায় ম্যাঙ্গালোর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পারিইল্লুতে হিন্দু জাগরণ বেদিক নামে এক উগ্রবাদী গোষ্ঠীর সদস্যরা এই ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ওই গোষ্ঠীর সদস্যদের দাবি, জন্মদিনের পার্টির নাম করে কিছু ছেলেমেয়ে ওই বাড়িতে রেভ পার্টি চালাচ্ছিল। রাজ্যের সমাজ আর সংস্কৃতির অবক্ষয় ঠেকাতে বাধ্য হয়েই এই ভাঙচুর বলে গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়িতে রেভ পার্টি চলছিল এমন কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় একটি টিভি চ্যানেল এই ভাঙচুরের ছবি তুলে তা সম্প্রচার করার পরেই ঘটনাটির কথা জানাজানি হয়। তবে ভিডিওটি সম্প্রচার করা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। পুলিশের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল বিপিন গোপালকৃষ্ণ অভিযোগ করেন, “ওই ভিডিওটি সম্প্রচারের বদলে টিভি সংস্থাটির পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত ছিল।”
ওই চ্যানেলের সাংবাদিকরা হঠাৎ সেই সময়ে ঘটনাস্থলে কেন গেলেন, তা-ও জানার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি অসমে একটি মেয়ের শ্লীলতাহানির দৃশ্য এক টিভি চ্যানেলে প্রচার করা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ওই সাংবাদিক ও চ্যানেলের কর্ণধার। এ বারেও ম্যাঙ্গালোরে ছাত্রীদের হেনস্থার ছবি চ্যানেলে প্রচারের জন্য বিভিন্ন নারী অধিকার রক্ষা সংস্থার তরফে কড়া সমালোচনা করা হয়েছে।
বিজেপি শাসিত রাজ্যে ‘নীতি পুলিশের’ এই হামলার ঘটনায় বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমালোচনার মুখে পড়ে স্বভাবতই যথেষ্ট অস্বস্তিতে বিজেপি সরকার।
কর্নাটক প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রধান জি পরমেশ্বর ঘটনার সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। তাঁর অভিযোগ, কর্ণাটক সরকার এই উগ্রবাদী গোষ্ঠীদের ঠেকাতে ব্যর্থ। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী জগদীশ সেত্তার উপমুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে ঘটনাস্থলে যান গোপালকৃষ্ণ। কালকের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত হিন্দু জাগরণ বেদিকের আট সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে সন্ধ্যায় সেত্তার বলেন, “সংস্কৃতি রক্ষার নাম করে এই ঘটনা মেনে নেওয়া যায় না।” মেয়েদের উপর এ রকম অত্যাচার অমার্জনীয় এবং বর্বরোচিত অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন উপমুখ্যমন্ত্রী এ অশোক।
গোপালকৃষ্ণ জানিয়েছেন, বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে ১৩ জন ওই বাড়িতে জড়ো হয়েছিল। সবাই কলেজের ছাত্রছাত্রী। হঠাৎই ১৫-২০ জন লাঠি নিয়ে ওই বাড়িতে চড়াও হয়।
কেন পার্টি হচ্ছে তা জানতে চেয়ে ছাত্রছাত্রীদের হেনস্থাও করে তারা। এর পরেই বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর করতে থাকে। চ্যানেলে ভিডিওটি সম্প্রচারের পর খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ছাত্রছাত্রীদের উদ্ধার করতে গেলে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে বাধা দেয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে লাঠিচার্জও করতে হয়। তবে এই হেনস্থার ঘটনাটিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে দাবি করেছেন গোপালকৃষ্ণ। যে টিভি চ্যানেলে ভিডিওটি সম্প্রচার করা হয়েছে তা পরীক্ষা করে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে বলেও জানান তিনি। যদিও এখনও পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের তরফে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। |