ছুরির পরে ক্ষুর।
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি পলিটেকনিক কলেজে দিন কয়েক আগেই ছুরিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছিলেন অন্তত ছ’জন। এ বার ওই কলেজের ছাত্রের রক্ত ঝরল ক্ষুরের আঘাতে।
শুক্রবার রাতে কলেজ-হস্টেলের সামনেই রিকশা থেকে নামিয়ে এক ছাত্রকে ক্রমান্বয়ে ক্ষুরের আঘাতে রক্তাক্ত করে দুষ্কৃতীরা। অভিজিৎ চৌধুরী নামে ওই ছাত্রকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা জানান, ওই ছাত্রের হাতে ও কাঁধে বেশ কয়েক জায়গায় গভীর ক্ষত হয়েছে।
ইলেকট্রনিক্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অভিজিৎ একটি মেসে থাকেন। বুধবারের ঘটনায় ছুরিকাহত হয়েছিলেন তাঁর সহপাঠী কমলেশ বিশ্বাস। শুক্রবার শিলিগুড়ির নার্সিংহোম থেকে তাঁকে হস্টেলে ফিরিয়ে আনা হয়। কমলেশকে দেখতেই নিউটাউন পাড়ার মেস থেকে রিকশায় হস্টেলে যাচ্ছিলেন অভিজিৎ। অভিযোগ, সে সময়েই কলেজ লাগোয়া গোশালা মোড়ে চার বহিরাগত যুবক অভিজিৎকে রিকশা থেকে নামিয়ে ক্ষুর মারে।
কেন তিনি আক্রান্ত হলেন?
ছাত্র পরিষদের সক্রিয় সদস্য এবং ওই কলেজের ছাত্র সংসদের সহকারী সাংস্কৃতিক সম্পাদক অভিজিতের অভিযোগ, কলেজের বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ টাকার কিছু অংশ তিনি সংগঠনের এক নেতাকে দিতে আস্বীকার করেছিলেন। তারই ‘শাস্তি’ পেতে হয়েছে তাঁকে। ওই ছাত্রের দাবি, “প্রদীপ্ত দাস নামে ছাত্র সংসদের ওই নেতাকে টাকাটা দিতে রাজি হইনি আমি। তার জেরেই আমার উপরে হামলা করা হয়েছে।” অভিযুক্ত প্রদীপ্ত অবশ্য বলছেন, “আমার বিরুদ্ধ-গোষ্ঠীর লোকজন আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যে অভিযোগ করছে।”
কলেজ সূত্রের দাবি, গত বুধবার রাতে ছাত্র সংসদের দুই গোষ্ঠীর বিবাদের জেরেই ওই কলেজে ছুরির আঘাতে জখম হন ৬ জন। এ বার ক্ষুর-কাণ্ডের পরে স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভিভাবকদের একাংশের জিজ্ঞাসা, এর পরে কি ওই কলেজে বোমা-বন্দুকের শাসনই কায়েম হতে চলেছে? কলেজে এমন অস্ত্রশস্ত্র আসছেই বা কোথা থেকে, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও।
কলেজের ছাত্র সংসদের সম্পাদক সবুজ বিশ্বাস বলেন, “যা ঘটে চলেছে তা আতঙ্কিত হয়ে পড়ার মতোই। ছাত্রেরা ভয়ে কলেজে থেকে বেরোতেই চাইছেন না।” কলেজের অধ্যক্ষ শান্তনুনন্দন মৈত্র অবশ্য জানিয়েছেন, পুলিশকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আপাতত হস্টেলের ছাত্রদের বাইরে বেরোতেও নিষেধ করা হয়েছে।
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার সুগত সেন আজ বলেন, “বুধবারের ঘটনায় ১২ জন গ্রেফতার হয়েছে। তবে শুক্রবারের ঘটনাটি পৃথক। জখম ছাত্রের অভিযোগের ভিত্তিতে কয়েকজনকে খোঁজা হচ্ছে।” |