কেউ বলছেন ভোটের নামে নাটক। আবার কারও মতে, স্রেফ ‘নিয়ম-রক্ষা’র ভোট’। সরকারি সূত্র বলছে, আজ, রবিবার দার্জিলিং পাহাড়ে সেই গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ)-এর ১৭টি আসনে ভোট বাবদ অন্তত দেড় কোটি খরচ হতে চলেছে। অথচ ভোটের আসরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিরুদ্ধে মাত্র একটি আসনে এক জন নির্দল প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। ওই কটি আসনে মোর্চার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ১৭ জন তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)-এ দেখা যাবে। তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার না-করলেও তাঁদের সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন খোদ দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
ভরা বর্ষার দার্জিলিঙে রোজই কোথাও না কোথাও ধস নামার খবর পাচ্ছে প্রশাসন। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ভোটের কাজে ব্যবহারের জন্য পুলিশ-প্রশাসনকে অনেক বড় মাপের দামি গাড়ি ভাড়া করতে হয়েছে। ১৭টি আসনের ২৯২টি পোলিং বুথে ভোটারদের দাঁড়ানোর জন্য ‘রেন শেড’ করতে হয়েছে। বিধি মেনে প্রতি বুথে অন্তত ৪ জন করে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানকে মোতায়েন করা হচ্ছে। থাকছে পর্যাপ্ত পুলিশও। কলকাতা থেকে প্রতিটি মহকুমার জন্য দু’জন করে পর্যবেক্ষককে আনা হয়েছে। তা ছাড়া রয়েছে ভোটকর্মীদের বিশেষ ভাতা, ইভিএম আনা-নেওয়া, স্ট্রং-রুম, গণনা কেন্দ্র তৈরির খরচও।
দার্জিলিঙের জেলাশাসক তথা জিটিএ-র নির্বাচন আধিকারিক সৌমিত্র মোহন বলেন, “একটি আসনেও যদি দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকেন, তা হলে ভোট প্রক্রিয়া বিধি মেনে সম্পূর্ণ করতেই হবে। তবে অধিকাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা জেতায় খরচের বহর কিছুটা হলেও কমেছে।” |
তবে আয়োজনে ত্রুটি না-থাকলেও ভোট নিয়ে পাহাড়ে কোনও মাতামাতি নেই। শনিবার ভোটের ঠিক আগের দিন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং, প্রায় সর্বত্রই হাটে-বাজারে একই নিরুত্তাপ মুখ। ম্যাল চৌরাস্তায় যাঁরা রোজ বিকেলে হাঁটেন সেই প্রবীণ প্রমীলা তামাং, সুখবীর শর্মা কিংবা টাট্টু ঘোড়ার মালিক তেজেন থাপারা রসিকতার সুরে বললেন, “ভোটের নামে নাটক হচ্ছে। কী বলব! নিয়ম রক্ষার জন্য কেউ কেউ হয়তো ভোট দিতে যাবেন।”
দার্জিলিং পাহাড়ের সিপিএম নেতা কে বি ওয়াতার, সমন পাঠক-সহ অনেকেরই বক্তব্য, “আমরা যেখানে পাহাড়ের পরিস্থিতি বুঝে প্রার্থীদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছি, সেখানে তৃণমূল কংগ্রেসও তা করলে প্রায় দেড় কোটি টাকা খরচ এড়ানো যেত।”
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “মোর্চা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দিতে চায় না। হুমকি-সন্ত্রাসের জেরে আমরা প্রার্থী প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছি। ২১ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা না-করে গুরুঙ্গদের পুরোপুরি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিটিএ-র ভার তুলে দিতে পারত তৃণমূল।”
তৃণমূলের অন্দরের খবর, প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্ব পাহাড়ের সব প্রার্থীকে নিয়ে কলকাতায় বৈঠক করে জানিয়ে দেন, সব আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মোর্চা জিতলে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে বলে বিরোধীদের প্রচার ভিন্ন মাত্রা পাবে। দলের দার্জিলিং জেলার একাধিক নেতা জানান, সব দিক মাথায় রেখেই ২১ জুলাই কলকাতায় দলের শহিদ সমাবেশের মঞ্চে হরকাবাহাদুর ছেত্রীকে হাজির করিয়ে তাঁর সামনে দলের প্রার্থীদের জিটিএ ভোট থেকে প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেন তৃণমূল নেত্রী।
তৃণমূল কংগ্রেসের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, “যাঁরা দিনের পর দিন সুবাস ঘিসিংকে মনোনীত চেয়ারম্যান হিসেবে রেখেছেন, সেই বামেদের জিটিএ ভোট নিয়ে কথা বলার এক্তিয়ার আছে বলে পাহাড়বাসী মনে করেন না।” |