আগামী মঙ্গলবারের ধর্মঘট থেকে সরে এলেন বাস মালিকেরা।
শনিবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের সঙ্গে বৈঠকের পরে ওই সিদ্ধান্ত জানান তাঁরা। ধর্মঘট থেকে সরে আসায় বাস মালিকদের দু’টি সংগঠনকে অভিনন্দন জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিটু অবশ্য তাদের পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক বহাল রেখেছে। তবে দুই বাম শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে ধর্মঘট নিয়ে ‘ভিন্ন’ প্রতিক্রিয়া, সরকারের কঠোর মনোভাব এবং বাস মালিকরা ধর্মঘট থেকে সরে আসায় কিছুটা ‘ফাঁপরে’ পড়েছে তারা।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমাদের রাজ্যের এতটাই বদনাম হয়েছে, যে কেউ এখানে আসতে ভয় পান। বলেন, বাবা! ওখানে তো রোজ বন্ধ হয়! আমরা যখন রাজ্যের এই বদনাম ঘোচাতে চলেছি, তখন ষড়যন্ত্র করে আমাদের কাজকর্ম যাতে আটকে যায়, সে জন্য এক বার বন্ধ, এক বার পরিবহণ ধর্মঘট ডাকা হচ্ছে। ধর্মঘট করে রাজ্যের অগ্রগতি আটকে দেওয়া আমরা বরদাস্ত করব না।”
এ দিন পরিবহণমন্ত্রী সিটুকে হুমকি দিয়ে বলেন, “বাস মালিকদের কাঁধে বন্দুক রেখে সিটু গুলি করতে চাইছে। বাস ভাঙচুর হলে বা এক জন পরিবহণকর্মীর গায়ে হাত পড়লেও সরকার চুপ করে থাকবে না।” সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায় যার পাল্টা বলেছেন, “মালিকেরা তো বাস চালান না। চালান শ্রমিকরা। সরকার কী ভাবে ধর্মঘটের মোকাবিলা করে, আমরাও দেখব।”
সিটুর ‘সমস্যা’ বাড়িয়ে এ দিনই দুই বাম শ্রমিক সংগঠন আরএসপি-র ইউটিইউসি এবং সিপিআইয়ের এআইটিইউসি জানিয়ে দিয়েছে, তারা ওই ধর্মঘটে নেই। ‘মুখরক্ষা’য় সিটু আপাতত চাইছে, বাস মালিকদের সংগঠনের মতো সরকার শ্রমিকদের সঙ্গেও আলোচনা করুক। সেখানে ‘সন্তোষজনক’ সমাধান হলে তারা ধর্মঘট তুলে নেবে। শনিবার সুভাষবাবু বলেন, “পরিবহণমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে পারলে শ্রমিকদের সঙ্গে কেন আলোচনায় বসবেন না?” সিটুর তরফে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল রোড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ফেডারেশন’ এই ধর্মঘট ডেকেছে। সুভাষবাবু তার রাজ্য সম্পাদক।
তবে মুখ্যমন্ত্রী ধর্মঘটের ব্যাপারে যে রকম কঠোর মনোভাব নিয়েছেন, তাতে সিটু-সরকার বৈঠকের সম্ভাবনা কম। সে ক্ষেত্রে কী হবে? সুভাষবাবুর জবাব, “পরিবহণ শ্রমিকরা ধর্মঘট করবেন।” সেই পরিস্থিতিতে যে ধর্মঘট তেমন ‘সফল’ হবে না, সিটু নেতারা একান্তে তা স্বীকার করছেন।
এ দিনের বৈঠকে পরিবহণমন্ত্রী বাস মালিকদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং ধর্মঘট থেকে সরে আসার অনুরোধ করেন। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাত্রী সাধারণের অসুবিধার কথা চিন্তা করে ও সরকারি আশ্বাসকে মর্যাদা দিয়ে আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করছি।”
পরিবহণ পরিষেবার উন্নতি ঘটাতে এ দিনই দুপুরে তিনটি রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও বিভাগীয় আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গঠিত মন্ত্রিগোষ্ঠী। পরে পরিবহণমন্ত্রী বলেন, “বেতনের জন্য কর্মীদের তালিকা পাঠাতে মাসের ১০-১২ তারিখ করে ফেলে নিগমগুলি। অনেক সময় সেগুলো ঠিকঠাকও থাকে না। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ৩ তারিখের মধ্যে ওই তালিকা পাঠাতে হবে। যাতে ১০ তারিখের মধ্যে বেতন মিটিয়ে দেওয়া যায়।’’ পরিবহণ দফতরেরই একাংশের প্রশ্ন, এখনও জুন মাসের বেতন হয়নি। তা হলে মাসের প্রথমে তালিকা পাঠিয়ে লাভ কী? অন্য একাংশের মতে, সিটুর ডাকা ধর্মঘট ‘ব্যর্থ’ করতে কর্মীদের হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত বেতন মেটানোর আশ্বাস দিয়ে রাখল সরকার।
ধর্মঘটে তাঁরা সামিল হচ্ছেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন মিনিবাস মালিকেরা। ট্যাক্সি মালিকদের একাধিক সংগঠন মঙ্গলবারের ধর্মঘটে অংশ না নিলেও ‘সিটু অনুমোদিত’ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্যাক্সি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সহ-সভাপতি প্রমোদ ঝা বলেন, “কলকাতা এবং সংলগ্ন জেলাগুলিতে আমাদের সদস্যরা ওই দিন ট্যাক্সি চালাবেন না।” |