পুরুলিয়া জেলা জুড়ে স্যালাইনের আকাল চলছে। ফলে জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন। স্যালাইনের ঘাটতির কথা মেনে নিয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও। তাঁদের আশ্বাস, অবিলম্বে এই সংকট মেটানোর চেষ্টা চলছে।
পুরুলিয়ায় সদর হাসপাতাল ও রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতাল ছাড়াও জেলার ২০টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ৫৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া জেলায় প্রতি মাসে গড়ে ২৫-৩০ হাজার ইউনিট স্যালাইনের প্রয়োজন। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা জানান, প্রতি তিন মাস অন্তর চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও স্যালাইনের দাবি-তালিকা জেলা স্বাস্থ্য দফতরে তাঁরা পাঠান। ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর অথাৎ ডিআরএস থেকে তা যোগান দেওয়া হয়। কিন্তু এখন স্যালাইন যোগানের শৃঙ্খলায় সমস্যা দেখা দিয়েছে।
চিকিৎসকদের মতে, কিছু রোগীকে কঠিন খাবারের পরিবর্তে স্যালাইন দিতে হয়। ডায়েরিয়া বা পেট খারাপে আক্রান্তদেরও স্যালাইন দেওয়া হয়। প্রসবের আগে-পরে প্রসূতিদের স্যালাইন দেওয়াও প্রায় বাধ্যতামূলক। কিন্তু দুই ধরনের স্যালাইনের ঘাটতি চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে। মানবাজারের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সুরজিৎ সিং হাঁসদা বলেন, “স্যালাইনের সরবরাহ অমিল থাকায় সম্প্রতি আমাদের বাইরে থেকে ৫০০ বোতল স্যালাইন কিনতে হয়েছে।” পুঞ্চা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কিছু দিন আগে ভর্তি থাকা গেনিবালা ধীবর, অর্চনা গোপ, পানমনি বাস্কেরা শনিবার বলেন, “ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে আমরা ভর্তি হয়েছি। ডাক্তারবাবুরা জানালেন হাসপাতালে স্যালাইন নেই। বাধ্য হয়ে বাজার থেকে স্যালাইন কিনতে হয়েছে। আমরা গরীব মানুষ স্যালাইন কেনার টাকা কোথায় পাব। পড়শির কাছে টাকা ধার করে স্যালাইন কিনতে হয়েছে।” পুঞ্চার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেশ কিস্কু বলেন, “বিশেষ করে বর্ষার সময় ডায়েরিয়ার প্রকোপ বাড়ে। স্যালাইনের চাহিদাও বাড়ে। কিন্তু জেলা সদর থেকে চাহিগা অনুযায়ী স্যালাইন পাওয়া যাচ্ছে না।” একই ছবি মানবাজার ২ ব্লকের স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও। রমেশবাবু জানান, মানবাজার ২ ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আমাদের কাছে কিছু স্যালাইনের ইউনিট চেয়েছিলেন। তাঁদের দেওয়া যায়নি।
পুরুলিয়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন কুমার ঝরিয়াত বলেন, “আমি সদ্য দায়িত্ব পেয়েছি। আগে থেকেই স্যালাইনের সঙ্কট চলছে। ২০ জুলাই জেলার সব ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলার স্বাস্থ্য কর্তাদের নিয়ে এ ব্যাপারে একটি বৈঠক করা হয়। সেখানে স্যালাইনের ঘাটতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। খবর নিয়ে জেনেছি স্যালাইন সরবরাহের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। আশাকরি শীঘ্রই এই সমস্যা মিটে যাবে।” তিনি জানান, সমস্যা না মেটা পর্যন্ত ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের জরুরি প্রয়োজনে বাজার থেকে স্যালাইন কিনে কাজ চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরে তাঁদের ওই টাকা দেওয়া হবে। |