বাম আমলে হয়নি, তৃণমূল জমানার প্রথম এক বছরেও নয়। ‘আঠারো মাসে বছরের’ নমুনা এখনও রয়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। খোদ কলকাতাতেই গত ২ বছর ধরে আটকে স্বাস্থ্য দফতরের চারটি প্রকল্প। তার একটি স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের, একটি ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের, একটি আইডি হাসপাতালের এবং একটি রাজারহাট অঞ্চলের।
জাতীয় এড্স নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘ন্যাকো’ ২০০৯-এ ন্যাশনাল মেডিক্যালে রক্তের উপাদান পৃথকীকরণ কেন্দ্র তৈরির অনুমোদন দেয়। তা এখনও শুরু হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কথায়, ১৪টি যন্ত্রের মধ্যে ৬-৭টি যন্ত্র ন্যাকো এখনও পাঠায়নি। আর ন্যাকোর কর্তারা বলছেন, “ঘর তৈরির কাজ শেষ করতে ন্যাশনাল অনেক দেরি করেছে। শেষ করার পরেও আমাদের জানায়নি। যন্ত্রপাতিও ঠিক সময়ে চেয়ে পাঠায়নি।”
তার ফল কী হয়েছে? ন্যাশনাল মেডিক্যালের ব্লাডব্যাঙ্কের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক মধুসূদন মণ্ডলই স্বীকার করেন, “অনেক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু এখান থেকে নিয়মিত রক্ত নেয়। এদের শুধুমাত্র ‘কনসেন্ট্রেটেড আরবিসি’ দেওয়ার কথা। কিন্তু রক্তের উপাদান পৃথক করা যায় না বলে হোলব্লাড দিতে হয়, যা অবৈজ্ঞানিক। এতে ক্রমশ শিশুদের দেহে লোহা জমে বিভিন্ন রোগ হয়। কিন্তু আমরা নিরুপায়।” তিনি আরও বলেন, “ডেঙ্গি হলে প্রচুর প্লেটলেট লাগে। হোলব্লাডে সে প্রয়োজনীয়তা পূরণ হয় না। তাই সব রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে হয়।”
২০০৯-এ স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনকে যখন এইচআইভি চিকিৎসা ও গবেষণায় পূর্ব ভারতের উৎকর্ষকেন্দ্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়, তখন অনেক প্রচার করেছিল তৎকালীন সরকার। কথা ছিল, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, সিকিম, অসম, ছত্তীসগঢ় ও বিহারের এইচআইভি সংক্রান্ত সব জটিল ‘কেস’ এখানে দেখা হবে। কেন্দ্র ৩০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিল। রাজ্য দিয়েছিল ১ কোটি। পরে ট্রান্সফর্মার বসাতে ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষও দেন ৩৮ লক্ষ। কিন্তু আসল পাঁচতলা বাড়িটিই শেষ হয়নি। দরকার আরও ৭১ লক্ষ টাকার। এ নিয়ে স্বাস্থ্যভবনের সঙ্গে ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষের টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “না কাঁদলে মা-ও শিশুকে দুধ দেয় না। ট্রপিক্যালের নিজেরই কোনও তাড়া নেই। ঠিক সময়ে টাকা না চাইলে আমরা কী করে দেব?” আর ট্রপিক্যাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “লিখে লিখে আমাদের হাত ব্যথা হয়ে গিয়েছে। নিজেদের দোষ এড়াতে স্বাস্থ্যকর্তারা অন্য কথা বলছেন।”
অনিশ্চয়তার মুখে রাজারহাটে স্বাস্থ্য দফতরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রকল্পও। স্বাস্থ্যকর্তাদের অভিযোগ, ২০১০-এ দরপত্র ডেকে একটি ঠিকাদার সংস্থাকে নির্মাণের বরাত দেওয়া হয়। তারা কাজে অহেতুক দেরি করে আচমকা জানায়, বেশি টাকা দিতে হবে। নতুন সংস্থাকে বরাত দিয়ে কাজ শেষ করতে আরও ২ বছর লাগবে। আবার ওই নির্মাণ সংস্থার প্রধান ত্রিদিব রুদ্রের বক্তব্য, “স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতী কাজ করতে দিচ্ছিল না। ওদের থেকে সিমেন্ট-বালি নিতে বলছিল। স্বাস্থ্য দফতরকে জানিয়ে লাভ হয়নি। তাই আমরা কাজ করতে চাইনি।”
ডায়েরিয়া ও সংক্রামক রোগের চিকিৎসায় রাজ্যের একমাত্র রেফারাল হাসপাতাল আইডিতে দু’বছর আগেই ডায়ালিসিস ইউনিট তৈরির কাজ শুরু হয়। টাকা দিয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। ডায়েরিয়া রোগীদের বেশির ভাগই কিডনি অকেজো হয়ে মারা যান বলে এই প্রকল্পের সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখনও ১০ শয্যার সেই ইউনিটের কাজ শেষ হয়নি। এখন বেসরকারি সহযোগিতায় তা চালু করার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। হাসপাতালের অধ্যক্ষ জ্যোতিবিকাশ সাহার উত্তর, “১১ মাস হল এসেছি। এসে থেকে দেখছি কাজ বন্ধ। কারণ জানি না।” |