|
|
|
|
পরম ‘মমতা’য় সাজছে ইকো-পার্ক |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
মহুয়া, কুর্চি, কনকচাঁপা, পারুল কলকাতায় বিরল হয়ে যাওয়া এ সব গাছের পুনর্বাসনকেন্দ্র বলা যেতে পারে। শহরের ঢিল ছোড়া দূরত্বে। কেবল এ সব গাছই নয়, রবীন্দ্রসাহিত্যে উল্লেখ রয়েছে, এমন হরেক রকমের কয়েক হাজার গাছ থাকবে সেখানে। উদ্যানের নাম তাই রাখা হয়েছে ‘রবি-অরণ্য’। ছাতিম থেকে অমলতাস, বট-অশ্বত্থ-অশোক-আম-আমড়া এ সব নিয়ে সেজে উঠছে এই বন। আর এটিকে ঘিরে চলছে এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। ৪৮০ একর এলাকায় তৈরি হচ্ছে ইকো-পার্ক।
ভাবনাটা এসেছিল খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথায়। গত বছর ১৯ জুলাই বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে নিউ টাউনের ভিতরে জায়গাটি দেখে প্রকৃতি আর সবুজ নিয়ে অভিনব কোনও প্রকল্প তৈরির নির্দেশ দেন। পরিকাঠামো ও ঐতিহ্য-সংরক্ষণের ব্যাপারে অভিজ্ঞ একটি সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে ‘হিডকো’ তৈরি করেছে ‘বেঙ্গল আর্বান ইনফ্রাস্ট্রাক্চার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড’। প্রকল্প-পরামর্শদাতা হিসেবে সহায়তা করছেন ওঁরা। যৌথ সংস্থার সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সুজিত দত্ত বলেন, “এ ব্যাপারে নকশা তৈরির জন্য আমরা দিল্লির একটি অভিজ্ঞ সংস্থার সাহায্য নিয়েছি।”
গত বুধবার বিমানবন্দর থেকে ফেরার পথে জায়গাটি ফের পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সেখানে বাগান তৈরির কাজ দেখেন। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। সৌন্দর্যায়নের অঙ্গ হিসেবে বাগানের মধ্যে পায়ে চলার পথ (ওয়াক ওয়ে) তৈরি হবে। ইকো পার্কের মূল বিস্তীর্ণ জলাশয়টিকে সাজানোরও নানা পরিকল্পনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ইচ্ছে, জলাশয়টির মধ্যে যে দ্বীপভূমিটি রয়েছে, সেটিতে করা হবে ভাসমান এক আন্তর্জাতিক মানের কনফারেন্স হল ও কটেজ। থাকবে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। কনফারেন্সে আসা প্রতিনিধিরা সেখানে নৌকা চড়তে পারবেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিমানবন্দর থেকে শহরে প্রবেশপথের কাছেই এমন একটি পরিবেশ-বান্ধব এলাকা দেশি-বিদেশি সকলের কাছেই আকর্ষণীয় করে তুলতে চাই। বহু বছর ধরে আসা-যাওয়ার পথে আমি এই এলাকাটি দেখতাম। এক সময়ে মনে হচ্ছিল, জায়গাটি অন্য ভাবে ‘দখল’ হয়ে যাচ্ছে। এর পরে আমরা ক্ষমতায় এসেই এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যাই।” |
 |
কাজ চলছে ইকো-পার্কের। ছবি: সুদীপ আচার্য |
কাজ শুরু হয়েছে ২০১১-র নভেম্বরে। কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী নিয়মিতই জানতে চান। ‘হিডকো’র চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “কাজে গতি আনতে আমরা নগরোন্নয়ন, বন, মৎস্য, জনস্বাস্থ্য কারিগরি প্রভৃতি দফতরকে সামিল করেছি।” তৈরি হয়েছে সমন্বয় কমিটি। প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিক কাজের মূল্যায়ন হচ্ছে। দিল্লি থেকে পরামর্শদাতা সংস্থার দাবি, “ঠিক এ রকম পার্ক শুধু ভারতে কেন, গোটা বিশ্বে নেই। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এটা যতটা সহায়ক হবে, ততটাই সফল হবে পর্যটক টানতে। কর্মসংস্থানও হবে বহু লোকের।”
নিউ টাউনে প্রস্তাবিত বিজ্ঞান ভবন এবং নির্মীয়মাণ আধুনিক আর্ট-গ্যালারি ‘কলকাতা মিউজিয়াম অফ মডার্ন আর্টস’-এর মাঝে চলছে এই উদ্যানের কর্মযজ্ঞ। এলাকার ১১২ একরের জলাশয়ের মাঝে প্রায় ছয় একরের একটি ভূখণ্ডকে সাজানো হচ্ছে। ওই উদ্যান এলাকায় ছয় লেনের রাস্তার ধার বরাবর উদ্যানের দেওয়াল তৈরি হচ্ছে। দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। ‘রবি-অরণ্য’-এর আয়তন তিন একরের উপরে। সেখানে চলছে চারা পোঁতার কাজ। বকুল, সাদা শিমুল, লাল শিমুল, ঝাউ, তাল, পলাশ, জারুল, রাধাচূড়া, আমলকি, সোনাঝুরি রবীন্দ্রনাথের প্রকাশিত নানা সময়ের লেখায় উল্লেখিত চারা পর্যায়ক্রমে পোঁতা হচ্ছে। গাছের সেই তালিকা জোগাড় করে আনা হয়েছে বাংলা আকাদেমি থেকে। ইকো-পার্কে সাড়ে নয় একর জায়গায় তৈরি হচ্ছে ‘ট্রপিক্যাল রেন ফরেস্ট গার্ডেন’। হচ্ছে একটি ‘হার্বাল গার্ডেন’। সহযোগিতা করছে বন দফতর।
প্রকল্পের দু’টি ‘ইকো জোন’-এ থাকছে বিভিন্ন ‘ওয়েট্ল্যান্ড’, ‘গ্রাস্ল্যান্ড’। ‘অ্যাক্টিভ জোন’-এ রেস্তোরাঁ, ফুড কোর্ট, সংগ্রহশালা, হস্তশিল্পের হাট প্রভৃতি। ‘লেক জোন’-এ থাকবে বাহারি সেতু, বন্য ফুলের বাহার। ‘থিম এরিয়া’য় ‘হার্বাল গার্ডেন’, ‘ওয়াটার গার্ডেন’ ছাড়াও থাকবে ‘টি প্লান্টেশন এরিয়া’।
কত দিন লাগবে এই প্রকল্পের রূপায়ণে? দেবাশিস সেনের জবাব, “বছর-মাসের হিসেব ঠিক বলা যাবে না। এত বড় একটা প্রকল্প। যত দ্রুত করার চেষ্টা হচ্ছে।” |
|
|
 |
|
|