ময়লা হাফপ্যান্ট আর তেমনই একটা হাফ শার্ট পরা রোগাটে ছেলেটি বারবার বলছিল, “এমনই একটা নদী ছিল।”
বছর ন’য়েক বয়স। বুধবার রাতে নবদ্বীপে গঙ্গার ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছিল উদ্ভ্রান্তের মতো। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলছিল, “নদীটা মিলে গিয়েছে। পাশে যে মন্দিরগুলো ছিল, সেটাও মনে হচ্ছে এরকমই। স্নানের ঘাটটাও বেশ চেনা চেনা লাগছে।” তা হলে তুমি খুঁজছ কী? উত্তর মিলেছে, “আমার দাদু-দিদিমার বাড়ি।”
বেশ ক’দিন খাওয়া হয়নি। উসকোখুসকো চুল। ওই বালক জানায়, তার নাম সঞ্জয় গোস্বামী। বাড়ি উত্তরপ্রদেশের
|
সঞ্জয় গোস্বামী।
—নিজস্ব চিত্র |
অযোধ্যায়। কেন সে দাদু-দিদিমার বাড়ি খুঁজছিল? সঞ্জয় জানিয়েছে, অযোধ্যার নয়াঘাটে বাবার ফলের দোকান আছে। তারা তিন ভাইবোন। মা সম্প্রতি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার পরে বাবা ফের বিয়ে করেন। তার কথায়, “নতুন মা আমাদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।” পড়ত তৃতীয় শ্রেণিতে। দিন তিনেক আগে সে হঠাৎ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
সঞ্জয় জানায়, তারপরেই সে ঠিক করে দাদু-দিদিমার বাড়ি চলে যাবে। তার কথায়, “মায়ের সঙ্গে বছর চারেক আগে দাদু-দিদিমার বাড়ি গিয়েছিলাম। জানতাম জায়গাটার নাম নবদ্বীপ।” সেই মতো অযোধ্যা থেকে বেরিয়ে হাওড়াগামী ট্রেনে উঠে পড়ে। ট্রেনের দরজার সামনে বসে এ কামরা ও কামরা করতে করতে চলে আসে হাওড়া। হাওড়ায় নানা লোককে জিজ্ঞেস করে নবদ্বীপের লোকালেও সে ঠিক উঠে পড়ে। কিন্তু এ বার টিকিট পরীক্ষকের হাতে পড়ে। ব্যান্ডেলে নামিয়ে দেন তিনি ছেলেটিকে। তবে তারপরেও সে নবদ্বীপে পৌঁছয় বুধবার রাতে। তারপরে কোনও দোকান থেকে সামান্য কিছু খাবার পেয়ে পেট ভরিয়েছে। এ বার তার খোঁজ শুরু হয়েছে দাদু দিদিমার বাড়ির।
নবদ্বীপের আইসি শঙ্করকুমার রায়চৌধুরী বলেন, “ছেলেটিকে একা একা ঘাটে ঘুরতে দেখে আমরা নিয়ে এসেছি থানায়। সে বলছে তার দাদুর নাম নিমাই মণ্ডল। তবে সেই নামে কাউকে এখনও খুঁজে পাইনি। অযোধ্যা প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে ও অযোধ্যা যেতে নারাজ। সে ক্ষেত্রে দাদুকে খুঁজে না পেলে তাকে সরকারি হোমে পাঠানোর কথা ভাবতে হবে।” |