গাঁয়ের বধূ ধনি হেমব্রমের জ্বর, পেট ব্যাথা কিছুতেই সারছিল না। ওঝা-গুনিন ডেকেও রোগ সারেনি। গুনিনরা বলেছিল, গ্রামের মাঝবয়সী বকুল হেমব্রম ডাইন। তাঁর কুনজরে পড়েই ধনির ওই রোগ!
গোঘাটের ইদলবাটি গ্রামের এই ধনি হেমব্রমকে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে বাসিন্দাদের মন থেকে ডাইন প্রথা নিয়ে কুসংস্কার দূর করতে নেমেছে আরামবাগ মহকুমা প্রশাসন। গোঘাটের বিডিও শিবপ্রিয় দাশগুপ্ত সম্প্রতি ওই গ্রামে গিয়ে ধনির রোগ ও বকুলকে ডাইন সন্দেহে এক ঘরে করে রাখার ঘটনা শোনেন। এরপরেই প্রশাসনের এই উদ্যোগ। বিডিও বলেন, “মহকুমাশাসকের পরামর্শে বুধবার ধনিকে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁকে সুস্থ করে ওই এলাকাকে কুসংস্কার মুক্ত করাটাই আমাদের লক্ষ্য।”
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “বধূটির জ্বর-পেট ব্যাথার মতো কিছু সমস্যা রয়েছে। মানসিক চিকিৎসারও প্রয়োজন। মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে।”
তিনি জানান, ওই বধূ হাসপাতালে ভর্তি হতে না চাওয়ায় তাঁকে সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে এখানে সরকারি খরচে চিকিৎসার জন্য আসতে বলা হয়েছে। মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “কুসংস্কার বিরোধী অনেক প্রচার হওয়ার পরেও সার্বিক সাফল্য যে মেলেনি, এই ঘটনা তার প্রমাণ। তাই এ বার ওই অসুস্থ মহিলাকে সুস্থ করে বাসিন্দাদের সচেতন করতে চাই।”
ইদলবাটি গ্রামে ২০টি আদিবাসী পরিবারের বাস। ধনির স্বামী সুধাংশু হেমব্রম বলেন, “স্ত্রী বছর তিনেক ধরে নানা রোগে ভুগছে। গুনিনরা বলেছিল ডাইনের নজরে পড়েই এ সব হচ্ছে।” তাঁর দাবি, “গ্রামের মোড়লরাও গুনিনের কথা সমর্থন করে। এখন দেখা যাক কী হয়।”
পাড়ার মোড়ল কালীপদ হেমব্রম বলেন, “তখন গুনিনের কথা বিশ্বাস করেছিলাম। এখন ধনি সুস্থ হয়ে উঠলে আমরা খুশি হব।” খুশি বকুলও। তিনি বলেন, “ডাইন অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে উঠেছিল। পড়শিরা মেলামেশা না করলে কি আর ভাল লাগে।” মহকুমাশাসক জানান, বাসিন্দাদের নিয়মিত বোঝানো হচ্ছে। আগের থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। |