উদাসীন পুরসভা, অভিযোগ
গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে উত্তরপাড়ার শ্মশানঘাট
ত দিন যাচ্ছে, গঙ্গায় তলিয়ে যাচ্ছে উত্তরপাড়ার শিবতলা শ্মশানঘাট। মূল স্নানের ঘাটটি ভেঙে গিয়েছে কবেই। শ্মশানযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘাটটিও বিপজ্জনক ভাবে ভেঙেছে সম্প্রতি। জলের তোড়ে ভেঙে গঙ্গায় মিশে গিয়েছে মহিলাদের ব্যবহারের ঘর। এই বিপজ্জনক পরিস্থিতিতেও শ্মশানযাত্রীরা ঘাটটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, উত্তরপাড়া-কোতরং পুর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার জন্যই শ্মশানঘাটটির শোচনীয় অবস্থা। পুর কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কিছু চিঠি-চালাচালি বাদে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ করেনি। পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্থানীয় কাউন্সিলর তাপস মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুরসভার তরফে বহু চেষ্টা করা হয়ছে। এ নিয়ে বহু প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও টাকা মেলেনি।” পুরসভার মেয়র-ইন-কাউন্সিল দিলীপ যাদব বলেন, “শিবতলা শ্মশানটি রক্ষায় যথাযথ পদক্ষেপ করা হচ্ছে। জেলা পরিকল্পনা কমিটিতে বিষয়টির অনুমোদন মিললেই কাজ শুরু হবে।”
হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) আবিদ হোসেনের দাবি, “ওই শ্মশানঘাট সংস্কার নিয়ে পুর কর্তৃপক্ষের তরফে ওই বিষয়ে নতুন কোনও প্রস্তাব এখনও আসেনি।” তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট প্রস্তাব এলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
শ্মশান সংলগ্ন ভাঙাচোরা গঙ্গার ঘাট। ছবি: প্রকাশ পাল।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভৌগোলিক ভাবে হাওড়া-হুগলির লাগোয়া হওয়ায় প্রাচীন এই শ্মশানঘাটটির গুরুত্ব অপরিসীম। বৈদ্যুতিক চুল্লি থাকায় শ্রীরামপুর মহকুমার দূরদূরান্ত থেকে এই ঘাটে শবদাহ করতে আসেন মানুষজন। অনেক সময় উত্তরপাড়া লাগোয়া বালির শ্মশানঘাটের বৈদু্যুতিক চুল্লি খারাপ থাকলে হাওড়া জেলা থেকেও বহু মৃতদেহ শিবতলা শ্মশানঘাটে সৎকারের জন্য আনা হয়। লাগোয়া মন্দির এবং ঘাটের অন্যান্য পরিষেবা ভাল হওয়ায় শ্মশানটিতে ভিড়ও হয়। কিন্তু এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘাটটিই এখন গঙ্গায় তলিয়ে যেতে বসেছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গঙ্গার বাঁকের মুখে ওই শ্মশানঘাটটি বাঁচাতে বহু বছর আগে কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছিল। পুর কর্তৃপক্ষের তরফে কিছু বালির বস্তা ফেলা হয়েছিল। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা ছিল অপ্রতুল। তার পরে গঙ্গাবক্ষে বোল্ডার ফেলে মোটা তার, শাল বল্লার খুঁটি দিয়ে অন্তত ৫০০ মিটার পাড় বাঁধানো হয়। কিন্তু তা ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়নি। পুুরসভার তরফে আগে ঘাটটির রক্ষণাবেক্ষণে যে খরচের হিসাব ধরে প্রকল্প তৈরি করা হয়েছিল, বাস্তবে দেখা গিয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি খরচ হবে। ফলে, ওই উদ্যোগ জলে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি জেলা পরিকল্পনা কমিটিতে আলোচনাও হয়। নতুন করে প্রকল্প রচনার জন্য উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভাকে বলা হয়েছে।
এখন মূল ঘাটের কয়েকটি সিঁড়ি মাত্র অবশিষ্ট রয়েছে। শবযাত্রীদের জন্য নির্দিষ্ট ঘাটটিও ভেঙে গিয়েছে। কিন্তু প্রথা অনুযায়ী, শবযাত্রীরা ওই ঘাট থেকেই গঙ্গার জল নিয়ে চুল্লি নেভান। বিপদ মাথায় করে তাঁদের সেই কাজ করতে হয়। ঘাট ভাঙা থাকায় অনেক সময় তাঁরা দুর্ঘটনার কবলেও পড়েন। বহু শ্মশানযাত্রীরই বক্তব্য, “ভাঙা ঘাটের জন্য অহরহ বিপদে পড়তে হচ্ছে। পুর কর্তৃপক্ষের গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত।” স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, “বেআইনি ভাবে গঙ্গা থেকে বালি তোলার জন্য শিবতলা শ্মশানঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গঙ্গার বাঁকের মুখে পাড়ের খুব কাছ থেকে বালি তোলায় বিপদ আরও বাড়ছে। পুর কর্তৃপক্ষ বালি তোলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। উল্টে তাঁদের একাংশের মদতও রয়েছে।” পুর কর্তৃপক্ষ গঙ্গা থেকে বালি তোলার বিষয়টি তাদের দেখার এক্তিয়ারে নয় বলে দাবি করেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.