স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হল এক ছাত্রীর। বৃহস্পতিবার সকাল আটটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে হাওড়ার গোলাবাড়ি থানা এলাকার বিজয় মুখোপাধ্যায় রোডে।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম অপর্ণা মিশ্র (১১)। বাড়ি ওই স্কুলের কাছেই অবনী দত্ত রোডে। অভিযোগ, এ দিন পরীক্ষা চলাকালীন অপর্ণাকে মারধর করেছিলেন এক শিক্ষক। সেই ‘অভিমানে’ ক্লাস থেকে বেরিয়ে ছ’তলার ছাদ থেকে ‘ঝাঁপ’ দেয় ষষ্ঠ শ্রেণির ওই ছাত্রী। মৃতার পরিজনেরা স্কুলের প্রধান শিক্ষক দিলীপ দুবে এবং আর এক শিক্ষক ব্রজকিশোর প্রসাদের বিরুদ্ধে অপর্ণাকে মারধর ও অত্যাচারের অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে।
|
অপর্ণা মিশ্র |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, এ দিন সকালে ‘সেন্ট দমিনিক সেভিও স্কুল’-এ ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইউনিট টেস্ট চলছিল। ষষ্ঠ শ্রেণির রসায়ন পরীক্ষা ছিল। অপর্ণার বাবা শিবনারায়ণ মিশ্রের অভিযোগ, “পরীক্ষা চলার সময়ে শিক্ষক আমার মেয়ের খাতা ইচ্ছা করে কেড়ে নিয়ে মারধর করেন। ওকে ক্লাস থেকে বার করে দেন। পরে প্রধান শিক্ষকও অপর্ণাকে নিজের ঘরে ডেকে ওর উপরে অত্যাচার করেন। এর পরেই অভিমানে আমার মেয়ে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেনি।”
স্কুল-কর্তৃপক্ষ অবশ্য ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, “পরীক্ষার সময়ে ওই ছাত্রী অসৎ উপায় অবলম্বন করেছিল বলে শ্রেণি-শিক্ষক বজ্রকিশোরবাবু ওর খাতা কেড়ে নিয়ে বকাঝকা করেন। এর পরেই ওই ছাত্রী ছাদে গিয়ে ঝাঁপ দেয়। ওকে মারধর করা হয়নি। ক্লাস থেকে বার করে দেওয়াও হয়নি।”
এ দিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, গোলাবাড়ি থানা থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে ওই স্কুলের সামনে স্থানীয় মানুষের ভিড়। রাজকুমার প্রসাদ নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আচমকা ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেয়ে দেখি, স্কুলের পোশাক পরা এক ছাত্রী ছ’তলার ছাদ থেকে একটি অটোর ছাদে এসে পড়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে শরীর।”
এলাকার লোকজনের অভিযোগ, এই ঘটনার পরে স্কুল-কর্তৃপক্ষ ওই ছাত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্যোগী না হওয়ায় তাঁরাই মেয়েটিকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেখানে ওই ছাত্রীকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
বিজয় মুখোপাধ্যায় রোডের পাশে একটি ছ’তলা আবাসনের দোতলায় চলছে আইসিএসই বোর্ড অনুমোদিত স্কুলটি। বাকি চারতলার ফ্ল্যাটের সবগুলিতেই লোকজনের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই আবাসনে এত বড় একটি স্কুল চললেও ছাত্রছাত্রীদের নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা করেননি স্কুল-কর্তৃপক্ষ। আবাসনের ছ’তলার ছাদের দরজা সব সময়েই খোলা থাকে। পড়ুয়ারা মাঝেমাঝেই ছাদে উঠে যায়। আলসের উচ্চতা দু’ফুট হওয়ায় এমনিতেই পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ দিন ওই ছাত্রীও ছাদ থেকে ঝাঁপ দেওয়ার সময়ে সহজেই ওই আলসেতে লাফ দিয়ে পেরিয়ে গিয়েছিল বলে অনুমান পুলিশের। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, ঘটনাটির তদন্ত চলছে। |