সাঁতরাগাছির ধর্ষণ-কাণ্ডে জগাছা থানার এক পুলিশ অফিসারকে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করেছে হাওড়া সিটি পুলিশ। ওই পুলিশ অফিসারই রক্তাক্ত অবস্থায় থানায় আসা ধর্ষিতা মহিলাকে সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ।
ধর্ষিতা অভিযোগ করেছিলেন, তিনি ঘটনার কথা বলা সত্ত্বেও নির্মলেন্দু ঘোষ নামে ওই অফিসার এফআইআর দায়ের করেননি। তাঁর চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেননি। মহিলা যখন থানায় যান, সেই সময়ে নির্মলেন্দুবাবুই ডিউটি অফিসারের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জগাছা থানার আইসি সুবীর চক্রবর্তীকেও ‘শো-কজ’ করেছে সিটি পুলিশ। আইসি-র বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ঘটনার সময় থানায় ছিলেন না। ধর্ষণের অভিযুক্তকে অবশ্য এখনও ধরা যায়নি।
বুধবার ভোর ৫টা নাগাদ সাঁতরাগাছি সেতুর নীচে এক দুষ্কৃতী ওই মহিলাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। মহিলা জানিয়েছেন, ঘটনার পরে তিনি পথচলতি মানুষের কাছে সাহায্য চান। কিন্তু কেউ তাঁকে সাহায্য করেননি। পরে তিনি সেতুর উপরে উঠে এক পুলিশকর্মীকে ঘটনাটি বলেন। তিনিও মহিলার দিকে সাহায্যের হাত হাড়িয়ে দেননি। এর পরে রক্তাক্ত অবস্থায় তিন কিলোমিটার হেঁটে তিনি যান জগাছা থানায়।
কিন্তু থানার ডিউটি অফিসার নির্মলেন্দুবাবু তাঁকে সাহায্য করা তো দূর, উল্টে তাঁর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে ওই মহিলার অভিযোগ। পরে বাড়ির লোকেরা তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে ফের থানায় নিয়ে গেলেও ওই অফিসার স্রেফ দায়সারা গোছের একটি জেনারেল ডায়েরি (জিডি) করে ছেড়ে দেন। আত্মীয়রা হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন ওই মহিলাকে। শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পর ওই মহিলার আত্মীয়রা ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ এফআইআর নিতে বাধ্য হয়। যে পুলিশকর্মী সেতুর উপরে ওই মহিলাকে সাহায্য করেননি বলে অভিযোগ, তাঁকেও চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
হাওড়া হাসপাতালে এ দিন ওই মহিলার সঙ্গে দেখা করতে আসেন কয়েকটি মানবাধিকার ও মহিলা সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিকেলে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের মহিলা প্রতিনিধিরা পুলিশি গাফিলতির প্রতিবাদে এবং অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে জগাছা থানায় বিক্ষোভ দেখান। এ দিন ঘটনার তদন্তে নামেন হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। তাঁদের সাহায্য করছে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওই মহিলা জানিয়েছেন, যে যুবক এই কাণ্ড ঘটিয়েছে, তার মুখ তিনি চেনেন। কাজে যাওয়ার সময়ে কোনা এক্সপ্রেসওয়েতে প্রায়ই তিনি ওই যুবককে দেখতেন বলে ওই মহিলার বক্তব্য।” তদন্তকারীদের ধারণা, ওই যুবক এলাকারই বাসিন্দা। মহিলার বিবরণ শুনে ওই যুবকের ছবি আঁকানো হবে বলে পুলিশকর্তারা জানান। ওই মহিলার রক্ত ও কাদামাখা জামাকাপড় ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। |