সেনা জওয়ান নামানোর পরেও নামনি অসমে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সপ্তাহব্যাপী সংঘর্ষে মৃতের সংখ্যা অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর মতে ৪৪। তিনি এই দিন মেনে নিয়েছেন, সময় মতো অতিরিক্ত বাহিনী পাঠাবার সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ফলেই বড়োভূমি ও নামনি অসমে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে। তবে আজ ট্রেন চলাচল অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে।
আজ কোকরাঝাড়, চিরাং, ধুবুরিতে নতুন করা অশান্তি না ছড়ালেও, গত রাতে বাক্সায় গুলি চলে। পুলিশের লাঠিচালনায় আজ, বাক্সায় ২৪ জন মহিলা জখম হয়েছেন। বিন্নাগুড়ি এলাকায় গত রাতে গুলিতে এক পরিবারের তিন জন মারা গিয়েছেন। আজ পুলিশ দুই যুবককে সেই ঘটনায় মুসলপুর থেকে গ্রেফতার করতে এলে ওই মহিলারা পুলিশের পথ আটকান। তখন পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। দুই মহিলাকে সিভিল হাসপাতালের ভিতরেই মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
আজ, কোকরাঝাড়ে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১২টা এবং চিরাং-এ বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৪টে অবধি কার্ফু শিথিল করা হয়। তবে, সেনা ও অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর নানা এলাকায় প্রহরা, ফ্ল্যাগ মার্চ সত্ত্বেও স্পর্শকাতর এলাকার সাধারণ মানুষ এমনকী সরকারী কর্মীরা পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এদিন, কোকরাঝাড়ের ভোটগাঁও ত্রাণশিবিরে শরণার্থীদের হামলার মুখে পড়েন কোকরাঝাড়ে পুলিশের সিআই বিপুল শইকিয়া ও তাঁর গাড়ি চালক বিরস সাউ। বিপুলবাবু জানান, এই পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা ছাড়া তিনি কাজ করতে পারবেন না। একই পরিস্থিতিতে পড়ে বিজনির এসডিপিও এন দাস ইতিমধ্যে ইস্তফাই দিয়ে দিয়েছেন। |
কার্যত পুলিশ ও আধাসেনার অনেকটা অংশই, এদিন, সফররত মন্ত্রী-আমলাদের নিরাপত্তা দিতেই বেশি ব্যস্ত ছিল। শনিবার এলাকায় আসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। স্থানীয় পুলিশ অফিসাররাও ভিআইপিদের নিয়ে ব্যস্ত। অথচ, ধুবুরি-কোকরাঝাড়ের দু’পাড়ে বা দীপলাই বিলে আটকে পড়া মানুষকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলাশাসক, এসপি, আইজিপিদের বারবার অনুরোধ করেও ফল মেলেনি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতর থেকে জানা গিয়েছে, আরও আধা সামারিক বাহিনী পাঠানো হচ্ছে অসমে।
মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “আশা করছি দু’তিন দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আমি উভয়পক্ষের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। সকলের অভিযোগ শুনেছি। আপাতত লাখ দু’য়েক মানুষ ঘরছাড়া।” তিনি নিহতদের নিকটাত্মীয়দের ৬ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। জখম ও গৃহহীনদের উপযুক্ত সাহায্যের আশ্বাসও দেন। হিংসার বলি হওয়া শিশুদের শিক্ষার ভারও প্রশাসন নেবে। কোকরাঝাড়ে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পরে গগৈ আজ ঘটনাস্থলে আসেন। তবে তাঁর কথায়, “জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলিতে সর্বক্ষণ ‘অসম জ্বলছে’ বলে দেখিয়ে সত্য পরিবেশন করছে না, বরং, ত্রাস ছড়াচ্ছে।” তবে তাঁর সরকার সংঘর্ষ থামাতে ব্যর্থ অভিযোগে এদিন দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যের মুসলিম সাংসদেরা। আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়াও গোটা ঘটনার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন।
অসমে সংঘর্ষের পরে শরণার্থীরা পশ্চিমবঙ্গের সীমানাবর্তী জেলাগুলিতে আশ্রয় নিচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দিন কলকাতায় নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমার কাছে এক মুঠো চাল থাকলে, আধ মুঠো আমি অন্যকেও দিতেই পারি। আমাদের রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা যেমন আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতাও থাকবে।” বুধবার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র শরণার্থীদের সাহায্যার্থে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাতে বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী এই দিন বলেন, “কোনও কোনও নেতা বলছেন, ওখানে দল পাঠাতে হবে। পরিস্থিতি ভালো নয়।” মমতা তাঁদের ‘নোংরা রাজনীতি’ করতে নিষেধ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি সেই সব রাজনৈতিক নেতাদের অনুরোধ করব দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করবেন না।” সূর্যকান্তবাবু বলেন, “আমরা শান্তি ও ঐক্যের পক্ষে। মুখ্যমন্ত্রী কী বলেছেন, জানি না। কিন্তু উনি এমন কথা বলে থাকলে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” আনিসুর রহমান ও পরেশ অধিকারীর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের এক প্রতিনিধি দল শুক্রবার আলিপুরদুয়ারে যাবে বলে জানান বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্তবাবু।
উত্তরপুর্ব সীমান্ত রেলের আলিপুরদুয়ার ডিভিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশিরভাগ ট্রেন মোটামুটি সময়সূচি মেনে চলাচল করলেও এদিনও অসমগামী তেরোটি আপ ট্রেন ও চারটি ডাউন ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এন এফ রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সিতুসিংহ হাজং জানান, আজ, শুক্রবার সকালে সোয়া ১১টায় হাওড়া থেকে ডিব্রুগড় একটি বিশেষ ট্রেন দেওয়া হয়েছে। |