যৌনকর্মীদের দাবিসনদ প্রকাশ
কলকাতার বাতাসে মুক্তির স্বাদ পাচ্ছেন ওঁরা
মিনিক লাপিয়ের কলকাতাকে বলেছিলেন ‘সিটি অফ জয়’। আনন্দনগরী। কিন্তু রাডা-এলেমা-অ্যানাদের চোখে কলকাতা এখন ‘সিটি অফ ফ্রিডম’। স্বাধীনতার শহর।
যে শহরের মঞ্চ থেকে খোলা গলায় নিজেদের নির্যাতনের কাহিনি পৌঁছে দেওয়া যায় গোটা বিশ্বের কাছে। আত্মগোপন করে থাকতে হয় না, পুলিশের মার খেতে হয় না, ধর্ষিতা হতে হয় না। বছর পঁচিশের পেশেন্স তাই কলকাতার বাতাসে খুঁজে পাচ্ছেন মুক্তির স্বাদ। কোঁকড়া চুল ঝাঁকিয়ে হেসে উঠে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “আশা করি জিম্বাবোয়েতে এই কাগজ যাবে না। সেখানকার কাগজে আমাদের ছবি আর ইন্টারভিউ দেখলে পুলিশ অ্যাসিডে ডুবিয়ে খতম করে ফেলত!” জিম্বাবোয়েতে যৌনকর্মীদের উপর পুলিশি অত্যাচারের এটাই রীতি।
২২ জুলাই থেকে কলকাতায় শুরু হওয়া যৌনকর্মীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন শেষ হতে দু’দিন বাকি। পেশেন্স-প্যাট-ভিকলোরিয়ারা সম্মেলনেই এসেছেন। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হল সম্মেলনের সনদ। যৌনকর্মীদের স্বাধীন ভাবে কাজের অধিকার, একত্রিত হওয়ার অধিকার, নিরাপত্তার অধিকার, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা, উন্নত চিকিৎসার দাবি রয়েছে সনদে।
বিদেশি যৌনকর্মীদের ছবি মোবাইলে ধরে রাখছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার স্বভূমিতে। —নিজস্ব চিত্র
পেশেন্স-সিহলে-কাইরু জিম্বাবোয়ের মেয়ে। যৌনকর্মীদের পেশা সে দেশে বেআইনি। থানায় যৌনকর্মীদের অভিযোগও গ্রাহ্য হয় না। তাই যৌনকর্মীদের উপর গ্রাহক আর পুলিশের উভয়েরই অকথ্য অত্যাচার চলে। জিম্বাবোয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুলাওয়াইও-তে গত আট বছর ধরে এই পেশায় রয়েছেন পেশেন্স। তাঁর কথায়, “প্রত্যেক দিন ৫০ ডলার রোজগার হলে ১০ ডলার চলে যায় পুলিশকে দিতে। টাকা দিতে না পারলেই ধর্ষণ, নির্যাতন।”
আফ্রিকার আর এক দেশ নাইজেরিয়ার লাগোসে থাকেন প্যাট অ্যাব্রাহাম। বয়স সাঁইত্রিশ-আটত্রিশ। এক যুগ ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। বলেন, “এক বার এক গ্রাহক টাকা মেটানোর বদলে আমাকে শহর থেকে কিছুটা দূরে নিয়ে গিয়ে মারধর করে ঝোপের মধ্যে ফেলে চলে গেল। কিছু পর কোনও মতে একটা গাড়িতে লিফ্ট নিয়ে কাছাকাছি থানায় এলাম। সেখানে পুলিশ দু’দিন ধরে আমাকে গণধর্ষণ করল।”
পাশে বসে একের পর এক সিগারেট টানতে-টানতে বিড়বিড় করছিলেন সেন্ট পিটার্সবার্গের ভিকলোরিয়া, ইরিনা। “কালো চামড়ার দেশ হও বা সাদা চামড়া, সর্বত্র একই নির্যাতন। আমাদের রাশিয়ায় তো সরকার যৌনকর্মীদের অস্তিত্বই মানতে চায় না। তাদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা হবে কী করে?” রাজনৈতিক অস্থিরতা-দীর্ণ তাজাকিস্তানের যৌনকর্মীদের অবস্থা আরও খারাপ। দুশানবে শহর থেকে আসা আনাই বললেন, “আমাদের আলাদা এলাকা বা ঘর নেই। সবটাই বেআব্রু। শহরের নির্দিষ্ট কিছু রাস্তায় খোলা আকাশের নীচেই আমাদের ব্যবসা!”
কলকাতার মাটিতে দাঁড়িয়ে এই অসম্মান থেকেই মুক্তি চাইছেন ওঁরা।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.