মাওবাদী নেতা ধৃত
কলকাতা থেকে গ্রেনেডের খোল পাচার রাঁচিতে
লকাতার কারখানায় তৈরি ‘হ্যান্ড গ্রেনেড’-এর ধাতব খোল রাঁচিতে মাওবাদী সংগঠনের কাছে পাঠানোর দায়িত্ব তাঁর উপরেই ন্যস্ত ছিল বলে পুলিশের খবর। বুধবার রাতে ওয়াটগঞ্জ এলাকা থেকে সেই প্রৌঢ় মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (এসটিএফ) রাজীব মিশ্র জানান, ধৃতের নাম মোহন বিশ্বকর্মা। তিনি মাওবাদীদের সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য। ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযোগের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগও আনা হয়েছে। ইউএপিএ বা বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে ওই মাওবাদী নেতার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।
বছর ষাটেকের মোহনের বাড়ি গয়ার ইনামগঞ্জ এলাকার নৌডিহা গ্রামে। দিন ছয়েক আগে ওয়াটগঞ্জের কার্ল মার্ক্স সরণিতে ফ্যান্সি মার্কেটের কাছে একটি হোটেলে ওঠেন ওই মাওবাদী নেতা। তাঁর কাছে হ্যান্ড গ্রেনেডের বেশ কয়েকটি খোল এবং বোমা তৈরিতে ব্যবহার্য কিছু লোহার ‘সকেট’ পেয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার মোহনকে আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে হাজির করানো হয়। তাঁকে ১৪ দিন পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ওই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক এস এম শাহনওয়াজ।
মহানগরীর উত্তর ও দক্ষিণ উপকণ্ঠে মাওবাদীরা গা-ঢাকা দিয়ে থাকে বলে পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে। মাওবাদীদের কিছু তাত্ত্বিক নেতা কলকাতা থেকেই সংগঠনকে চালনা করেন বলেও অভিযোগ। আগেও শহরতলি থেকে বেশ কয়েক জন মাওবাদী নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোহন ধরা পড়ায় জানা গেল, শুধু মগজাস্ত্র নয়, কলকাতা আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশও জোগান দেয় মাওবাদীদের। এসটিএফ সূত্রের খবর, মোহন উত্তর শহরতলির বরাহনগর এলাকার কয়েকটি লেদ কারখানায় হ্যান্ড গ্রেনেডের খোল তৈরি করাতেন। সড়কপথে সেগুলি পাঠানো হত রাঁচিতে। এর আগেও বেশ কয়েক বার কলকাতায় এসেছেন মোহন। পুলিশ জানায়, রাঁচিতে অর্জুন গুঞ্জা নামে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটিরই অন্য এক নেতা আগ্নেয়াস্ত্রের ওই সব সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন। সেগুলিতে বিস্ফোরক মশলা ঠাসা হত রাঁচিতেই। পরে সেই অস্ত্র ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী এলাকায় পাঠানো হত। এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, অর্জুনকে গ্রেফতার করেছে রাঁচি পুলিশ। আজ, শুক্রবার তাকে আলিপুর আদালতে হাজির করানো হতে পারে।
পুরুলিয়ার বলরামপুর এলাকা থেকে মাওবাদী সংগঠনের অন্যতম নেতা বিক্রমকে সম্প্রতি গ্রেফতার করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে মাওবাদীদের সেন্ট্রাল টেকনিক্যাল কমিটির প্রধান সদানালা রামকৃষ্ণ-সহ পাঁচ মাওবাদী ধরা পড়েন কলেজ স্ট্রিট এলাকায়। বিরাটির অযোধ্যানগর-সহ তাঁদের একাধিক ডেরায় হানা দিয়ে রকেট-লঞ্চার তৈরির সরঞ্জাম এবং নকশা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। সেই সময়েই ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, ছত্তীসগঢ়ে মাওবাদী কার্যকলাপের অনেকটাই কলকাতা থেকে পরিচালনা করা হয়। এই শহর মাওবাদীদের ‘নিরাপদ আশ্রয়’ বলেও পুলিশি সূত্রের খবর।
এক এসটিএফ-কর্তা জানান, কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়ে অস্ত্রশস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। এর মূল কারণ বড়বাজার, ক্যানিং স্ট্রিট এলাকা থেকে সস্তায় ধাতব সরঞ্জাম কেনা যায়। তার পরে সেগুলি শহরতলির বিভিন্ন কারখানায় নিয়ে গিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, কলকাতা থেকে সহজেই ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে যাতায়াত করা যায়। সেই কারণেও মাওবাদীরা অস্ত্র সরবরাহের জন্য এই মহানগরীকে বেছে নিয়েছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.