বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা, রেড রোড। দৃপ্ত পায়ে হেঁটে আসছেন তিনি। পুলিশ ব্যান্ডে তখন বাজছে বিউগল। উর্দিধারীরা ‘অ্যাটেনশনে’। ধীর পায়ে মঞ্চে উঠে গেলেন তিনি। পুলিশবাহিনীর ব্যান্ডে বেজে উঠল জাতীয় সঙ্গীত। শুরু হয়ে গেল কুচকাওয়াজ। মঞ্চে দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করলেন ‘মুখ্যমন্ত্রী’।
না, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়। এ দিনের ‘মুখ্যমন্ত্রী’ ছিলেন রেজওয়ানা খাতুন। কলকাতা পুলিশের কর্মী তিনি। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভূমিকায় এমন ‘মহড়া’ দিয়েছেন রেজওয়ানা।
১৫ অগস্ট সকাল ১০টায় রেজওয়ানার জায়গা নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। তারই প্রস্তুতিতে এ সপ্তাহ থেকে রাজ কাকভোরে সেখানে জড়ো হচ্ছে স্কুলপড়ুয়ারা। থাকছেন কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের জওয়ানেরাও।
স্বাধীনতা উৎসবকে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়ার নবতম প্রচেষ্টা চলছে রেড রোডে। ‘পরিবর্তন’-এর পরে সরকারের হাত ধরে গানমেলা, চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শুরু করে রবীন্দ্রজয়ন্তীর অনুষ্ঠান আরও বড় পরিসরে পৌঁছে ব্যাপ্তি পেয়েছে। একই ভাবনা থেকে এ বার স্বাধীনতা দিবসের সরকারি অনুষ্ঠান হবে রেড রোডে, মহাকরণের সামনে নয়। মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছাতেই হচ্ছে স্থান পরিবর্তন। |
পথে নকল মুখ্যমন্ত্রী। স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজের মহড়া চলছে রেড রোডে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
মুখ্যমন্ত্রী চান, অন্য বছরের মতো শুধু পতাকা উত্তোলনেই যেন সরকারের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপন অনুষ্ঠান শেষ না হয়। তাই বড় পরিসরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে প্রশস্ত রেড রোড বেছে নেওয়া হয়েছে। এ বারের সংযোজন কুচকাওয়াজ, প্যারেড এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনেকটা প্রজাতন্ত্র দিবসের ধাঁচে।
তবে সরকারি মহলে এই ভাবনার পিছনে কারণ হিসেবে একটি অন্য ব্যাখ্যাও ঘোরাফেরা করছে। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের মূল আয়োজক সেনাবাহিনী। সেখানে সেনাবাহিনীর ‘গার্ড অফ অনার’ নেন রাজ্যপাল। সরকারের বা মুখ্যমন্ত্রীর তেমন কোনও ‘সক্রিয়’ ভূমিকা নেই। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও মুখ্যমন্ত্রী সেখানে কার্যত দর্শক। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসের এই অনুষ্ঠানের পুরো দায়িত্বই রাজ্য সরকারের। এখানে সেনাবাহিনীর বদলে পুলিশবাহিনীর কাছ থেকে ‘গার্ড অফ অনার’ নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজের কথা প্রচারের তেমন সুযোগ নেই। ১৫ অগস্টের কুচকাওয়াজে পুলিশ, স্কুলপড়ুয়ার সঙ্গে থাকছে সুসজ্জিত ট্যাবলো। দিল্লির প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানের ধাঁচে। থাকবে সরকারের ১২টি দফতরের উন্নয়নমূলক কাজের খতিয়ান।
সরকার সূত্রে খবর, প্রাথমিক ভাবে ট্যাবলো নিয়ে বিভিন্ন দফতরের মধ্যে প্রতিযোগিতা করার পরিকল্পনাও ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। যদিও এ বছরই তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা হচ্ছে না। বাম আমলে স্বাধীনতা দিবসের উদ্যাপন মহাকরণের সামনে হলেও তা নিয়ে এত উদ্দীপনা থাকত না। বহু দিন পর্যন্ত নিজের হাতে পতাকা উত্তোলন করতেন না তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। পরে অবশ্য সিপিএমের অবস্থান বদলায়।
এ বারে অবশ্য চিত্রটা একেবারেই আলাদা। যার ব্যাখ্যা হিসেবে রাজ্যের এক মন্ত্রী বলছেন, “পুরো কর্মকাণ্ডটাই মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কপ্রসূত। তিনি চান, স্বাধীনতা দিবসের উদ্যাপন ধুমধাম করে হোক। এর মাধ্যমে যুবসমাজের মধ্যে দেশপ্রেমের চেতনা গড়ে উঠুক।” যুবসমাজকে স্বাধীনতা উদ্যাপনে কাছে টানতেই কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের আনা হচ্ছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, ফোর্ট উইলিয়ামের দক্ষিণ দরজা থেকে মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ছাউনি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা জুড়ে হবে ওই অনুষ্ঠান। সাড়ে দশটা নাগাদ জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে একে-একে কুচকাওয়াজ, প্যারেড এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
প্রস্তুতি যে ভাবে চলছে, তাতে খুশি আয়োজকেরা। দু’পাশে অতিথি, অভিভাবক এবং দর্শকদের বসার জায়গায় ছাউনির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবুও তাঁদের উদ্বেগে রেখেছে ভরা শ্রাবণের আকাশ। |