রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর জন্য আশপাশের ৫০টি গ্রাম দত্তক নিয়েছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় সেখানে চাষবাস ও কিছু হস্তশিল্পের কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে রবীন্দ্রনাথের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই গ্রামগুলিতে বিরাট প্রসার ঘটে হস্তশিল্পের। একটি সঙ্গীত শাখাও শুরু হয়। ওই সঙ্গীত শাখা দীর্ঘদিন রবীন্দ্রসঙ্গীত, নৃত্য ও লোকসঙ্গীতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে ওই শাখায় সঙ্গীত চর্চার আরও একটি নতুন মাধ্যম যুক্ত হয়েছে-- এসরাজ। সেই এসরাজের হাত ধরেই গ্রামের ছেলেমেয়েদের সঙ্গীতের জগতে প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছেন শুভায়ু সেন মজুমদার। শুভায়ুর আর একটি পরিচয় হল তিনি শৈলজারঞ্জন মজুমদারের ভাইপো। শৈলজারঞ্জন রবীন্দ্রনাথের অনেক গানের স্বরলিপি করেছিলেন। |
শুভায়ু বিশ্বভারতীর সঙ্গীত ভবনের গবেষক ছাত্র। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে গিয়ে শেখাচ্ছেন এস্রাজের মতো ধ্রুপদী বাদ্যযন্ত্র। আগ্রহ ভরে গ্রামের ছেলেরা তা শিখছেও। তবে এই কাজ যে যথেষ্ট কঠিন তা মানেন শুভায়ুও। আজকের ডিজিটাল যুগে গ্রামের ছেলেমেয়েদের এস্রাজের মতো বাদ্যযন্ত্রের প্রতি আগ্রহী করে তোলার কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তিনি। শুভায়ু জানালেন, অল্প কয়েকদিনেই এখনও পর্যন্ত ৫টি গ্রামের ৫ ছাত্রকে গিয়ে এসরাজ শেখাচ্ছেন। স্থানীয় বিনুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, বিনুরিয়ার বাপ্পাদিত্য মণ্ডল ও পাশের ইসলামপুর গ্রামের প্রশান্ত বাগ-রা এস্রাজ নিয়ে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় প্রশিক্ষক শুভায়ুর সামনে রেওয়াজ করছেন। এস্রাজ শেখার সুযোগ পেয়ে আপ্লুত বাপ্পারা বললেন, “এরকম যন্ত্র তো আগে দেখিইনি। শেখার পর থেকে প্রায় নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সময় পেলেই বাড়িতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রেওয়াজ করি। তাতে মন শুদ্ধ হয়।”
শুভায়ুর বাবা বিশ্বভারতীর পাঠভবনের অঙ্কের শিক্ষক হলেও বাড়িতে প্রায় বসে পড়তেন এস্রাজ নিয়ে। শুভায়ু নাড়া বেঁধেছিলেন সঙ্গীত ভবনের শিক্ষক বুদ্ধদেব দাসের কাছে। এখন তিনি প্রতিষ্ঠিক শিল্পী। বিশ্বভারতীর পল্লি সম্প্রসারণের প্রধান অমিত হাজরার বক্তব্য, “শুভায়ু কিন্তু নিজের স্বার্থ নিয়ে চিন্তা করেননি। তাহলে এখানে পড়ে থাকতেন না।” অন্য দিকে, শুভায়ুর কথায়, “রবীন্দ্রনাথের অন্যতম প্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল এস্রাজ। শেখা খুবই কঠিন। তবুও কয়েক বছরে ১০ জন ছাত্রছাত্রীকেও যদি নিখুঁত ভাবে এস্রাজ শেখাতে পারি, তা হলেই জীবন ধন্য হবে।” |