অনুমতিহীন প্যাথোলজি কেন্দ্র বন্ধের প্রস্তাব |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
অনুমতি ছাড়াই জলপাইগুড়ি শহরে বেশ কিছু প্যাথোলজি কেন্দ্র চলছে বলে জানতে পেরেছে স্বাস্থ্য দফতর। এই অনুমতিহীন কেন্দ্রগুলি বন্ধ করে দেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনকে প্রস্তাব দিতে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। অনুমতিহীন কেন্দ্রের সংখ্যা কত সে সম্পর্কে স্পষ্ট করে সরকারি ভাবে কিছু না জানানো হলেও স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী জলপাইগুড়ি জেলায় ১৪৮টি কেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হলেও বছর খানেকের বেশি সময় ধরে ৫০টি কেন্দ্র অনুমতি নবীকরণ করেনি। এদের মধ্যে বেশ কিছু কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলেও বাকিগুলি অনুমতি ছাড়াই চলছে বলে অভিযোগ। বেশ কিছু নতুন কেন্দ্র চালু হলেও অনুমতির জন্য আবেদন করেনি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
শহরের সব প্যাথোলজি কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য বুধবার একটি কমিটি গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বৈধ অনুমতিপত্র রয়েছে কি না, যে যন্ত্র বা কিটের মাধ্যমে রক্ত, মলমূত্র পরীক্ষা হয় সেগুলি অনুমোদিত কি না এবং যারা পরীক্ষা করেন তাঁদের নির্দিষ্ট যোগ্যতা রয়েছে কি না সে সব বিষয় খতিয়ে দেখবে কমিটি। বিধানসভার স্বাস্থ্য বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা এসজেডিএ চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য গত মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে কমিটি তৈরি করে পরিদর্শনের নির্দেশ দেন। সেই মতো বুধবার কমিটি গঠন হয়। জেলার এক জন উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কমিটির শীর্ষে আছেন। মঙ্গলবার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান রুদ্রনাথবাবু জলপাইগুড়িতে এলে একটি মহল থেকে শহরের কয়েকটি প্যাথোলজি কেন্দ্র সম্পর্কিত কিছু নথি তুলে দেওয়া হয়। নথি দেখেই রুদ্রনাথবাবু জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “কিছু অভিযোগ পেয়েছি। তার ভিত্তিতেই নির্দেশ দিয়েছি। মানুষ যে রিপোর্টের ওপর ভরসা করেন, চিকিৎকরা যে রিপোর্ট দেখে পরামর্শ দেন, সেগুলি যদি ভুল হয় তবে তো সমূহ বিপদ। প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে।”
প্যাথোলজি কেন্দ্র নিয়ে যে অভিযোগগুলি উঠেছে. তার মধ্যে অন্যতম হল, ভুল রিপোর্ট তৈরি করা। রায়কত পাড়ার বাসিন্দা অতসী মিত্রের রক্ত পরীক্ষা করে ১৪ জুলাই জলপাইগুড়ির রাজবাড়ি পাড়ার একটি কেন্দ্র থেকে দেওয়া রিপোর্টে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ছিল ৬.৭। ১৮ জুলাই হাসপাতাল পাড়ার একটি কেন্দ্র জানায় হিমোগ্লোবিন ৯.৭। ১৯ জুলাই হাসপাতাল পাড়ারই অন্য এক কেন্দ্রের রিপোর্টে দেখা যায় হিমোগ্লোবিন ৭.৫। চার দিনে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণে এত হেরফের হওয়া সম্ভব নয় বলেই চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। অতসীদেবীর স্বামী সুরজিতবাবু বলেন, “আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। প্রথম দিনের রিপোর্ট হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকায় চিকিৎসক রক্ত দিতে বলেছিলেন। তা করলে তো গর্ভস্থ শিশু নষ্ট হয়ে যেতে পারত।”
অভিযোগ, বিভিন্ন প্যাথোলজি কেন্দ্রে রক্ত, মল, মুত্রের নমুনা পরীক্ষার সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ নির্দেশিত মাপকাঠি মেনে চলা হয় না। শুধু তাই নয়, প্রথাগত যোগ্যতা না থাকা স্বতেও রিপোর্ট তৈরির কাজে কর্মীদের ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক স্বপন সরকার বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি বেশ কিছু কেন্দ্রের অনুমতি নেই। সেগুলি বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসনকে জানাবো। অন্যান্য কেন্দ্র পরিদর্শনের জন্য একটি কমিটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।” শহরের রাজবাড়ি পাড়ার একটি কেন্দ্রের ম্যানেজার সম্রাট বসু বলেন, “অন্য কেন্দ্রের কথা বলতে পারব না। তবে আমরা যে পরিকাঠামোতে রিপোর্ট তৈরি করি তা সন্তোষজনক এবং অনুমোদিত।” |