আমেরিকার তিন অলিম্পিয়ান
তৈরির পিছনে ভারত ও বাংলা

বিশ্বায়নের যুগেও এই ঘটনা শুনলে মনে হবে অবিশ্বাস্য। চোখ কচলে, দু’বার পড়েও বিশ্বাস হবে না।
ভারতীয় অলিম্পিক দলে যখন ২৮ জন বিদেশি কোচের পিছনে ২০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে, তখন এই অলিম্পিকেই আমেরিকার তিন অলিম্পিয়ানকে তৈরির পিছনে রয়েছেন এক দল ভারতীয় ও তাঁদের ক্লাব। এবং ওই ক্লাবের কোচিং দলের অন্যতম সদস্য বাংলার এক পরিচিত নাম। নারকেলডাঙার এক ছোট ক্লাবে যাঁর হাত থেকে বেরিয়েছে অনেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন।
ক্যালিফোর্নিয়ার মিলপিটাস শহরই এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাক্ষী। অলিম্পিকের ইতিহাসে সফলতম দেশের টেবল টেনিস দলের চার সদস্যের তিন জন ওই ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টারের ফসল। সেখানে প্র্যাক্টিস করেই সান হোসের এরিয়েল এসিং, পালো আল্টোর লি জ্যাং, হিউস্টনের টিমোথি ওয়াং সুযোগ পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক দলে। প্রথম দু’জনের বয়স আবার মাত্র ১৫-১৬। আরও তাৎপর্যপূর্ণ, চার বছর আগে এখানেই ট্রেনিং নিয়েছিলেন ভারতের টিটি অলিম্পিয়ান সৌম্যজিৎ ঘোষ।
মিলপিটাস ইন্ডিয়ান সেন্টারে টেবল টেনিস কোচিংয়ের প্রধান পুরুষ অনাবাসী ভারতীয় রাজুল শেঠ। বছর বিয়াল্লিশের রাজুল ভারতেও এক কালে টিটি খেলেছেন। টিটি সার্কিটে নামকরা খেলোয়াড় ছিলেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রে, সাত বছর ধরে চালাচ্ছেন খেলোয়াড় তৈরির কাজ। তাঁর উদ্যোগে ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টার (আইসিসি) মার্কিন মুলুকের বৃহত্তম টিটি কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে সাত বছরেই। বিভিন্ন দেশ থেকে কোচ এনে এখানে প্রায় সারা বছর কোচিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন রাজুল। বিভিন্ন স্তরের খেলোয়াড়দের জন্য থাকছে বিভিন্ন স্তরের কোচিংয়ের ব্যবস্থা।

ওবামার স্বীকৃতি। মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে ভারতীয় সংস্থা আইসিসি-র জার্সি।
বাংলার সবচেয়ে পরিচিত কোচ জয়ন্ত পুশিলালও এখানে কোচিং দিচ্ছেন এখন। সঙ্গে আছেন ভারতের প্রাক্তন তারকা অনল কাশ্যপ। মিলপিটাস থেকে জয়ন্ত ক’দিন আগে বলছিলেন, “এতগুলো অলিম্পিয়ান এত দ্রুত তৈরি হয়েছে, ভাবা যায় না।” জয়ন্ত গতবার এখানে কোচিং দিতে এসেছিলেন স্ত্রীকে নিয়ে। এ বার তাঁর সঙ্গে রয়েছেন নারকেলডাঙারই এক ছাত্র। আছেন আরও কয়েক জন ভারতীয় কোচ। যাঁদের প্রতিবছর আনা হয়।
রাজুলের আই সি সি-র সুনাম এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, বারাক ওবামা নিজে সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের ডেকে উৎসাহ দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাগজের বিশ্লেষণ, মিলপিটাসের আই সি সি-ই হল আমেরিকান টিটি-র মক্কা। মিলপিটাসের কাছাকাছি অঞ্চলে প্রচুর চিনা-র বাস। তাঁরাও এখানে আসছেন টিটি শিখতে। আসছেন লাগোয়া সিলিকন ভ্যালির বিভিন্ন শহরের ভারতীয়দের বাচ্চারাও। যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক দলের টিমোথির বয়স কুড়ি। থাকেন মিলপিটাস থেকে বহু দূরে, হিউস্টনে। কিন্তু আইসিসিতে ট্রেনিং নেওয়ার জন্যই চলে এসেছেন মিলপিটাসে। ইতালির বিশ্বখ্যাত কোচ মাসিমো কন্সতানন্তিনি সহ অনেক কোচের কাছে ট্রেনিং নিতে। আই সি সির চিফ কোচ কনস্তানতিনি নিজে ওখানে বলেছেন, “একটা ক্লাব থেকে তিন জন অলিম্পিকে খেলছে, এমন ঘটনা চিনেও হয় না।”
রাজুল যুক্তরাষ্ট্রে পড়তে যান মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং। এখন আই সি সি-র স্পোর্টিং ডিরেক্টর। বিশাল হলঘরে তিনিও নেমে পড়েন বাচ্চাদের ট্রেনিং দিতে। ২০০৫ সালে ১০টি বাচ্চা ও ৫ টি টেবল টেনিস বোর্ড নিয়ে শুরু করেছিলেন সেন্টার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সেরা টিটি কোচের সম্মান পেয়েছিলেন। ক্রমে বেড়েছে তাঁর শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এখন তো একেবারে আলোচনার কেন্দ্রে।
আপাতত রাজুলের লক্ষ্য, পরের রিও অলিম্পিকে আইসিসি থেকেই পদকজয়ী তৈরি করা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.