নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
একদিকে জেসিপি করে বয়ে আনা বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে পুরনো বাঁধের উপরে। অন্য দিকে, ট্রাকে করে বয়ে আনা বালি পাথর ফেলা হচ্ছে বাঁধের উপরে। দূরে শ্রমিকেরা দ্রুত হাতে বালির বস্তা তৈরি করছেন। মূল নদীতে জেসিপি দিয়ে ক্রমাগত নদীখাত থেকে মাটি তুলে স্রোত ঘোরানোর কাজ চলছে। গোটা এলাকায় কয়েকটি হ্যালোজেন আলো এবং জেনারেটর সাজিয়ে রাখা দেখে বোঝা যাচ্ছে কাজ চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। মহানন্দার ভাঙা বাঁধ আগের চেয়ে পোক্ত করে তুলতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে সেচ দফতর। গত ১৫ জুলাই ভোরে শিলিগুড়ির অদূরে চম্পাসারির মিলনমোড় এলাকায় প্রায় ৩০০ মিটার এলাকা জুড়ে মহানন্দার বাঁধ ভাঙলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সেচ দফতর কোনও রকমে ভাঙা অংশের মেরামত করার পরেও কয়েকদিন পরে ১৯ জুলাই ফের মেরামত করা অংশ জলের তোড়ে উড়ে যায়। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে প্রশাসনের নির্দেশে বাঁধ মেরামতির কাজে নামেন সামরিক বাহিনীর জওয়ানরা। শুক্রবারের মধ্যে ভাঙা অংশ দিয়ে জল ঢোকা বন্ধ হলে সেচ দফতর বাঁধ মেরামতির কাজে নামে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মেরামতির কাজে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা। তৈরি করা হচ্ছে ৪ মিটার উঁচু বাঁধ। দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সমর সরকার বলেন, “নদীর স্রোত ঘোরানোর কাজ যেভাবে হয়েছে তাতে চলতি বর্ষায় সমস্যা হবে না বলে আশা করছি।” মহানন্দার ওই বাঁধ ভাঙার জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। গুলমা বস্তি যাওয়ার রাস্তা জলের তোড়ে উড়ে যায়। চম্পাসারি মেন রোডের দুটি কালভার্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিকল হয় ট্রান্সফরমার। দূষিত হয়ে পড়ে এলাকার পানীয় জলের ব্যবস্থা। মাটিগাড়া ব্লক প্রশাসনের হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির প্রাথমিক পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় এক কোটি টাকা। এ ছাড়া, গ্রাম পঞ্চায়েত এবং কৃষি দফতরের পক্ষ থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। মাটিগাড়ার বিডিও বীরবিক্রম রাই বলেন, “প্রাথমিক ভাবে এক কোটি টাকার একটি হিসাবে পাঠানো হলেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। এই ব্যাপারে কৃষি-সহ সংশ্লিষ্ট সমস্ত দফতরকে সমীক্ষা করে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।” সোমবার ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, জনজীবন স্বাভাবিক করতে তৎপর হয়েছে প্রশাসন। বিদ্যুতের খুঁটিতে তার টাঙানো হচ্ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে কয়েকশো কুয়ো ও নলকূপ দূষণমুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, “এলাকায় ত্রাণের সমস্যা ছিল না। তবে জনজীবন স্বাভাবিক হচ্ছে। আর কতদিন ত্রাণ শিবির চলবে তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে।” |