নিজস্ব সংবাদদাতা • জলপাইগুড়ি |
চলতি মাসে দু’দফায় তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতিতে জলপাইগুড়ি জেলায় ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ১০০ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের। প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সব সড়ক, নদী বাঁধের খরচ ধরলে ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে। জেলা প্রশাসনের হিসেবে, গত ১৪ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে দু’দফায় ডুয়ার্স সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতিতে সেতু, সড়ক, নদীবাঁধের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তেমনই কৃষিপণ্য এবং চা বাগানেরও ক্ষতি হয়েছে। বেশ কিছু ব্লকে নদীর জল ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে বাড়িঘরও, প্রাথমিক স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও। জেলাশাসক স্মারকী মহাপাত্র বলেন, “ক্ষতিপূরণের বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। যে সমস্ত এলাকায় বাড়িঘর ভেঙেছে সেগুলি প্রশাসনই মেরামত করে দেবে। শস্যহানির ক্ষেত্রে আগামী মরসুমে মিনিকিট সরবারহ করা হবে। তবে এখনও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এসে পৌঁছয়নি।” |
জেলা প্রশাসনের রিপোর্টে প্রায় ১৯ কোটি টাকার শস্য ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে। কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত আমন ধান এবং ভুট্টার ক্ষতি হয়েছে। জেলার প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষি জমিতে জল ঢুকে ক্ষতি হয়েছে। বন্যার জলে আমন ধানের বীজতলাও ভেসে গিয়েছে মালবাজার ব্লকের কিছু এলাকায়। এলাকায় পাটেরও ক্ষতি হয়েছে। জেলা শস্য রক্ষা আধিকারিক তপন সরকার বলেন, “মূলত মালবাজার, সদর, ময়নাগুড়ি এবং রাজগঞ্জেই কৃষিতে বেশি পরিমাণে ক্ষতি হয়েছে। ধান ও পাটের জমি জলের তলায় থাকায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে।” মালবাজার, নাগরাকাটা, রাজগঞ্জ, মালবাজার ব্লক মিলিয়ে বন্যায় অন্তত ৮০০০ বাড়িতে ক্ষতি হওয়ার রিপোর্ট এসেছে প্রশাসনের কাছে। নদীর জল উপচে ক্ষতি হয়েছে সড়কেরও। জেলা জুড়ে অন্তত ২৫০ কিলোমিটার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে ভারত-ভুটান যোগাযোগের সার্ক সড়কও রয়েছে। বন্যার ফলে সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় দিন ভারত-ভুটান সরাসরি যোগাযোগ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। কোথাও সড়ক একপাশে বসে গিয়েছে। কোথাও আবার ফাটল ধরেছে। কালচিনিতে বাসরা নদী প্লাবিত হয়ে সড়ক হ্যামিলটন ও হাসিমারা এলাকার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, জলপাইগুড়ি এবং মালবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকার নদী বাঁধের প্রায় ১২৭ টি জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। তিস্তা, জলঢাকা, চেল, তোর্সা, কালজানি, সঙ্কোশ, ডায়না নদীর বাঁধেই ছোট বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের তৈরি করা রিপোর্টে নদীবাঁধ, নদীর পাড় এলাকার ক্ষতির পরিমাণই সর্বোচ্চ. সড়ক, সেতু, নদী বাঁধ, নদীর পাড়, কালর্ভাট মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৪০০ কোটি। জেলার বিপর্যয় মোকাবিলা আধিকারিক হীরক বর্মন বলেন, “বিভিন্ন দফতর থেকে পাঠানো রিপোর্ট একসঙ্গে মিলিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।” |