কলকাতা পুলিশে চাকরির আবেদন করা সত্ত্বেও সময়মতো ‘কল লেটার’ হাতে আসেনি। এ ব্যাপারে জানতে সোমবার সাতসকালে বীরভূমের নানুর থেকে রিপন স্ট্রিটে এসেছিলেন খোকন
শেঠ। কিন্তু বুঝতে পারেননি, ‘কল লেটার’-এর বদলে গায়ে পুলিশের লাঠির দাগ নিয়েই বাড়ির পথ ধরতে হবে তাঁকে।
শুধু খোকন নন, কেষ্টপুরের স্বপন সাধুখাঁ কিংবা বর্ধমানের বিকাশ দাসের অভিজ্ঞতাও একই রকম। কর্মপ্রার্থীদের অভিযোগ, লাঠির ঘায়ে বিউটি মালাকার নামে এক চাকরিপ্রার্থী আহত হয়েছেন। পুলিশকর্তারা অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের উপরে লাঠি চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সাহায্যের বদলে পুলিশের একাংশের এই ব্যবহারে ক্ষুব্ধ হয়ে এ দিন এক দল চাকরিপ্রার্থী মহাকরণে অভিযোগ জানাতে হাজির হন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের মহাকরণের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি।
চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ, সময়মতো আবেদনপত্র পাঠালেও তাঁরা ‘কল লেটার’ পাননি। সম্প্রতি তাঁরা শোনেন, তাঁদের মতোই চিঠি না-পাওয়া এক দল পরীক্ষার্থী কলকাতায় বোর্ডের অফিসে গিয়ে ‘ডুপ্লিকেট কল লেটার’ নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। এ কথা শুনেই তাঁরা এ দিন কলকাতায় এসেছিলেন। অভিযোগ, সাহায্য করার বদলে অফিসের বাইরে প্রহরারত পুলিশকর্মীরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
কলকাতা পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগে বিশৃঙ্খলা এই প্রথম নয়। গত ৬ জুন রেসকোর্সে কলকাতা পুলিশে কনস্টেবল নিয়োগের পরীক্ষা দিতে এসে তাপপ্রবাহের দাপটে অসুস্থ হয়ে পড়েন অভিষেক পাল এবং সুরজ ভুজল নামে দুই প্রার্থী। সে-রাতেই এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় উত্তর ২৪ পরগনার নোয়াপাড়ার বাসিন্দা অভিষেকের। কয়েক দিন পরে মারা যান কালিম্পঙের বাসিন্দা সুরজ। তার পরেই নিয়োগের পরীক্ষা পিছিয়ে দেন পুলিশকর্তারা। সেই সময়েও বিজ্ঞপ্তি ঠিকমতো না-জানানোর ফলে দূরদূরান্ত থেকে পরীক্ষা দিতে এসে নাকাল হয়েছিলেন পরীক্ষার্থীরা।
এ বার কল লেটার ঠিকমতো না-পাঠানোর ফলেও একই ভাবে নাকাল হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন পরীক্ষার্থীরা। কিন্তু কল লেটার পৌঁছল না কেন?
কলকাতা পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের সদস্য-সচিব চঞ্চল দত্ত বলছেন, “বোর্ডের অফিস থেকে ঠিক সময়েই ডাক বিভাগের মাধ্যমে চিঠি ছাড়া হয়েছিল। কিন্তু তা পৌঁছল না কেন, সেটা বলা মুশকিল।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ওয়েবসাইটে ‘ডুপ্লিকেট কল লেটার’ ডাউনলোড করার ব্যবস্থা রাখা হয়নি কেন?
এই বিষয়ে খামতির কথা স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশকর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, বোর্ড সবে কাজ শুরু করেছে। তাই কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু ত্রুটিও নজরে পড়ছে। চঞ্চলবাবু বলেন, “ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কল লেটার ডাউনলোড করার বিষয়টিও ভেবে দেখা হচ্ছে।”
এ দিনের গণ্ডগোলের পরে পুলিশ চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র লিখিয়ে নেয়। বোর্ডের সদস্য-সচিব জানান, আবেদনকারীদের একটি হেল্প ডেস্কের ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে। কবে ‘কল লেটার’ মিলবে, ওই নম্বরে ফোন করলেই তা জানা যাবে। |