বাসের সংখ্যা কমছে। ভোগান্তি বাড়ছে যাত্রীদের। শহরের সরকারি-বেসরকারি প্রতিটি রুটেই এই ছবি। বাসের দেখা পেতে বিভিন্ন স্টপে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
বাসগুলির হালও খারাপ। কোনওটার জানলার কাচ ভাঙা, কোনওটায় যাত্রীদের ধরার হাতল উধাও। কারণ, মেরামতি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পর্যাপ্ত টাকা নেই। সরকারি নিগমের কর্তারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে রাজি না হলেও স্বীকার করে নিয়েছেন, অর্থাভাবেই মেরামতি করা যাচ্ছে না। পরিবহণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরে মদন মিত্র বাসের সংখ্যা এবং পরিবহণ নিগমগুলির আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সে সব তাঁর মুখের কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে।
বর্তমানে পরিস্থিতিটা ঠিক কী রকম? কলকাতা রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (সিএসটিসি) নথি অনুযায়ী, ২০১০-’১১ আর্থিক বছরে তাদের ৭৯২টি বাসের মধ্যে দৈনিক গড়ে ৫০০টি বাস চলত। ২০১১-’১২ সালে তা কমে হয় ৪২৪টি। সেই সঙ্গে কমেছে টিকিট বিক্রি-বাবদ নিগমের আয়ও। ২০১০-’১১ সালে অঙ্কটা ছিল ৬৫ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা। ২০১১-’১২তে তা কমে হয় ৬১ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার মতো। বর্তমান অবস্থা ধরলে চলতি আর্থিক বছরে আয় হবে ৬০ কোটি টাকারও কম।
প্রায় একই হাল কলকাতা ট্রাম সংস্থার (সিটিসি)। তাদের প্রায় ৩৯০টি বাসের মধ্যে চলছে ২৪০টি। ৩০০টি ট্রামের মধ্যে চলছে ১১৫টি-র মতো। সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন অবশ্য দাবি করেছেন, “প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বাড়তি পরিষেবার চেষ্টা করছি। নতুন কিছু বাস কেনার পরিকল্পনা হচ্ছে।”
২০১১ সালের জুন মাসে বৃহত্তর কলকাতায় চলত প্রায় ৮,৫০০টি বাস। এক বছরে তা কমে হয়েছে হাজার পাঁচেক। কমছে মিনিবাস। মালিক সংগঠনের সম্পাদক অবশেষ দাঁ-র হিসেবে, বছরখানেক আগে দৈনিক ২,৫০০-র মতো মিনিবাস চলত। এখন চলছে প্রায় ২,২০০। কমছে ট্যাক্সিও। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের হিসেবে বছরখানেক আগে শহরে প্রায় ৩৬ হাজার ট্যাক্সি চলত। এখন তা কমে হয়েছে ৩১ হাজার। সংগঠনের সভাপতি বিমল গুহ বলেন, “এর প্রধান কারণ অবশ্যই ভাড়া না-বাড়ানো। সেই সঙ্গে পুলিশি জুলুম, লাইসেন্স পুনর্নবীকরণের ঝামেলা প্রভৃতির জন্য আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে।”
সঙ্কটে বেসরকারি বাস-মালিকেরাও। দূষণ-নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আদালতের রায়ে ১৫ বছরের পুরনো বাস বসিয়ে দেওয়ার পরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহায়তায় জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে বিভিন্ন রুটে নতুন বাস নামানো হয়েছিল। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্সের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ রকম ৬৩৭টি বাসের মধ্যে ৩২০টি বসে গিয়েছে।”
পরিবহণ নিগমের কর্মীরা আর্থিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। মে মাসের বেতন হয়েছে জুনের একেবারে শেষে। জুনের বেতন কবে হবে, কেউ জানেন না। এ প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রের বক্তব্য, “নিগমগুলোর আর্থিক দায়িত্ব সরকারের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।” কিন্তু বিভিন্ন সময়ে যে সব পরিকল্পনার কথা তিনি ঘোষণা করেছিলেন, সেগুলি বাস্তবায়িত হচ্ছে না কেন? এর উত্তরে সোমবার মদনবাবু বলেন, “এই অবস্থার জন্য বামফ্রন্ট সরকার দায়ী। রাতারাতি পরিস্থিতি উন্নত করার কোনও জাদু আমি জানি না। তবে, সার্বিক ভাবে পরিবহণের অবস্থা ভাল হচ্ছে।” |