পঞ্চায়েত
আগাম ভোটের ভাবনায় সংশয় আইন নিয়েই
দু’দিন আগে ধর্মতলার সমাবেশ-মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা ছিল, পুজোর পরে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে। রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় সোমবার ইঙ্গিত দিলেন, আগামী বছরের গোড়ায় পঞ্চায়েত নির্বাচন হতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের প্রস্তাবিত নির্ঘণ্ট চূড়ান্ত করা হবে। তার পরে এই বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।”
কিন্তু শেষ পর্যন্ত পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আনলেও নব-নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কি বোর্ডের দখল নিতে পারবেন? এ বিষয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর কোনও স্পষ্ট বক্তব্য নেই। বর্তমান ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের কার্যকালের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছর জুলাই-অগস্ট মাসে। রাজ্যের ১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইন (কংগ্রেস জমানায় তৎকালীন মন্ত্রী সুব্রতবাবুর হাতেই যে আইনের পত্তন) অনুযায়ী, তার অনেক আগে নির্বাচন হলেও ওই মেয়াদ ফুরনোর আগে বোর্ডের দখল নিতে পারবেন না নতুন শাসকেরা। তবে উপায়? সুব্রতবাবু এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই আইনের বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছেন। এর জন্য প্রয়োজনে রাজ্য আইন সংশোধনেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
কিন্তু পঞ্চায়েত বিশেষজ্ঞদের অভিমত অন্য রকম। তাঁদের কথায়, রাজ্যের পঞ্চায়েত আইন সংশোধন করলেও বর্তমান বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নতুন নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ক্ষমতা দখল করতে পারবেন না। কারণ, সংবিধানের ৭৩ তম সংশোধনীতে বলা হয়েছে: কোনও রাজ্য তার পঞ্চায়েত আইনের এই সংক্রান্ত ধারা সংশোধন করলেও তা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনে কার্যকর করা যাবে না। সেই সংশোধনী কার্যকর হবে তার পরের নির্বাচন থেকে। অর্থাৎ, মেয়াদ শেষের আগে বোর্ডের দখল নেওয়ার জন্য আইন সংশোধন করা হলেও ২০১৩ সালের নির্বাচনে তা কর্যকর হবে না। তার পরের নির্বাচনে (২০১৮) তা কার্যকর হবে।
তবে রাজ্যের আইন মেনে গোটা ত্রিস্তর পঞ্চায়েতকেই ভেঙে দিতে পারে কোনও সরকার। বস্তুত, এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি সুব্রতবাবুও। ধারাবাহিক ভাবে কাজ না-করা, পঞ্চায়েতে ন্যস্ত ক্ষমতার অপব্যবহার করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি অভিযোগের ভিত্তিতে যে কোনও জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি অথবা গ্রাম পঞ্চায়েতকে ভেঙে দিতে পারে কোনও রাজ্য সরকার। সুব্রতবাবুর কথায়, “একটা-দু’টো নয়। আইনের বলে একসঙ্গে সবক’টি ভেঙে ফেলা যায়।” কিন্তু এ ক্ষেত্রেও বিশেষজ্ঞদের মতামত হল, যে কারণ দেখিয়ে ভাঙা হবে, তা সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া প্রায় ‘অসম্ভব’। জোর করে তা করতে গেলে অভিযুক্তরা আদালতে যাবে। ফলে, ‘তাৎক্ষণিক উদ্দেশ্য’ সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
প্রায় একই বক্তব্য বিরোধীদের। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএমের এক বর্ষীয়ান বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রীর কথায়, “পঞ্চায়েতের বিষয়টি সংবিধানে নির্দিষ্ট আছে। রাতারাতি তা বদলানো অসম্ভব। তবে রাজ্য সরকারের যা মতিগতি, তারা ৩৫৬ ধারার মতো কিছু প্রয়োগ করে পঞ্চায়েত ভেঙে দিতে পারে। আবার যারাই নির্বাচনে জিতে আসুক, তাদের মাথার উপরে আমলাদের বসানো হবে!”
পঞ্চায়েত নির্বাচন এগিয়ে আনার বিপক্ষে বিরোধী বামেরা সরব হলেও মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণামতো তাঁর দফতর নির্বাচনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন সুব্রতবাবু। বিরোধীদের কটাক্ষ করে তৃণমূলের প্রবীণ নেতা তথা মন্ত্রীর মন্তব্য, “জনমত পাশে নেই বলে ওরা সব আসনে প্রার্থী দিতে পারবে না। কংগ্রেস-সিপিএম হাত মেলালেও পারবে না! এখন তাই অন্য কথা বলছে।” সুব্রতবাবুর প্রশ্ন, “সংরক্ষিত ৫০% আসনে ওরা প্রার্থী দিতে পারবে?” তবু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই তাঁরা জিততে চান বলে জানান সুব্রতবাবু। এবং এ জন্য শরিক কংগ্রেসকে প্রার্থী ‘সরবরাহ’ করতেও তাঁর আপত্তি নেই! সুব্রতবাবুর মন্তব্য, “আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জিততে চাই। কিন্তু ওদের তো আমাদের ‘বরাবর’ হতে হবে (নিজেই এর অর্থ ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, মানে ওদের ৫ লক্ষ লোকের জমায়েত করে দেখাতে হবে)। আর কংগ্রেস চাইলে আমরা প্রার্থী দিয়ে দেব! তারা জিতেও যাবে। কিন্তু জেতার পরে আবার আমাদের দিকেই চলে আসবে!”
সুব্রতবাবুর মন্তব্যকে শরিক কংগ্রেস অবশ্য ‘গুরুত্ব’ দিতে নারাজ। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, “লঘু পরিহাসের জবাব এবং তাকে গুরুত্ব দেওয়া নিষ্প্রয়োজন! আর কংগ্রেস নিজের প্রার্থী নিজেই জোগাড় করবে। কারও সাহায্য চাই না!” পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার আগেই প্রার্থী খোঁজার কাজ তাঁরা শুরু করে দিয়েছেন বলেও জানান প্রদীপবাবু।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.