জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তইবার সদস্য সন্দেহে পেট্রাপোল থেকে ধৃত চার জনের বিরুদ্ধে মামলায় দুই বিএসএফ-কর্মীর সাক্ষ্য নেওয়া হল সোমবার। এ দিন বনগাঁ আদালতের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (ফাস্ট ট্র্যাক-২) অপরাজিতা ঘোষের এজলাসে হাজির করা হয় অভিযুক্ত মহম্মদ ইউনুস, শেখ আবদুল্লা, মুজফ্ফর আহমেদ রাঠৌড় এবং শেখ নঈম ওরফে সামিরকে। আগের দিনও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন বিএসএফের ১৯৩ নম্বর ব্যাটালিয়নের তৎকালীন জি-ব্রাঞ্চের ইন্সপেক্টর মনোজ কুমার। তাঁকে এ দিন প্রশ্ন করেন অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি জানতে চান, ঘটনার দিন, ২০০৭ সালের ৩ এপ্রিল কোথায় কর্মরত ছিলেন মনোজ। সাক্ষী জানান, ওই দিন পেট্রাপোল সীমান্তের হরিদাসপুর ক্যাম্পে ছিলেন তিনি। অমিতাভবাবু জানতে চান, ওই চার জনকে ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’, নাকি ভারতের সীমানার মধ্যে থেকে ধরা হয়েছিল? মনোজ জানান, এ দেশের মাটিতেই ধরা হয়েছিল চার জনকে। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “তা কি আপনি নিজের চোখে দেখেছিলেন?” সাক্ষী বলেন, “না তা দেখিনি। কয়েক জন জওয়ান আগে ধরে ফেলেন ওই চার জনকে। পরে আমরা এগিয়ে যাই।” অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী এই উত্তর মানতে চাননি। তিনি সাক্ষীকে বলেন, “আপনি মিথ্যা বলছেন। নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে চার জনকে জোর করে ধরে নিয়ে এসেছিলেন আপনারা।” এই কথা অস্বীকার করেন মনোজ। তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, জওয়ানরা সন্দেহভাজন কাউকে পাকড়াও করলে পরে যদি বিচারে জানা যায়, তারা জঙ্গি তা হলে কি ওই জওয়ানেরা পুরস্কৃত হন? মনোজ বলেন, “হ্যা।ঁ পুরস্কার পাওয়া যেতে পারে।”
এ দিন আর এক সাক্ষীকেও প্রশ্ন করেন অমিতাভবাবু। অশোক চৌধুরী নামে ওই বিএসএফ জওয়ান সে সময়ে পেট্রাপোল সীমান্তের হরিদাসপুর ক্যাম্পে হেড কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। কাঠগড়ায় দাঁড়ানো অভিযুক্ত চার জনকে প্রথমে শনাক্ত করেন তিনি। সরকারি আইনজীবী সমীর দাসের প্রশ্নের জবাবে অশোকবাবু জানান, চার জনের কাছ থেকে একটি পার্স (ছোট ব্যাগ) পাওয়া গিয়েছিল। সেখান থেকেই পাওয়া যায় একটি সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি পরিচয়পত্র। এ ছাড়াও মেলে কিছু ভারতীয় টাকা, সিম কার্ড ছাড়া একটি মোবাইল। ‘সিজার লিস্ট’-এ সই করেন অশোক। সমীরবাবু সাক্ষীকে চারটি পার্স দেখান। অশোক জানান, এগুলি থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ওই সব জিনিসপত্র। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী অশোকবাবুকে প্রশ্ন করেন, “আপনি এখনই বলেছেন, একটি পার্স থেকে জিনিসপত্র পেয়েছিলেন। কিন্তু আপনিই আবার চারটি পার্স শনাক্ত করলেন কী ভাবে?” অশোক বলেন, “বিষয়টি ঠিক মনে নেই।” অমিতাভবাবুর প্রশ্ন, “চাকরি জীবনে কত জনকে ধরেছেন?” সাক্ষী জানান, শ’দুয়েক তো হবেই। নির্দিষ্ট সংখ্যা বলা মুশকিল।
অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, “ওই চার জনের কাছে লস্করের যে নথিপত্র পেয়েছিলেন, তা কি ছিঁড়ে ফেলেন? নাকি কিছু পাওয়া যায়নি।” সরকারি আইনজীবী সমীরবাবু উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করার ‘ভঙ্গি’ নিয়ে আপত্তি তোলেন। বাদানুবাদ শুরু হয়। সমীরবাবু জানান, একসঙ্গে দু’টি প্রশ্ন করা ঠিক হচ্ছে না। আদালতের নির্দেশে অশোককে ফের প্রশ্ন করেন অমিতাভবাবু। জানতে চান, লস্করের নথিপত্র কি ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া গিয়েছিল? এ বার অশোক বলেন, “হ্যাঁ। যা বাজেয়াপ্ত করা হয়, সব সিজার লিস্টে দেখানো হয়েছে।”
দুপুর পৌনে ২টো নাগাদ আদালত এ দিনের মতো মুলতুবি হয়ে যায়। আজ, মঙ্গলবার বেলা ১২টায় ফের সাক্ষ্যগ্রহণ হবে বলে জানিয়ে দেন বিচারক। |